অবশেষে আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন স্ত্রী-কে নির্যাতনে অভিযুক্ত রাজ্যের আবগারি দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তথা অর্থমন্ত্রীর প্রাক্তন ওএসডি (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি) ভাস্কর কুমার।
গত মাস চারেক ধরে পুলিশের খাতায় ‘পলাতক’ ছিলেন ওই সরকারি অফিসার। মঙ্গলবারেই ওই মামলার চার্জশিট আদালতে জমা করেছে পুলিশ। তাতে ভাস্করবাবুর পাশাপাশি তাঁর বাবা-মাকেও বধূ নির্যাতনে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, ভাস্করবাবু তাঁর স্ত্রী সোনিয়াকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তদন্তকারীদের কাছে সেই দাবি গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি। উল্টে সোনিয়াদেবীর উপরে স্বামী এবং শ্বশুর-শাশুড়ি অত্যাচার করতেন বলেই তথ্যপ্রমাণ মিলেছে। গোটা বিষয়টি চার্জশিটে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে।
ভাস্করবাবুর বাড়ি কোন্নগরের নবগ্রামে নৈটি রোডে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁর স্ত্রী সোনিয়া কুমার উত্তরপাড়া থানায় স্বামী, শ্বশুর শক্তিসাধন এবং শাশুড়ি স্মৃতিকণাদেবীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে তিনি জানান, বিয়ের পর থেকেই নানা অছিলায় তাঁর উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন ওই তিন জন। স্বামী তাঁকে সিগারেটের ছ্যাঁকা পর্যন্ত দেন। অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গত অগস্ট মাসে গঙ্গায় ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ারও চেষ্টা করেন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ওই তরুণী। স্থানীয় কিছু লোক তাঁকে উদ্ধার করেন। সেই থেকে ছেলে শরদিন্দুকে নিয়ে কোন্নগরেরই ক্রাইপার রোডে বাপের বাড়িতে থাকছিলেন সোনিয়া। অভিযোগ, পরে তাঁর কাছ থেকে ছেলেকে নিয়ে চলে যান ভাস্করবাবু। কিছু দিন আগে পুলিশের মধ্যস্থতায় ছেলেকে ফেরত পেয়েছে সোনিয়াদেবী।
সোনিয়াদেবীর উপরে অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গ্রেফতারি এড়াতে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন অভিযুক্তেরা। বাবা-মা আগাম জামিন পেলেও ভাস্করবাবুর জামিন নাকচ করে আদালত। তবে পদস্থ ওই সরকারি কর্তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। সোনিয়াদেবীও হাত গুটিয়ে বসে থাকেননি। ‘সুবিচার চেয়ে’ তিনি মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করেন। শেষ পর্যন্ত গত সোমবার শ্রীরামপুর মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ভাস্করবাবু। বিচারক ওই অফিসারকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। মঙ্গলবারেই চার্জশিট জমা পড়ায় ওই দিনই জামিন পেয়ে যান ভাস্করবাবু।
সোনিয়াদেবী বলেন, “আইনের উপর আমার আস্থা রয়েছে। তবে ভয় হচ্ছে স্বামী প্রভাব খাটিয়ে আবার কিছু একটা না করে বসেন।” |