সম্পাদকীয় ২...
স্বাগত চুক্তি
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহু-প্রতীক্ষিত বন্দি-প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হইয়াছে। চুক্তি না-থাকায় এত দিন দুই দেশের কেহই অন্যের উপর বন্দি-প্রত্যর্পণ বিষয়ে পর্যাপ্ত চাপ সৃষ্টি করার বৈধতা অর্জন করে নাই। বাংলাদেশ যে তাহার জেলে বন্দি শীর্ষস্থানীয় আল্ফা নেতাদের ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলিয়া দিয়াছিল, সেটা নিছকই সে দেশের হাসিনা ওয়াজেদ সরকারের একতরফা শুভেচ্ছাপ্রসূত। বস্তুত, খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকার তো আল্ফা জঙ্গিদের এক সময় ‘স্বাধীনতা-সংগ্রামী’ই আখ্যা দিয়াছিলেন, ঠিক যেমন কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদীদের পাক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশারফও একদা ‘মুজাহিদিন’ বলিতেন।
পরে অবশ্য বেগম জিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি ও অবস্থানেও অনেক পরিবর্তন হইয়াছে। বস্তুত, এই চুক্তি সেই পরিবর্তিত মনোভাবেরই ফসল। সত্য যে, ঢাকায় এই মুহূর্তে হাসিনা ওয়াজেদের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগের সরকার ক্ষমতাসীন। অতীতে হাসিনা বনাম খালেদা জিয়ার পারস্পরিক বিরূপতা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও কালো ছায়া ফেলিয়াছিল। কিন্তু কালক্রমে কূটনীতির বিচক্ষণ অনুশীলনে নয়াদিল্লি বাংলাদেশের দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠীর সঙ্গেই নিরপেক্ষ মৈত্রীর সম্পর্ক গড়িয়া তোলায় বেগম জিয়াও এখন আর ভারত-বিরোধিতাকে পুঁজি করিয়া নির্বাচনী রাজনীতি চর্চা করিতে আগ্রহী নন। বস্তুত, হাসিনার আওয়ামি লিগ সরকার ক্ষমতাসীন থাকাকালেই বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া আলাদাভাবে ভারত সফর করিয়াছেন। ভারতীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বও তাঁহার সহিত যথোচিত মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করিয়া বুঝাইয়া দিয়াছেন, ঢাকার তখ্ত-এ কে আসীন, তাহার উপর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নিবিড়তা নির্ভরশীল নয়। ভারতীয় মন্ত্রী ও নেতারাও বাংলাদেশ সফরে যাইলে খালেদা জিয়ার সহিত সৌজন্য সাক্ষাৎ করিয়াছেন। আজ যে দুই দেশের মধ্যে বন্দি-প্রত্যপর্ণ চুক্তি সম্পাদিত হইল, তাহার তাৎপর্য এখানেই।
এই চুক্তির গুরুত্বও অপরিসীম। দুই দেশের অভিন্ন সীমান্ত অধিকাংশতই স্থলভাগে। বস্তুত, বাংলাদেশ তিন দিক দিয়াই ভারতীয় ভূখণ্ড দ্বারা বেষ্টিত। ফলে দুই দেশেরই জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদী, মৌলবাদী অন্তর্ঘাতকরা নাশকতামূলক অপকর্ম করিয়া সীমান্ত অতিক্রম করিয়া অন্য দেশে পলায়ন করে, নিরাপদ আশ্রয় লয়। অনেকে তো রীতিমতো বিয়ে-শাদি করিয়া সেখানকার নাগরিক বনিয়া যায়। তা ছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধচক্র, মাদক-চোরাচালানকারী, আগ্নেয়াস্ত্র পাচারকারী ও মাফিয়া-প্রতিম দুষ্টচক্রীরাও দুই দেশের নিরাপত্তা রক্ষীদেরই চোখে ধুলা দিয়া যাতায়াত করে। বন্দি-প্রত্যর্পণ চুক্তির ফলে উভয় দেশই নিজ ভূখণ্ডকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিনাশে লিপ্ত অপরাধীদের দ্বারা ব্যবহৃত হইতে দিবার বিরুদ্ধে তৎপর হইবে। ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য অন্য দেশে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার কড়াকড়ি শিথিল করার জরুরি কৃত্যটিও সম্পন্ন হওয়ায় দুই দেশের নাগরিকরাই অনেক অযথা হয়রানি হইতেও রেহাই পাইবেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.