|
|
|
|
অর্ডিন্যান্স নিয়ে ভাবনা |
বর্মার ক্ষোভ কমাতে নমনীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বহুপ্রতীক্ষিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রসঙ্গে অসন্তোষ জানিয়েছিলেন তিনি। সেই ক্ষোভ প্রশমন করতে দু’দিন আগেই তাঁকে ফোন করে ক্ষমা চান সনিয়া গাঁধী। এর পর আজ তাঁকে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জে এস বর্মাকে চিঠি লিখে ধন্যবাদ জানালেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। দিল্লিতে সাম্প্রতিক গণধর্ষণের পর মহিলাদের শ্লীলতাহানির বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের এই প্রাক্তন বিচারপতির নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গড়েছিল সরকার। কমিটির সুপারিশগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে বলে বিচারপতি বর্মাকে চিঠিতে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের নির্দেশ মেনে এক মাসের মধ্যে কাজ শেষ করে গত ২৩ জানুয়ারি রিপোর্ট পেশ করেছিল বর্মা কমিটি। কিন্তু তার পর এক সাক্ষাৎকারে প্রাক্তন বিচারপতি জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এই রিপোর্ট পেশ করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাঁর এ-ও অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে তাঁর সঙ্গে গত এক মাসে এক বারও কথা বলেননি। কমিটির কাজের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে কোনও অফিসারও নিয়োগ করা হয়নি। অথচ রিপোর্ট প্রস্তুত করার আগে সারা দেশের বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষের প্রায় ৮০ হাজার ই-মেল বার্তা পড়ে দেখতে হয়েছে কমিটিকে। বর্মার এ-ও অভিযোগ, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের প্রণয়ন সংক্রান্ত যে সুপারিশপত্রটি কংগ্রেসের তরফে পাঠানো হয়েছিল, সেটি তাঁকে দেওয়া হয় মধ্যরাতে, রীতিমতো ঘুম থেকে তুলে। স্বাভাবিক ভাবেই বিচারপতির এমন সব প্রকাশ্য অভিযোগের পর অস্বস্তিতে পড়ে যান কংগ্রেস নেতৃত্ব। ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে সার্বিক অসন্তোষের বাতাবরণে তাঁর এই মন্তব্য দলের রাজনৈতিক ক্ষতি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করেন তাঁরা। রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, ঠিক এই কারণেই কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের এমন নমনীয় অবস্থান। যার ফল সনিয়ার ফোন এবং প্রধানমন্ত্রীর চিঠি।
তবে মনমোহন দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়ার পর আজ নতুন দাবি জানিয়েছেন বর্মা। তাঁর বক্তব্য, সরকার যদি কঠোর আইন প্রণয়নে আন্তরিক হয়, তা হলে অর্ডিন্যান্স জারি করে বর্তমান ফৌজদারি আইন সংশোধন করা যেতে পারে। সরকারি তরফে অবশ্য এ ব্যাপারে এখনও কোনও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়নি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, অর্ডিন্যান্স জারির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্যাবিনেট নোটও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, অর্ডিন্যান্স জারি করার পক্ষে কংগ্রেস নেতাদের একাংশেরও সায় রয়েছে। কারণ তাঁদের মতে, বর্মা কমিটির সুপারিশগুলি বিবেচনা করে দেখতে আইন মন্ত্রকের দু’দিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। তার পর অর্ডিন্যান্স জারি করা হলে কেন্দ্রের প্রশাসনিক ক্ষিপ্রতার নজির স্থাপন করা যেতে পারে। কারণ, সংসদে ফৌজদারি আইন সংশোধন বিল পাশ করিয়ে তার পর তা প্রয়োগ করতে অন্তত আরও দেড় মাস সময় লাগবে।
কাজেই অর্ডিন্যান্স জারি করাই রাজনৈতিক বিচক্ষণতা হবে। কারণ, এটি এখন শুধু ঘরোয়া ব্যাপার নয়, ধর্ষণের ঘটনার পর সরকার কী পদক্ষেপ করে, তাতে নজর রয়েছে গোটা বিশ্বের।
আজ মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের বক্তব্যেও তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। দিল্লি গণধর্ষণের প্রসঙ্গ তুলে হিলারি বলেন, “গত মাসে দিল্লির ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতে বড় ধরনের পরিবর্তনের আশা করছি। যে ভাবে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন, তা দেখে আমি খুবই উৎসাহিত।” তাঁর বক্তব্য, মহিলাদের অবস্থা আগের তুলনায় ভাল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু তাঁদের সাংস্কৃতিক ও আইনি মর্যাদা
দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অনেক দ্বিচারিতা রয়েছে। এমনকী ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেও, যেখানে অনেক মহিলা রাজনৈতিক সাফল্য পেয়েছেন। আর তাই আগামী দিনে ভারতে আরও বড় পরিবর্তন হবে বলে তিনি আশাবাদী। |
|
|
|
|
|