উদ্দেশ্য, ‘পুর-উৎসব’ পালন। সে কারণে এলাকার কিছু ভুঁইফোড় অর্থলগ্নি সংস্থাকে চিঠি দিয়ে ‘সমন্বয় বৈঠকে’ ডেকে পাঠালেন উপ পুরপ্রধান। ওই সংস্থাগুলির কাছ থেকে মোটা টাকা ‘তোলা’ চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
ঘটনাটি তারকেশ্বর পুর এলাকার। গত বার পুর-উৎসবে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। সে বারও স্থানীয় ব্যবসায়ী, অর্থলগ্নি সংস্থা এমনকী সাধারণ মানুষের কাছেও টাকা চাওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উপ পুরপ্রধান ওই দলেরই উত্তম কুণ্ডুর প্যাডেই চিঠি লিখে ‘সমন্বয় বৈঠকে’ ডেকে পাঠানো হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। ওই ব্যবসায়ীদের কেউই অবশ্য পুলিশের দ্বারস্থ হননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনের কথায়, “কার ঘাড়ে ক’টা মাথা, যে এ নিয়ে থানা-পুলিশ করব!”
পুরসভার চেয়ারম্যান স্বপন সামন্ত বলেন, “ওই চিঠির ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। ফলে তা নিয়ে কী ভাবে মন্তব্য করব?” যদিও উত্তমবাবু বলেন, “তারকেশ্বরের মানুষের ইচ্ছা, আর্শীবাদ ছাড়া এত বড় উৎসব আমরা করতে পারতাম না। বিচ্ছিন্ন ভাবে কেউ কিছু বলতেই পারেন। তবে উৎসবের খরচ আমরা পুরসভার টাকাতেই করি। ব্যবসায়ীদের থেকে টাকা তোলার অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়।”
উৎসব হওয়ার কথা আগামী ২-১২ ফেব্রুয়ারি। সে সময়ে পরীক্ষার ভরা মরসুমে লাগামছাড়া ‘টাকা তুলে’ এগারো দিন ধরে তারকেশ্বরে পুর-উৎসবের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা।
একই সঙ্গে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ও পুরমন্ত্রীকেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের ওই অংশটি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, তারকেশ্বর পুরসভার বকেয়া ঋণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। তার উপর রাজ্যের আর্থিক পরিস্থিতি ভাল নয়। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা-মুম্বই থেকে নামি-দামি শিল্পীদের এনে পুর কর্তৃপক্ষ কেন এমন ব্যয়বহুল উৎসব করবেন?
মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো অভিযোগপত্রে সই করেছেন ৪৮ জন। তাঁরা কেউ সরাসরি সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি। তবে ঘটনাটি ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারীরা দাবি করেছেন, পুরসভার বহু কাউন্সিলরও ওই অনুষ্ঠান চান না। কিন্তু দলীয় বাধ্যবাধকতা থাকায় তাঁরা মুখ খুলতে পারছেন না। ফলে এই ঘটনায় দলেরই কোনও গোষ্ঠীর ‘ইন্ধন’ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা নেতারা।
অভিযোগকারীদের আরও বক্তব্য, উৎসব উপলক্ষে প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চস্বরে মাইক চলে। তাতে পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতি হয়। উৎসব হয় শহরের প্রাণকেন্দ্র, তারকেশ্বর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে। ওই মাঠটি প্রাতর্ভ্রমণকারীরা নিয়মিত ব্যবহার করেন। বাচ্চারা খেলাধূলো করে। উৎসবের জেরে অন্তত এক মাস মাঠটি তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন না। উত্তমবাবু অবশ্য বলেন, “আমরা মাইক বাজাই শুধুমাত্র উৎসবের জায়গাটুকুতেই। সারা তারকেশ্বরে মাইক বাজে না।” |