আজাদ-সাইফুল বিবাদে ফের অশান্ত মঙ্গলকোট
দুই দুষ্কৃতী দলের মধ্যে গোলমালে ফের অশান্ত হল মঙ্গলকোট। বোমা-গুলিতে আতঙ্ক ছড়ায় বাসিন্দাদের মধ্যে। আগুনে পুড়ল পাঁচটি বাড়ি ও বেশ কয়েকটি খড়ের পালুই। সোমবার রাতে ঝিলেরা গ্রামে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভাতার থেকে দমকলের দু’টি ইঞ্জিন গিয়ে আগুন নেভায়। এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাস জানান, গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরেই মঙ্গলকোটে দু’টি দুষ্কৃতী দলের গোলমালে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। একটি দলের নেতা আজাদ মুন্সি এবং অপরটির সাইফুল খান। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এ বারের ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার। সে দিন সাইফুল নিজের গ্রাম ঝিলেরায় গেলে তাকে আজাদ ও তার দলবল তাড়া করে বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ ওই গ্রামে গিয়ে তল্লাশি চালায়। পুলিশের ধারনা, সেই ঘটনার রেশ থেকেই সোমবার রাতে সাইফুল লোকজন নিয়ে বোমাবাজি করতে করতে গ্রামে ঢোকে। আজাদ-ঘনিষ্ঠদের বাড়ি ও খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগায় তারা। পুলিশ যেতে দুষ্কৃতীরা পালায়।
মঙ্গলবার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামে ঢোকার মুখে অজয়ের বাঁধের গায়ে পুলিশ পিকেট রয়েছে। তার কাছেই দু’টি বাড়ি পুড়েছে। গ্রামের বাসিন্দা শেখ মুনবক্সের কথায়, “আমি চালাঘরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ বোমা পড়তে শুরু করে। দেখি, আমার বাড়িতে আগুন লেগেছে। কোনও রকমে পালিয়ে বাঁচি।”
ঝিলেরা গ্রামে পুড়ল বাড়ি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভস্মীভূত হয়েছে ইলা হকের বাড়িও। তাঁর স্ত্রী কুলসুনা বিবি বলেন, “ধান, চাল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুড়ে মারা গিয়েছে পোষা মুরগি। বাসনকোসন থেকে সাইকেল, আসবাবপত্র সব পুড়ে গিয়েছে।” তাঁর ছেলে, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শেখ সাদ্দেক বলে, “প্রচুর বোমা ও গুলি ছোড়া হচ্ছিল। ভয়ে কুঁকড়ে গিয়েছিলাম।” গোলহারা বিবি, হিয়াদুল্লা শেখরা বলেন, “পরপর পড়শিদের বাড়িতে আগুন জ্বলছে। অথচ আমরা যেতে পারিনি। দুষ্কৃতীরা এলাকা ছাড়ার পরে বেরিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।”
গ্রামের শেষ দিকে কয়েকটি খড়ের পালুইতে আগুন লাগানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দা কালীপদ সরকারের দাবি, তাঁর বেশ কয়েক হাজার টাকার খড় নষ্ট হয়েছে। গ্রামের বধূ ডলি বিবির অভিযোগ, “সাইফুল-গোষ্ঠীর লোকজন আগে আমার মেয়ের বিয়ের সময়ে মণ্ডপ পুড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। তখন ব্যর্থ হয়। কিন্তু এ বার সর্বস্বান্ত করে ছাড়ল।” মঙ্গলবার দুপুরে তিনি মঙ্গলকোট থানায় সাইফুল-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত অক্টোবরে আজাদ ও সাইফুলের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে দু’জন বাসিন্দার মৃত্যু হয়। পুলিশ জানায়, অজয় নদে অবৈধ বালিঘাটের দখল, একশো দিনের কাজের টাকা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই ওই দু’জনের মধ্যে বিবাদ চলছে। অথচ এক সময়ে সাইফুলই আড়াল গ্রামের বাসিন্দা আজাদকে ঝিলেরা গ্রামে ‘আশ্রয়’ দিয়েছিল। পরে গ্রামে কাজল শেখ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে সাইফুলের দ্বন্দ্ব বাধলে আজাদ কাজলের পাশে দাঁড়ায়। এর পর থেকেই সাইফুল কার্যত গ্রামছাড়া। আজাদের দাবি, গোটা গ্রাম সাইফুলের বিরুদ্ধে। তাই সে নিরীহ মানুষজনের উপরে হামলা চালাচ্ছে। সাইফুলের অবশ্য পাল্টা দাবি, তাকে প্রাণে মারার চক্রান্ত করেছে আজাদেরা। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায় এখন নিজেরা বাড়ি ও খড়ের পালুইয়ে আগুন লাগিয়ে ষড়যন্ত্র করছে বলে তাঁর অভিযোগ।
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য সৈয়দ বদরুদ্দোজার অভিযোগ, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের নিজেদের গণ্ডগোলে এলাকার শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে।” তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। ওই দু’জন আমাদের দলের কেউ নয়। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি। প্রশাসনের কাছে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার দাবি জানানো হয়েছে।” পুলিশ অবশ্য মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.