দ্বিচারিতা: সরব বিরোধীরা
সরকারি মঞ্চে রাজনীতি নয়, ভিন্ন সুর মমতারই
রিণঘাটায় বলেছিলেন, কাজে ফাঁকি দেন যে সরকারি কর্মীরা, তাঁরা সব সিপিএম!
বেলদায় বলেছিলেন, সিপিএমের মাটি খুঁড়লেই খুলি আর জামা খুললেই গুলি!
ক্যানিংয়ে তাঁরই মন্তব্য ছিল, এত তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় ফেরার জন্য মরিয়া কেন কমরেড? সিপিএম এখন কুড়ি বছর চুপ করে থাকুক!
দার্জিলিঙে মঙ্গলবার সেই তিনিই বিমল গুরুঙ্গের সমর্থকদের ধমক দিলেন, “সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলবেন না!”
হরিণঘাটা, বেলদা বা ক্যানিং-ও সরকারি মঞ্চ ছিল। সরকারি অনুষ্ঠানের সেই মঞ্চ থেকেই অক্লেশে রাজনৈতিক কথা বলে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেমন বলেছেন আরও অগুণতি সরকারি সভায়। দার্জিলিঙে গিয়ে তাঁরই বোধোদয় হল, সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলা যায় না!
সরকারি অর্থে সরকারি মঞ্চকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী কেন দলীয় প্রচারে ব্যবহার করছেন, তা নিয়ে সরব ছিলেন বিরোধীরা। দার্জিলিঙের ঘটনা দেখে তাঁরা স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘দ্বিচারিতা’র অভিযোগ আনার সুযোগ পাচ্ছেন। বিরোধী শিবিরের অনেকে এ-ও বলছেন যে, দার্জিলিঙে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সমর্থকদের এ দিনের দাবি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অস্বস্তিকর ছিল বলেই তিনি ‘সরকারি মঞ্চে রাজনীতি নয়’ এই নীতিকথাকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন!
দার্জিলিঙে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার পরেই কিছু মোর্চা সমর্থক গোর্খাল্যান্ডের সমর্থনে পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। তার আগেই জিটিএ-কে এড়িয়ে সরকারি কর্মসূচি নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চেই গুরুঙ্গ উষ্মা প্রকাশ করেছেন। গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবির কথা শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই মাইক হাতে নিয়ে ধমক দিয়েছেন পোস্টারধারীদের। বলেছেন, “সরকারি মঞ্চে রাজনীতির কথা বলবেন না! এটা সরকারি অনুষ্ঠান। আপনাদের দল বা আমাদের দলের অনুষ্ঠান নয়!” দার্জিলিং পশ্চিমবঙ্গের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলে ঘোষণা করার পাশাপাশিই মোর্চাকে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি শুনতে হয়েছে “আই অ্যাম ভেরি রাফ অ্যান্ড টাফ!”
মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি ও রাজনৈতিক মঞ্চকে আলাদা করার চেষ্টা দেখে কটাক্ষ করতে কসুর করেননি বিরোধী নেতা-নেত্রীরা! বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “উনি আজ যে কথাটা বললেন, সেটাই দিনের পর দিন করেছেন! সরকারি মঞ্চ থেকে দলের প্রচার। নিজে এত দিন করে এখন অন্যদের শেখাচ্ছেন! এটাই ওঁর দ্বিচারিতা!” একই সুর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সির। তাঁর কথায়, “সরকারি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক স্লোগান দেওয়া যায় না। এটা ঠিকই। কিন্তু উদাহরণ তো মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের মন্ত্রীরাই তৈরি করেছেন! মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীরা এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে একাধিক বার সরকারি মঞ্চ থেকে দলীয় রাজনীতির কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী আজ পাহাড়ে বিক্ষোভকারীদের ধমক দিচ্ছেন কিন্তু তাঁকে কে ধমক দেবে?” এমনকী, গুরুঙ্গও এ দিনের সরকারি অনুষ্ঠানেই মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বক্তব্যের অভিযোগ এনেছেন!
রাজ্যের মন্ত্রী বা তৃণমূল নেতারা কেউ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই ‘মঞ্চ-দ্বিচারিতা’ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে এ দিন দার্জিলিঙের ওই সরকারি মঞ্চেই মুখ্যমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। শাসক দলেরই একাংশের প্রশ্ন, দলীয় সংগঠনে মুখ্যমন্ত্রীর বিশ্বস্ত সেনাপতি সরকারি মঞ্চে কোন এক্তিয়ারে? তৃণমূলেরই অন্য একাংশের আবার পাল্টা বক্তব্য, রাজ্যের সাংসদ এবং সরকারি দফতরের উপদেষ্টা হিসাবে মুকুলবাবুর সরকারি মঞ্চে থাকতে কোনও বাধা নেই। যোগাযোগের চেষ্টায় ফল না মেলায় খোদ মুকুলবাবুর বক্তব্য অবশ্য জানা যায়নি।
রাজ্য ভাগ যে তাঁরা সমর্থন করেন না, মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তা বলছেন সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁরা বলছেন, বিরোধীদের পরামর্শে কান না-দিয়ে জিটিএ নিয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে পাহাড় সমস্যা জিইয়ে থাকল। দীপা যেমন বলেছেন, “ক্ষমতায় আসার পরে মহাকরণে একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, পাহাড় হাসছে। সেই হাসিটা এত তাড়াতাড়ি মুছে যাবে আশা করিনি!” সিপিএমের পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য নিরুপম সেনের মন্তব্য, “দার্জিলিং নিয়ে এত কথা বললেন। সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। কিন্তু সেই বেলুনও ফুটো হয়েছে!” মঞ্চ-সমস্যা অবশ্য দার্জিলিঙে শুধু সীমাবদ্ধ নয়। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের হুঁশিয়ারির পরে তাঁর কথা ও কাজের ফারাক ধরতে পাহাড় থেকে সমতলে এ বার দূরবীন হাতে তৈরি থাকবে বিরোধীরা! মুখে সেই আপ্তবাক্য আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.