বধূকে গণধর্ষণের দায়ে দুই যুবকের যাবজ্জীবন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রামপুরহাট |
পুজো দিয়ে আড়াই বছরের শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন এক বধূ। পথে দিনের বেলা নির্জন জায়গায় জোর করে টেনে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেছিল দুই যুবক। শিশুপুত্রের গলায় কাস্তে ধরে ঘটনার কথা কাউকে না জানাতে হুমকিও দিয়েছিল তারা। কিন্তু সেই বধূ ভয় না পেয়ে সেদিনই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। মঙ্গলবার ওই বধূকে গণধর্ষণের দায়ে দুই যুবকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিল রামপুরহাট আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক তৃতীয় আদালত। এই সাজা শোনান।
সরকার পক্ষের আইনজীবী উৎপল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬/২জি ধারায় গণধর্ষণের অভিযোগে ওই দুই যুবককে সোমবারই আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। এ দিন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক মানস বসু দোষী শরিফুল শেখ ও বাবু শেখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনান। তারই সঙ্গে প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানার নির্দেশও দেন। অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ হয়েছে।” অভিযুক্তেরা প্রত্যেকেই মুরারই থানা এলাকার বাসিন্দা।
সরকার পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, ২০১১ সালের ১৭ মে মুরারই থানা এলাকার ওই বধূ প্রতিবেশী গ্রাম (ঝাড়খণ্ডের সাহেবপুর থানা এলাকার একটি গ্রাম) থেকে মঙ্গলচণ্ডীর পুজো দিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিলেন। সঙ্গে ছিল তাঁর আড়াই বছরের শিশুপুত্র। পথে দু’টি গ্রামের মধ্যে যাওয়া ছোট নদীটি পার করতে গিয়েই বিপদের মুখে পড়েন ওই বধূ। বধূটি তাঁর অভিযোগে জানিয়েছিলেন, নদী পার হতে গিয়ে ধারের একটি ঝোঁপের আড়াল থেকে শরিফুল শেখ ও বাবু শেখ বেরিয়ে এসে তাঁকে জোর করে জাঁপটে ধরে ফেলে। শিশুপুত্রটিকে কোল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে শরিফুলকে বধূটিকে নদীর ধারে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে বাবু শেখ। শরিফুল শেখই বধূটিকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। আর বাবু শেখ তাঁর শিশুপুত্রের গলায় কাস্তে ধরে ঘটনার কথা কাউকে জানালে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় বলে জানিয়েছিলেন ওই বধূ। ঘটনার পর ওই বধূ ভয় না পেয়ে গ্রামে ফিরে সব কথা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জানান। পরে রাতেই স্বামীর সঙ্গে মুরারই থানায় গিয়ে দুই যুবকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন সেই সাহসী বধূ। ঘটনার তদন্ত শুরু করে শরিফুল ও বাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ দিন মামলার রায় শুনতে স্বামীর সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন ওই বধূ। সঙ্গে ছিল তাঁর সেই শিশুপুত্রও। সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে ওই বধূ বলেন, “আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, কেউ নদীর ধারে ঝোঁপ থেকে ওই ভাবে বেরিয়ে এসে আমাকে ধরে ফেলবে। ধর্ষণকারীদের মধ্যে বাবু শেখকে আমি প্রতিবেশী হিসাবে চিনতাম। তাই পুলিশের কাছে তার নাম বলতে পেরেছিলাম।” পুলিশ বাবু শেখকে জেরা করেই শরিফুল শেখ নামে অন্য যুবকটিকে ধরতে পেরেছিল। এ দিকে, বধূর স্বামীর অভিযোগ, “ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করার পর অভিযুক্তেরা চাপ দিতে আমার বিরুদ্ধে ঝাড়খণ্ডের পাকুড় আদালতে মিথ্যা মামলা করে। অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্যও তারা বারবারই হুমকি দিত।” এ দিন আদালতে অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজনও হাজির ছিলেন। সাজা শোনার পর আদালত চত্বরেই তাঁরা কেঁদে ফেলেন। তাঁদের দাবি, ওই দুই যুবককে ফাঁসানো হয়েছে।
উৎপলবাবু বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় গ্রাম-মফস্সলের মেয়েরা সামাজিক চাপে এমন ঘটনায় অভিযোগ জানাতেই আসেন না। সে ক্ষেত্রে ওই বধূ সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর পরিবারের ভূমিকাও প্রশংসনীয়।” |