এত দিন জেলা থেকে অভিযোগ আসছিল। এ বার টাকার বিনিময়ে সুপার স্পেশ্যালিটি এসএসকেএম হাসপাতালের নাম করেও ভুয়ো নিয়োগপত্র মিলল।
বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ উঠেছে। উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে চাকরি দেওয়ার নাম করে লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করার একটি চক্রের খবর তাঁদের কাছেও এসেছে। বিষয়টির সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ জড়িত বলেও তাঁরা খবর পেয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি এ নিয়ে দফতরের তরফে পৃথক তদন্ত শুরু হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এর আগে উত্তরবঙ্গে এমন বেশ কিছু নিয়োগপত্র পাওয়া গিয়েছিল, যাতে আমার জাল সই ছিল। এ বার এসএসকেএম হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটল। ব্যাপারটা আমাদের কাছে খুবই উদ্বেগের। আমরা বারবার পুলিশকে এ নিয়ে বলছি।”
সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ এসএসকেএম হাসপাতালের সুপারের দফতরে ঢুকেছিলেন এক দল যুবক। প্রত্যেকের হাতেই একটি করে চিঠি। কর্তব্যরত আধিকারিককে ওই চিঠি দেখিয়ে তাঁরা জানালেন, তাঁরা চাকরিতে যোগ দিতে এসেছেন। কীসের চাকরি? কে আসতে বলেছেন? এমন নানা প্রশ্নের উত্তরে তাঁরা হাতের চিঠিটি দেখিয়ে দিলেন। আধিকারিক দেখলেন, হাসপাতালের লেটারহেডেই লেখা চিঠিগুলি। কিন্তু সুপার তমালকান্তি ঘোষের নামের জায়গায় তমালকৃষ্ণ ঘোষ লেখা। আধিকারিককে তাঁরা সকলে যা জানালেন, তার মূল বক্তব্য একই। রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে স্থায়ী চাকরি পাওয়ার আশায় হাসপাতালের কর্মী বলে পরিচয় দেওয়া কয়েক জনের কাছে ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছিলেন তাঁরা। টাকার বিনিময়েই ওই নিয়োগপত্রগুলি তাঁদের হাতে এসেছে।
একই দিনে মোট ৬০ জনের কাছ থেকে এই অভিযোগ পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চক্ষু চড়কগাছ। ভবানীপুর থানায় লিখিত অভিযোগে ওই ৬০ জন জানিয়েছেন, বেশ কয়েক মাস ধরেই এই চাকরির ব্যাপারে তিন ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ চলছে। গত সপ্তাহে আলাদা আলাদা ভাবে ২৫ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন তাঁরা। তখনই তাঁদের ওই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিতে এসে জানলেন, সবটাই ফাঁকি। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শুধু সুপারের সই নয়, লেটারহেডটিও নকল। সুপার তমালকান্তি ঘোষ নিজে ওই সময়ে হাসপাতালে হাজির ছিলেন না। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “এটা নিয়ে কী বলব কিছু বুঝতে পারছি না। পুলিশ তদন্ত করছে।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের নাম করে নিয়োগপত্রগুলি লেখা হয়েছে। সব ক’টি পদই চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই ইউনিটে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর সংখ্যা কম। নিয়োগের ব্যাপারে হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য দফতরে একাধিক বার আবেদন করা হয়েছে। ভুয়ো নিয়োগপত্রের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বলে কর্তৃপক্ষের অনুমান।
এ দিকে, খাবারের মান যথাযথ নয়, এই অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে এসএসকেএমের কার্ডিও থোরাসিক বিভাগে ওয়ার্ডের ভিতরেই প্রতিবাদ করেন রোগীরা। পথ্যের নামে খাওয়ার অযোগ্য জিনিস তাঁদের দেওয়া হচ্ছে বলে এ দিন প্রথমে খাবার ফিরিয়েও দেন তাঁরা। সুপার তমালকান্তিবাবু বলেন, “ডিমের আকার ছোট বলে রোগীরা অভিযোগ করেছিলেন। আমরা রান্নাঘরে কথা বলে তড়িঘড়ি খাবার বদলে দিয়েছি। যে সংস্থা খাবার সরবরাহ করে, তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে।” কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের পরে রোগীরা অবশ্য খেয়ে নেন। |