দুর্মূল্য দাঁত নিতে বাঁশ দিয়ে হাঙর-হত্যা |
সন্তানের জন্ম দিতে তামিলনাড়ুর ইঞ্জামবাক্কামের সমুদ্র সৈকতের কাছে চলে এসেছিল সে। কিন্তু সে বুঝতে পারেনি কী হতে চলেছে। তাই শেষমেশ মানুষের অত্যাচারে মরতে হল এক বিশেষ প্রজাতির (হোয়েল শার্ক) হাঙরকে।
রুজির টানেই রবিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ সমুদ্রের তীরে হাজির হন একদল মৎস্যজীবী। হাতে মাছ ধরার জালে তখন ছটফট করছে ২১ ফুট লম্বা, দেড় টনের একটা হাঙর। তাকে তীরেই ফেলে রেখে চলে যায় মৎস্যজীবীরা। তখনও তার শরীরে প্রাণ রয়েছে।
পর দিন সকালে ওই মৎস্যজীবীরা ফিরে আসে। সবাই মিলে জলে ফেলার বদলে তাকে টানতে টানতে ডাঙায় তুলে আনে। ইতিমধ্যে কাছের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে, হাঙরের দাঁত দুর্মুল্য। অতএব, বাঁশের বড় খুঁটি দিয়ে শুরু হয় দাঁত উপড়ে নেওয়ার চেষ্টা। রক্তাক্ত অবস্থায় বালির উপর ছটফট করতে থাকে সে। মৎস্যচাষ এবং বন্যপ্রাণী কর্তৃপক্ষ যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছন, শরীর থেকে প্রাণ বেরোল বলে। স্থানীয় মৎস্যজীবীদের তিনি নির্দেশ দেন, সবাই মিলে হাঙরটাকে জলে ফিরে যেতে সাহায্য করুন।
তবে অত খাটাখাটনি করতে হয়নি তাদের। ঘণ্টাখানেক পরে যত ক্ষণে হাঙরটাকে জলে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তার। পরে সমুদ্রের স্রোতই ধুয়ে নিয়ে যায় তার দেহটা।
মৎস্যজীবীদের দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেও, অনেকেই বন্যপ্রাণী দফতরকে দুষছেন। রবিবার রাতেই দফতরকে খবর দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পর তাঁরা বলেন, রাতের অন্ধকারে হাঙরটাকে সমুদ্রের জল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব। পরের দিন যখন তাঁরা আসেন, সব শেষ।
জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ডিরেক্টর কে বেঙ্কটরামন বলেন, জলজ প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায়। ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বাঘকে মারার মতোই এ ধরনের হাঙরকে হত্যা কিংবা জখম করা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তিনি আরও জানান, বছরের এই সময়টা সন্তানের জন্ম দিতে সমুদ্রতীরের কাছাকাছি চলে আসে এরা। আর মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ে। বেঙ্কটরামনের অভিযোগ, এরা হাঙর মেরে তাদের শরীর থেকে তেল বের করে নেয়। এর পর সেই তেল নৌকো রং করতে ব্যবহার করে। তাঁর কথায়, “এই প্রজাতির হাঙর একেবারেই নিরীহ প্রাণী। এদের সংখ্যা কমে যাওয়া নিয়ে কোনও সমীক্ষা করা হয় না। গুজরাত সরকার ঘোষণা করেছে, যে সব মৎস্যজীবী জালে ধরা পড়া হাঙর ছেড়ে দেবে, তাদের ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। এখানেও এমন পুরস্কার চালু করা দরকার। |