দাউদাউ আগুনে ঘেরা বারান্দায় তালাবন্ধ গ্রিলের গেট ঝাঁকিয়ে আর্ত চিৎকার করছিলেন বছর বাইশের যুবক। ‘অগ্নিকুণ্ডের’ গেট ভেঙে গুরুতর অগ্নিদগ্ধ যুবককে উদ্ধার করা হলে তিনি জানান, ভিতরের ঘরে আটকে রয়েছেন তাঁর তিন সঙ্গী।
দমকল আগুন নেভানোর পরে সেখান থেকে উদ্ধার হয় তিনটি দেহ। মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজাবাগান থানা এলাকার হাজি রতন লেনের একটি পোশাক তৈরির কারখানার ঘটনা। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গ্রিলের গেটের চাবি পাওয়া গেলে হয়তো প্রাণে বাঁচতেন ওই তিন জনই।
পুলিশ ও দমকল সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাত দেড়টা নাগাদ আগুন লাগে চারতলা বাড়ির তিনতলার ওই কারখানায়। প্রচুর কাপড় ও তৈরি পোশাক মজুত ছিল বারান্দায়। ছিল কয়েকটি সেলাই মেশিনও। মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে সেখানে। বারান্দার লাগোয়া দু’টি ঘরের একটিতে থাকতেন কারখানার কারিগর, বিহারের বাসিন্দা মহম্মদ মুরাদ (৬২) এবং তাঁর ছেলে মহম্মদ রাউল (২২)। রাজাবাগানের বাসিন্দা শেখ সৈদুল ইসলাম (২৩) এবং নন্দীগ্রামের মুসাদও কাজ করতেন সেখানে। এ দিনের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে মহম্মদ মুরাদ, মহম্মদ রাউল এবং সৈদুল ইসলামের। অগ্নিদদ্ধ মুসাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পাশের ঘরে সপরিবার ছিলেন মহম্মদ ধোনি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরের সামনের বারান্দায় আগুন থাকায় এলাকার লোকেদের সাহায্যে স্নানঘরের জাফরি ভেঙে স্ত্রী এবং তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে বেরোন ধোনি। |
বুধবার দুপুরে আগুনে পুড়ে যাওয়া কারখানাটি ঘুরে দেখেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। দমকল জানায়, কী কারণে আগুন লাগল, তা দেখা খতিয়ে হচ্ছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘিঞ্জি গলির মধ্যে ওই বাড়িটির চারতলায় স্ত্রী ও চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন শিশুদের পোশাক তৈরির ওই কারখানার মালিক হবিবুল ইসলাম। হবিবুলের ছেলে সৈয়দ মোর্তাজা ইসলাম বলে, “রাত পৌনে দু’টো নাগাদ ‘বাঁচাও, বাঁচাও’ চিৎকার শুনলাম। পোড়া গন্ধ আসছিল। সিঁড়ি দিয়ে একটু নামতেই দেখি, বারান্দায় দাউদাউ আগুন। গেটের সামনে এক কোণে কুঁকড়ে বসে ছিল মুসাদ। ওর শরীরেও আগুন জ্বলছিল।” মোর্তাজা জানায়, সিঁড়ির এক দিকের জাফরির কিছুটা ভাঙা ছিল। ভিজে কম্বল জড়িয়ে এক-এক করে তারা সবাই সিঁড়ির লাগোয়া পাশের বাড়ির ছাদে উঠে পড়ে। ততক্ষণে তিনতলায় স্নানঘরের জাফরি ভেঙে মই বেয়ে পাশের বাড়ির ছাদে পৌঁছেছে ধোনির পরিবারের সকলে। ওই জাফরি দিয়ে দু’টি গ্যাস সিলিন্ডারও বার করে নেওয়া হয়।
আগুনের তোয়াক্কা না-করে ওই সময়ে হাতুড়ি, ভারী জিনিস দিয়ে পিটিয়ে কারখানার গ্রিলের গেট ভেঙে আটকে পড়া যুবককে উদ্ধার করেছেন পাড়ার যুবকেরা। দমকলকর্মীরাও ছিলেন তাঁদের সঙ্গে। এলাকারই এক যুবক শেখ আসলাম আলি বলেন, “প্রচণ্ড তাপে গেটের কাছে যাওয়া যাচ্ছিল না। এক কোণে বসে মুসাদ চিৎকার করছিল। মুসাদকে যখন বাইরে বার করি, ততক্ষণে ওঁর চামড়ার প্রায় পুরোটাই পুড়ে গিয়েছিল। যেখানে পা দিচ্ছিল, সেখানেই চামড়া খসে পড়ছিল। ও-ই বলল যে ভিতরে নাকি আরও তিন জন আছেন।” আসলামের বন্ধু শেখ মোমিন জানান, ঘুড়ি ধরার জন্য চারতলা বাড়িটির সিঁড়ির জাফরি বহুদিন আগে ভেঙে দিয়েছিল পাড়ার ছেলেরা। ওই ভাঙা জাফরি দিয়েই বাঁচানো হয় হবিবুলের পরিবারকে। |