দৃষ্টান্ত ছিল হাতের কাছেই। তবু সে-পথে হাঁটল না প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-সংঘর্ষ এড়াতে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু) অনুকরণীয় নজির গড়তে পেরেছে। তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আচার্য তথা রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও।
কী করে গড়া হল সেই নজির?
মূলত ছাত্র সংসদের নির্বাচন এড়িয়ে। সেই সঙ্গেই ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গীত, নাটক, ফোটোগ্রাফি এবং নানা ধরনের গঠনমূলক কাজে উৎসাহিত করে। তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ তৈরি করে।
ইচ্ছা করলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ও ওই পথ অনুসরণ করতে পারত। ভোটের বালাই না-রেখে ছাত্র-সংঘর্ষ এড়ানো গিয়েছে বলে বেসু-কর্তৃপক্ষের প্রশংসাও করেছিলেন প্রেসিডেন্সির উপাচার্য। কিন্তু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত হাঁটল গতানুগতিকতার পথেই। আগামী ১ মার্চ সেখানে ছাত্র সংসদের নির্বাচন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরে এই প্রথম।
বেসু-র মতো ছাত্রভোট বর্জনের রাস্তা কেন নিল না প্রেসিডেন্সি?
প্রেসিডেন্সির রেজিস্ট্রার প্রবীর দাশগুপ্ত বলেন, “নির্বাচন মানেই তো গণ্ডগোল নয়। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব একটা সংস্থা থাকা দরকার। এবং সেটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গড়ে ওঠাই হওয়াই বাঞ্ছনীয়।”
কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচন মানে যে কার্যত হিংসা আর অসন্তোষের ঝাঁপি খুলে দেওয়া, এ রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে তার প্রমাণ মিলেছে বারবার। কারণ, ছাত্রদের হাত ধরে দলীয় রাজনীতিই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাপিয়ে বেড়ায়। নতুন সরকার বলেছিল, শিক্ষার আঙিনাকে রাজনীতিমুক্ত করা হবে। কিন্তু গত দেড় বছরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে হিংসাত্মক রাজনীতির দাপট বারংবার শিরোনামে উঠে এসেছে। এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের দিকে।
গত দু’টি বছর বাদ দিলে প্রেসিডেন্সির অঙ্গনও রাজনীতিমুক্ত ছিল না। প্রেসিডেন্সি কলেজে ছাত্র সংসদের নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় প্রতি বছরই সংঘর্ষ হয়েছে। রেষারেষি চরমে উঠেছে, অকারণ উত্তেজনায় ব্যাহত হয়েছে পঠনপাঠন। কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হওয়ার পরে বিগত দু’বছরে প্রেসিডেন্সিতে ছাত্র নির্বাচন হয়নি। আর ওই পর্বে সেখানে উত্তেজনা, হিংসা আর দলীয় রাজনীতির দাপট প্রায় ছিলই না। সেই স্বস্তির ধারা বজায় রাখার জন্য বেসু-র ছাত্রভোট বর্জনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা যেতে পারত। কিন্তু ছাত্র সংসদের নির্বাচনী ট্র্যাডিশন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই ভোট দিচ্ছে প্রেসিডেন্সি।
রেজিস্ট্রার প্রবীরবাবু জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্ট্যাটিউট’ বা নিয়মবিধি এখনও তৈরি হয়নি। তা হলে ছাত্রভোট হবে কী করে?
রেজিস্ট্রার জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল একটি কমিটি গড়ে দেয়। সেই কমিটি ওই নির্বাচনের বিধি তৈরি করেছে। ছাত্র সংসদের সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং সহকারী সাধারণ সম্পাদকের পদে দাঁড়াতে হলে ন্যূনতম ৬০ শতাংশ উপস্থিতি থাকা বাধ্যতামূলক। প্রথম দু’জন হবেন স্নাতকোত্তরের ছাত্র এবং পরের দু’জন স্নাতক স্তরের। এ ছাড়া ৩০ জন পড়ুয়া-পিছু এক জন ক্লাস-প্রতিনিধি থাকবেন।
মনোনয়নপত্র পেশ করা যাবে ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অভিজ্ঞতা বলছে, তখন থেকেই পোস্টার, স্লোগান, মিছিল ফিরে আসবে প্রেসিডেন্সিতে। প্রবীরবাবু অবশ্য বলছেন, যখন-তখন যাতে স্লোগান দেওয়া বা যত্রতত্র পোস্টার সাঁটা না-হয়, সেই জন্য ছাত্রছাত্রীদের কাছে আবেদন জানানো হবে। তবে পড়ুয়ারা কর্তৃপক্ষের সেই আবেদনে কতটা কান দেবেন, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রবীণ শিক্ষকদেরই একাংশ। তাঁদের আক্ষেপ, উৎকর্ষ কেন্দ্র হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রেসিডেন্সি অন্তত এই ব্যাপারে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিতে পারল না! |