গর্ব করার দিন কলকাতার। কারণ, এই প্রথম কোনও সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধন করলেন অমিতাভ ঘোষ। এই প্রাপ্তি নিয়েই দ্বিতীয় সাহিত্য উৎসবে ঢুকে পড়ল এ শহর। এবং প্রথম
দিনেই সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা নিয়ে আলোচনা করলেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং অমিতাভ ঘোষের হাত ধরে উদ্বোধন। কত দিন বাদে সাহিত্য উৎসবে দেখা গেল ‘শ্যাডোলাইন্স’-এর লেখককে? এক দশক আগে রাজস্থানের নিমরানা দুর্গে ‘ভারতীয় ইংরেজি সাহিত্য সমাবেশ’ উজ্জ্বল হয়েছিল তাঁর উপস্থিতিতে। তার পরে অনেক আলো-আঁধারি। সাহিত্য উৎসবকে ‘তামাশা’ বলেও অভিহিত করেছিলেন ‘ক্যালকাটা ক্রোমোজোম’-এর স্রষ্টা। বৃত্ত কি এত দিনে সম্পূর্ণ হল?
“বৃত্ত-ফিত্ত নয়,” হাসলেন লেখক, “গত বারই গোয়ার এক সাহিত্য উৎসবে ছিলাম। আর কলকাতা বইমেলার সঙ্গে কত স্মৃতি! ছোট থেকে ময়দানে গিয়েছি, নিজের শহরের ডাক ফেরানো যায় নাকি?” লিট মিটের উদ্বোধন দেখাল অন্য অমিতাভকে। যিনি শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যোমকেশকে ভোলেননি। উদ্বোধনের বোর্ডে লিখে দিলেন ‘কলম’। কলকাতা লিটারারি মিটের আদ্যাক্ষর। |
এই শহর স্মৃতির শহর। ‘অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় জীবন বদলে নিলাম আমি ও নিখিলেশ’...সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘জুয়া’ কবিতাটা পড়ছিলেন গায়ত্রী। রণজিৎ গুহের মতো তাঁরও মনে হয়েছে, স্বচ্ছতাই সুনীলের কবিতার প্রধান গুণ। আর সেই স্বচ্ছতাই যেন এই কবিতাগুলিকে অন্য মাত্রায় উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছে, ‘ফিলজফি আনডান’। কথায় কথায় বিনয় মজুমদারের ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’ কবিতার কথাও বললেন তিনি। জ্ঞানতত্ত্বের মহাকাব্য’ কিংবা ‘এপিস্টেমোলজিক্যাল এপিক’। কলকাতা স্মৃতির শহর, ‘ফিরে এসো চাকা’র শহর।
আরও কত কথাই যে বললেন তিনি! লাইব্রেরির ক্যাটালগে দেরিদা নামটি পছন্দ হয়েছিল, তখনও পড়া হয়ে ওঠেনি। তার পরই ‘অন গ্রামাটোলজি’ অনুবাদ। বাংলা ‘পরিভাষা’, ‘নিম্নবর্গ’, ‘বিশ্বায়ন’ ইত্যাদি শব্দগুলি যে তাঁর কাছে জবরজং ঠেকে, জানালেন সেই কথাও। কে ভুলতে পারে গায়ত্রীর সেই নিবন্ধ ‘ক্যান দ্য সাবঅল্টার্ন স্পিক’! জ্ঞান উৎপাদনও যে রাজনীতির হাতিয়ার, প্রথম বিশ্ব থেকে তৃতীয় বিশ্বে তা সরবরাহ করা হয়, নিবন্ধে দেখিয়েছিলেন তিনি। এখন অবশ্য তৃতীয় বিশ্ব শব্দটি তাঁর কাছে
ক্লান্তিকর ঠেকে। যেমন ক্লান্তিকর ঠেকে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সিভিল সোসাইটির আন্দোলন! প্রতিবাদ অবশ্যই দরকার, আইন অবশ্যই বদলানো দরকার, কিন্তু আইন বদলই তো সব নয়। যৌতুক না নেওয়ার আইন, বাল্যবিবাহবিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও সেই অনুযায়ী কাজ হয় না কেন? প্রশ্ন তুললেন, কাশ্মীর, অরুণাচল বা সীমান্ত এলাকায় যখন যুদ্ধ চলে, প্রতিনিয়ত ধর্ষণ ঘটে। শুধু দিল্লি বা কলকাতার মতো মেট্রোপলিসে ঘটলেই সেটি নিয়ে নাগরিক সমাজ আন্দোলনে নামে কেন? ‘রাষ্ট্র আর সিভিল সোসাইটি, দুইয়ের ব্যর্থতা থেকেই মানবাধিকার আন্দোলনের চিন্তা তৈরি হয়,’ বললেন গায়ত্রী। গায়ত্রী এবং অমিতাভ ঘোষই প্রথম দিনের উজ্জ্বল উদ্ধার। |