অর্থনীতির বিধান মেনে নয়, বরং অনেকটাই রাজনীতির বাধ্যবাধকতায় সুদের হার কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। আর এটাই মঙ্গলবার খুশি করতে পারেনি শেয়ার বাজারকে। যদিও তা এক রকম আঁচ করতে পেরেছিল বাজার, তবুও তার জেরে মঙ্গলবার সেনসেক্স এক ধাক্কায় ১১২.৪৫ পয়েন্ট পড়ে ফের ২০ হাজারের নীচে নেমে থিতু হয় ১৯,৯৯০.৯০ অঙ্কে। চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধি ৫.৮% থেকে কমে ৫.৫% হওয়ার যে-ইঙ্গিত সুব্বারও দিয়েছেন, তার জেরেও শেয়ার বেচে মুনাফা তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, রাজনৈতিক এবং পাশাপাশি বাজারের চাপের কাছে নতি স্বীকার করেছেন সুব্বারাও।
দেশের বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে সুদ কমানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করার মাস খানেকের মধ্যেই বিপরীত মুখে হেঁটে শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও এ দিন ঋণনীতির পর্যালোচনায় রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট এবং একই হারে নগদ জমার অনুপাত কমিয়েছেন। অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, মূল্যবৃদ্ধি কমলেও বাণিজ্য ঘাটতি-সহ অন্যান্য আর্থিক মানদণ্ডের বিচারে সুদ কমানো এখনই আর্থিক নীতির সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। এই সিদ্ধান্ত মূল্যবৃদ্ধির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
আগামী দিনে কেমন যাবে শেয়ার বাজার? মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানান বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, “শুধু অর্থের জোগান বাড়ানোই নয়, আর্থিক বৃদ্ধিতে জোয়ার আনতে প্রয়োজন চাহিদা বাড়ানো। বিশেষ করে আমেরিকা-ইউরোপে মন্দার জেরে বাণিজ্য ঘাটতি যখন বড় মাপের সমস্যা সৃষ্টি করেছে, তখন এই সিদ্ধান্ত মূল্যবৃদ্ধির হার ফের বাড়াতে পারে। এই অবস্থায় শেয়ার বাজার স্থিতিশীল ভাবে বাড়ার সম্ভাবনা কম।” অনেকটা একই মত পোষণ করে ফিনশোর ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের এমডি লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন বলেন, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে, তা বাজার ধরেই নিয়েছিল। তাই লগ্নিকারীরা উৎসাহিত হননি।”
তবে অনেক বিশেষজ্ঞেরই ধারণা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই ঘোষণা লগ্নিকারীদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা করবে। সূচকের পতন সাময়িক বলেও মত তাঁদের। কারণ ব্যাঙ্কে যে-সুদের হার কমবে, এতে সন্দেহ নেই। সুদ কমলে ব্যাঙ্ক ও আবাসন শেয়ারের চাহিদা বাড়তে পারে বলে ধারণা তাঁদের। এই অবস্থায় শেয়ার বাজার যে চাঙ্গা হবে, সে ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চিত। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের ডিরেক্টর ও বিশেষজ্ঞ এস কে কৌশিক বলেন, “আজকের পতন দিয়ে বাজারকে বিচার করা ঠিক নয়। অন্তত বাজেট পর্যন্ত যে সূচকের চাকা এগোবে, তাতে সন্দেহ নেই। মাস খানেকের মধ্যেই সেনসেক্স ২৩ হাজারের ঘরে ঢুকলে অবাক হব না।” |