কিল মারেন যে-গোসাঁই, সার্টিফিকেটও দিতে পারেন তিনি!
ভোটের আগে যে-পুলিশ অফিসারকে তাঁর কাজের জন্য প্রকাশ্যে ‘কানের গোড়া’য় মারার কথা বলেছিলেন, তাঁকেই এ বার ‘কাজের লোক’ আখ্যা দিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র। পুলিশি সূত্রের খবর, ভোটে জিতে মন্ত্রী হওয়ার পরে মদনবাবুই নিজের এলাকার থানায় ফিরিয়ে এনেছিলেন ওই পুলিশ অফিসারকে।
রবিবার বরাহনগরে এক সভায় সিপিএমের বিরুদ্ধে গালমন্দ করতে গিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী মন্তব্য করেন, “বেলঘরিয়ার আইসি-কে বলেছিলাম, কানের গোড়ায় এমন দেব যে, সকালে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।” মন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সে-দিন কিছু বলেননি বেলঘরিয়ার আইসি সুব্রত ভৌমিক। তবে ঘটনার দু’দিন পরে, বুধবার সুব্রতবাবু বলেন, “বিধানসভা ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে দক্ষিণেশ্বর এলাকার একটি আবাসনে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলাম। সেখানে মহিলাদের একাংশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। মদনবাবু তখন ওই এলাকার তৃণমূল প্রার্থী। ওখানেই থাকতেন। তিনি বেরিয়ে এসে একটু বকেছিলেন। কিন্তু এ ভাবে বলেননি। বরং তিনি ওই মহিলাদেরই বলেছিলেন, ‘পুলিশকে কাজ করতে দিন’।”
বিধানসভার ভোট হয়ে গিয়েছে ২০১১-র মে মাসে। ঘটনাটা ঘটেছিল তারও আগে। এত দিন পরে এক জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে মদনবাবু এমন মন্তব্য করলেন কেন?
ক্রীড়ামন্ত্রীর জবাব, “বক্তৃতা দিতে গেলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কিছু কথা বলা হয়। সেই সময় পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষপাত নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেছিলাম। সব কথা এ ভাবে ধরলে চলে না। ভোটের আগের রাতে যে-ভাবে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালানো হচ্ছিল, তাতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। মহিলারাই আইসি-কে বলছিলেন, ‘কান ধরে বার করে দেবো’। খবর পেলাম, আবাসনের বাইরে জিপে বসে পা দোলাচ্ছেন সিপিএম প্রার্থী। মা-বোনেরা তখন আইসি-কে যা বলেছিলেন, সেটাই বলতে চেয়েছিলাম বরাহনগরের সভায়।”
কিন্তু ওই আইসি-র নিরপেক্ষতা নিয়ে যদি প্রশ্নই ছিল, তবে সুব্রতবাবু নোয়াপাড়া থানায় বদলি হওয়ার এক মাসের মধ্যেই তাঁকে বেলঘরিয়ায় ফিরিয়ে আনার ঘটনা ঘটল কী ভাবে?
মন্ত্রীর জবাব, “ওঁর নিরপেক্ষতা না-থাকলে সাধারণ মানুষই প্রথম প্রতিক্রিয়া দিতেন। কাজের লোক বলেই ওই আইসি এক টানা এত দিন বেলঘরিয়ায় কাজ করছেন।”
প্রশাসনের কর্তারা এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাননি।
তবে তাঁদের সকলেরই অভিমত, মদনবাবুর সৌজন্যেই পুরনো থানায় ফিরে এসেছেন ওই আইসি। সুব্রতবাবুর এক সহকর্মী বলেন, “মন্ত্রীর প্রতি ওঁর যথেষ্ট আনুগত্য আছে। হয়তো সেই কারণেই মন্ত্রী স্নেহবশত পুরনো কথা ফের প্রকাশ্যে বলে ফেলেছেন।” |