ভুল বুঝে তিনি ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। কিন্তু দলের মধ্যে অস্বস্তি এবং আশঙ্কা উস্কে দিয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লকের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস। এতটাই যে, দলের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয়ন গুহ ফেসবুকে পোস্ট করে দেবব্রতবাবুর মন্তব্যের কড়া নিন্দা করছেন! দিনহাটার বিধায়কের মন্তব্য, ‘মদন মিত্রেরা কখনও আমাদের আদর্শ হতে পারে না’।
কামারপুকুরে রবিবার ফ ব-র হুগলি জেলা সম্মেলনের সমাবেশে তৃণমূল সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছিলেন দেবব্রতবাবু। বিতর্ক তৈরি হতেই চাপের মুখে সোমবার তিনি বিবৃতি দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন। কিন্তু ফ ব-র নিচু তলার নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা তাতে দূর হচ্ছে না। হুগলি জেলার গোঘাট-আরামবাগ এলাকায় বাম জমানাতেই সিপিএমের সঙ্গে ফ ব-র বিবাদ ছিল দীর্ঘদিন। সিপিএমের অত্যাচারে তাঁদের দলের কর্মী-সমর্থকেরা ঘরছাড়া বলে বহু বার অভিযোগ, প্রতিবাদ করেছেন গোঘাটের তদানীন্তন ফ ব বিধায়কেরা। এখন বামফ্রন্ট ক্ষমতা হারানোর পরে সিপিএমের সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে এনে পঞ্চায়েত ভোটে লড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল ফ ব। কিন্তু বাম ঐক্য যখন দানা বাঁধছে, সেই সময়েই দেবব্রতবাবুর মন্তব্য অন্য দিক থেকে নতুন করে পরিস্থিতি ঘোরালো করে দিতে পারে বলে হুগলি জেলা ও রাজ্য ফ ব নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা।
দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “দলের তরফে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল এই বিষয়টাকে জিইয়ে রাখবে। ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় তারা প্রচার করছে, ৩ ফেব্রুয়ারি শুভেন্দু অধিকারীকে এনে দেবব্রতবাবুর মন্তব্যের প্রতিবাদে সভা করবে। তৃণমূলের কাছে হাতিয়ার চলে আসায় আমাদের কর্মী-সমর্থকদের পঞ্চায়েত ভোটের মুখে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।” তৃণমূলের প্রতিবাদের জেরে দলের কর্মী-সমর্থকদের এলাকায় কাজ করা মুশকিল হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ফ ব-রই একাংশ।
সাধারণ সম্পাদকের মন্তব্য দলের রাজ্য সম্মেলনে বিতর্ক তৈরি করতে পারে বলেও ফ ব-র একাংশের ইঙ্গিত। আগামী ৯-১১ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সম্মেলনে দেবব্রতবাবুর ওই বিতর্কিত মন্তব্যকে সামনে রেখে নেতাদের কারও কারও আচরণের প্রতিবাদে সরব হতে চান রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতা-কর্মীদের একাংশ। যে কাজের খানিকটা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন উদয়নবাবু। ফেসবুকে তাঁর পোস্ট ‘কমরেড দেবব্রত বিশ্বাস যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অশ্লীল ও অশালীন। এই ধরনের ভাষা রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থির করতে সাহায্য করে। উপরন্তু বামপন্থীদের ঘুরে দাঁড়াবার প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করে। আমরা দুঃখিত, লজ্জিত, ক্ষমাপ্রার্থী’। সেই সঙ্গেই উদয়নবাবুর মন্তব্য, ‘মদন মিত্ররা কখনও আমাদের আদর্শ হতে পারে না’! তাঁর এই মতকে ‘লাইক’ করেছেন ফ ব-র নিচু তলার কর্মীরাও।
পরে যোগাযোগ করা হলে উদয়নবাবু বলেছেন, “এমন কথা কারওরই বলা উচিত নয়, যা রাজনৈতিক পরিবেশকে বিষাক্ত করবে। আমার ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। দলের তরফে আমিও মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। মুখ্যমন্ত্রীও শিলিগুড়িতে শকুনের ভাগাড়ের প্রসঙ্গ টেনে যা বলেছেন, তা-ও বাংলার লজ্জা!”
ফব-র এক নেতার কথায়, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বাক্সংযম হারানো নেতাদের পাশে দাঁড়ান দলের নেতারা। সে দিক থেকে উদয়নবাবু অন্য রাস্তায় হাঁটলেন।” |