|
|
|
|
হ্যামিলটনের অভিধানের খোঁজ, ছাপা হচ্ছে অসমে |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
দু’শো বছরের পুরনো অসমিয়া অভিধানের পাণ্ডুলিপির হদিস মিলল বিলেতের সংগ্রহশালায়। কেবল একটি ভাষা নয়, তৎকালীন অসমে চালু ১০টি ভাষার অভিধান সেটি! পাণ্ডুলিপি তৈরি থাকলেও, বই হিসেবে তা প্রকাশিত হয়নি আগে। সেই অভিধানই এত বছর পরে প্রথম বার অসম থেকে ছাপা হতে চলেছে।
অষ্টাদশ শতকে, বহুমুখী প্রতিভাধর ইংরেজ পণ্ডিত ফ্রান্সিস বুকানন হ্যামিলটন এই অভিধান লেখেন। ১৭৯৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ভারতে পা দিয়েছিলেন তিনি। এই হ্যামিলটন সাহেবের হাত ধরেই কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার জন্ম। ছিলেন বটানিক্যাল গার্ডেনের সুপারিন্টেন্ডেন্ট। একাধারে শল্য চিকিৎসক, প্রাণীবিদ,
|
বুকানন হ্যামিলটন |
উদ্ভিদবিদ ও লেখক হ্যামিলটন তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলির শল্যচিকিৎসক ছিলেন। তখনই আলিপুরে গড়ে তোলেন পশুশালা। টিপু সুলতানের পরাজয়ের পরে কোম্পানির নির্দেশে তিনি দক্ষিণ ভারতে সমীক্ষা চালান। সেই অভিজ্ঞতা থেকে লিখে ফেলেন ‘আ জার্নি ফ্রম মাদ্রাজ থ্রু কান্ট্রিস অফ মাইশোর, কানাড়া অ্যান্ড মালাবার’। এরপর তিনি উত্তরে আসেন। নেপাল ভ্রমণ করে লেখেন ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ দ্য কিংডম অফ নেপাল’। বাংলার শাসনাধীনে থাকা এলাকাগুলির ভূপ্রকৃতি, জনবিন্যাস, ইতিহাস, মানবচরিত্র, ধর্ম, প্রকৃতি, উৎপাদিত ফসল ও উদ্ভিদ, ফুল-ফল, বন্য প্রাণী ও গবাদি পশু, জমি, সম্পদ, শিল্পকলা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য, পরিবহণ নিয়ে বিশদে সমীক্ষা করার ভার হ্যামিলটনকে দেওয়া হয়। তাঁর সেই সব তথ্যসম্ৃদ্ধ রিপোর্টের কয়েকটি ব্রিটিশ সংগ্রহশালায় রয়েছে। ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অফ দ্য ফিসেস ফাউন্ড ইন দ্য রিভার গ্যাঞ্জেস অ্যান্ড ইট্স ব্রাঞ্চেস’ বইতে গাঙ্গেয় অববাহিকায় মেলা ১০০ ধরণের মাছের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ-সহ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেন তিনি। বাংলা, অসমের বিভিন্ন উদ্ভিদ, প্রাণীর বর্ণনা সংগ্রহ করে, স্থানীয় শিল্পীদের দিয়ে জলরং-এ সেই সবের ছবি আঁকিয়ে রাখতেন হ্যামিলটন। সেই সচিত্র বিবরণ বর্তমানে ‘লিনিয়ান সোসাইটি অফ লন্ডন’-এর সংগ্রহশালায় রয়েছে।
হ্যামিলটন অসমে এসে এখানকার বিভিন্ন ভাষার মধ্যে দিশাহারা হয়ে পড়েন। কিন্তু হাল না ছেড়ে ভাষাগুলি স্থানীয় মানুষের সহায়তায় বুঝতে শুরু করেন। সেই কাজে সাহায্য করেছিলেন অপর এক অভিধান লেখক, ভাষাবিদ তথা শেষ আহোম রাজা পুরন্দর সিংহের প্রধানমন্ত্রী রুচিনাথ বুড়াগোঁহাই। এ ভাবেই ধীরে ধীরে লেখা হয় ১৫৫ পাতার ভাষা অভিধান। সেখানে অসমিয়া, বাংলা, মণিপুরি, গারো, রাভা, কোচ, কছারি, পানিকোচ ও মেচ ভাষার ১৮০০ টি করে শব্দ নিয়ে মোট ১৮ হাজার শব্দের ইংরাজি অর্থ রয়েছে। মূলত কোম্পানির কাজে সুবিধার জন্যই এই কাজটি তিনি করেন। তবে তা ছাপা হয়নি। ১৮১৫ সালে ভারত ত্যাগের আগে অবধি প্রায় ৩০টি ভাষা শিখেছিলেন হ্যামিলটন।
উত্তর-পূর্বের ভাষা নিয়ে গবেষণা চালাবার সময় জে বি কলেজের অধ্যাপক রক্তিমরঞ্জন শইকিয়া পাণ্ডুলিপিটির কথা জানতে পারেন। ব্রিটিশ সংগ্রহালয়ে অভিধানটির সন্ধান পাওয়ার পরে, ‘ফ্রেন্ডস অফ আসাম অ্যান্ড সেভেন সিস্টার্স’-এর সদস্য তথা লেবার পার্টির রিনি কাকতির চেষ্টায় মূল পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি আসে অসমে। প্রথম বই আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে হ্যামিলটন সাহেবের অভিধান। অভিধানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কমপ্রিহেনসিভ ভোক্যাবুলারিজ’।
|
|
|
|
|
|