গত কয়েক দিনে একটাই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে আমার কাছে। ইস্টবেঙ্গল কি আই লিগ জিততে পারবে? দেখুন, ব্যাপারটা আমাদের কারও হাতে নেই। এখন যা পরিস্থিতি, লিগের ভাগ্য আমাদের জয়ের চেয়েও বেশি দাঁড়িয়ে আছে চার্চিলের হারের উপর। তাই বলে ধরে নেবেন না আমি আশা ছেড়ে দিয়েছি। যত ক্ষণ না অঙ্কের হিসেব আমাদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে, তত ক্ষণ আমি আশা ছাড়ব না।
আর একটা কথা বলি। কলকাতার ফুটবল-পাগল জনতা তো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরও দারুণ ভক্ত। গত বার ইপিএলে কী হয়েছিল, নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে? পাঁচটা ম্যাচ বাকি থাকতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড লিগ টেবিলে বাকিদের ধরাছোঁয়ার প্রায় বাইরে চলে গিয়েছিল। প্রথম দিকে ম্যাঞ্চেস্টার সিটি এগিয়ে থাকলেও শেষ দিকে সবাই ধরে নিয়েছিল যে ম্যান ইউ-এর হাতেই আবার খেতাব উঠবে। সেখান থেকে কী হল? না, শেষ ম্যাচে গিয়ে খেতাব ছিনিয়ে নিল সিটি। বুঝতে পারছেন তো আমি কী বলতে চাইছি?
ম্যাঞ্চেস্টারের কথায় মনে পড়ল, কোন রেফারিকে বিদ্রুপ করে স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন এফএ-র কোপে পড়েছেন। আসলে ফুটবল খেলাটার সঙ্গে এত আবেগ জড়িয়ে থাকে যে কোচ-ফুটবলারদের মাথা ঠান্ডা রাখা খুব কঠিন। আমারও যখন বয়স কম ছিল, এমন কিছু কাজ করেছি যেগুলো আজকের দিনে কখনওই করতাম না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য মনের উপর মাথার নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। বুঝে গিয়েছি যে, মাথা গরম করলে নিজের বক্তব্যটা অন্যকে বোঝানো যায় না। বরং ঝামেলা বেড়ে যায়। আর ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে টিমের ছেলেরা আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে।
চার্চিল ব্রাদার্সের কাছে তিন গোল খাওয়ার পর আমরা সবাই মুষড়ে পড়েছিলাম। ওদের প্রথম গোলটা অফসাইড ছিল, কিন্তু তার পরে জঘন্য দুটো গোল হজম করতে হল। তবে আমি একটা ব্যাপার বিশ্বাস করি। নিজের কাজের জায়গাটা যেন সব সময় হাসিখুশি থাকে। তাই ছেলেদের বলেছি, চার্চিল ম্যাচ নিয়ে বেশি না ভেবে ওই ম্যাচ থেকে যেটুকু শেখার আছে, সেটা নিয়ে এগিয়ে চলতে। তার পরে তো দুটো ম্যাচ জিতলামও। একটা অবশ্য কলকাতা লিগের। লাল-হলুদ সমর্থকদের বলি, আমাদের ড্রেসিংরুমে এই মুহূর্তে হতাশা বা নেতিবাচক ভাবনার কোনও জায়গা নেই।
এখানকার ফুটবল মহলে একটা ধারণা ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে যে, কলকাতার ক্লাবগুলো জাতীয় পর্যায়ে ভাল খেলতে পারছে না। আমার এখানে প্রায় আড়াই বছর হয়ে গেল। এই সময়টা কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ধারাবাহিক ভাবে দেশের প্রথম দুটো দলের মধ্যে থেকেছে। আর একটা কথা না বলে পারছি না। এখানকার মিডিয়ার যে অনন্ত চাপ নিয়ে ফুটবলারদের মাঠে নামতে হয়, ভারতের আর কোথাও সেটা হয় না। এই চাপ সামলানো মুখের কথা নয়। দেখুন না, গোয়ায় ম্যাচ হারার পরে সাংবাদিক সম্মেলনে ওখানকার মিডিয়া আমাকে মাত্র তিনটে প্রশ্ন করেছিল। এখানে সেটা ভাবাই যায় না। এখানে হারা মানেই শুরু হয়ে গেল প্রশ্নের বন্যা। আচ্ছা, কোনও দল কি সব ম্যাচ জিততে পারে?
যাক গে, অন্য প্রসঙ্গে আসি। এ বছরের প্রথম এল ক্লাসিকো বুধবার রাতে। আপনারা যখন এই লেখাটা পড়বেন ততক্ষণে ম্যাচের ফলাফল জেনে যাবেন। তাই ওটা নিয়ে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করছি না। রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনা কোনও টিমকেই সাপোর্ট করছি না। আমি দেখতে চাই একটা ভাল ফুটবল ম্যাচ। আর মেসি বনাম রোনাল্ডো প্রসঙ্গে বলে রাখি, রোনাল্ডোকে নিজের গোলগুলোর জন্য অনেক বেশি খাটতে হয়। মেসির পায়ে সেখানে বল সাজিয়ে দেয় সৃষ্টিশীল বার্সা অ্যাটাক। |