কাজে বাধা, আপসেই মেটাতে চায় এসার
বাণিজ্যিক সংস্থা গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করায় ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছিলেন কিছু গ্রামবাসী। তাঁরা বেড়া দিয়ে রাস্তা আটকানোয় বর্ধমানের কাঁকসায় সংস্থার কর্মীরা কাজে যেতে পারেননি। তাঁদের জোর করে আটকে রাখারও অভিযোগ ওঠে।
মঙ্গলবার মহাকরণে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরে ‘এসার অয়েল’ নামে ওই সংস্থার কর্তারা জানালেন, বিষয়টি ‘তুচ্ছ’। এতই সামান্য, যে তার জন্য পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার প্রয়োজনও তাঁরা বোধ করেননি। এ দিনের বৈঠকও কোনও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নয়, বরং ‘পূর্বনির্ধারিত’ বলে জানান তাঁরা।
বৈঠকের পরে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওঁরা জানিয়েছেন, সংস্থার কয়েক জন কর্তাকে অপহরণ করা হয়েছে বলে কোনও কোনও সংবাদপত্রে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা একেবারে অসত্য।” সংস্থাটি ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়ায় রাতেই রাস্তা থেকে বেড়া তুলে দেন গ্রামবাসী। যদিও শিল্পের পরিকাঠামো গড়ার ক্ষেত্রে প্রশাসন যথার্থ ভূমিকা নিয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না।
ভূগর্ভস্থ মিথেন গ্যাস তোলার জন্য বর্ধমানের অন্ডাল, পান্ডবেশ্বর, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ও কাঁকসা ব্লকের বিভিন্ন জায়গায় শ’খানেক কুয়ো খুঁড়েছে এসার। সোমবারই দুর্গাপুর মহকুমাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে তারা অভিযোগ করে, কাঁকসার জাটগোড়িয়া গ্রামে তাদের কয়েক জন কর্মীকে ধরে আটকে রাখা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ দিন দুপুরে মহাকরণে এসে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র ও স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার তিন কর্তা।
রাস্তা আটকে রেখেছেন গ্রামবাসীরা। বর্ধমানের কাঁকসায়। —নিজস্ব চিত্র
পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে সংস্থার রেসিডেন্ট ডিরেক্টর মানবেন্দ্র গুহ রায় বলেন, “আমরা এখানে কাজ করতে এসেছি। ঝগড়া করতে নয়। পাড়ায় ছোটখাটো ঝামেলা হলে কি আমরা পুলিশের কাছে যাই? এই তুচ্ছ বিষয়ের জন্য এফআইআর করতে চাইনি।” তবে কাজের জায়গায় পুলিশি টহল, এমনকী একটি পুলিশ ক্যাম্পও চেয়েছেন তাঁরা। যদি তেমন কিছু না-ই ঘটে থাকে, পাহারার প্রয়োজন কেন? শিল্পমন্ত্রী মেনে নেন, “ওঁরা কোনও অভিযোগ জানাননি বটে। তবে ছোটখাটো কিছু নিশ্চয়ই হয়েছে।”
বস্তুত, কাঁকসায় এই রাস্তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই জট পাকাচ্ছিল। এসারের প্রকল্প অধিকর্তা অপূর্ব রঞ্জন বলেন, “প্রায় এক কিলোমিটার মোরাম রাস্তা পেরিয়ে আমাদের ‘সাইটে’ পৌঁছতে হয়। রাস্তার কিছু জমি এখনও ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে। তাঁরাই ক্ষতিপূরণের দাবি তোলেন।” জাটগোড়িয়া গ্রামে মিথেন তোলার যে ছ’টি কুয়ো আছে, তার মধ্যে চারটি কুয়ো গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে বেশ ভিতরে। গ্রামবাসীর একাংশের দাবি, কুয়োর জমির কিনে নিয়েছে এসার। কিন্তু সেখানে যেতে যে মেঠো রাস্তা তারা ব্যবহার করছে তা কয়েক জনের নিজের বা পাট্টা পাওয়া জমির উপর দিয়ে গিয়েছে। সেটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে গেলে যথার্থ ‘ক্ষতিপূরণ’ দিয়ে কিনে নিতে হবে সংস্থাটিকে।
এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় শেখ লালন, শেখ জিয়ারুলদের মতো কিছু যুবক বেড়ার সামনে দাঁড়িয়ে। তাঁদের দাবি, ৫০ জনেরও বেশি গ্রামবাসীর জমি গিয়েছে রাস্তায়। বিক্ষোভের নেতৃত্বে তৃণমূলের জাটগোড়িয়া অঞ্চল সভাপতি শেখ বরকত আলি। তাঁর বক্তব্য, “গ্রামবাসীর রাস্তা ব্যবহার করে বেসরকারি সংস্থা মুনাফা করবে অথচ তাঁদের কোনও লাভ হবে না, এটা চলতে পারে না।” তাঁর আক্ষেপ, ২০১০ সালে প্রকল্প চালুর সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও চারটি কুয়োয় তিন জন করে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। যদিও যে কাজে বিশেষ ভাবে দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হয়, স্থানীয় অদক্ষ যুবকেরা তা কী করে করবেন, তার ব্যাখ্যাও মেলেনি।
দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক আয়েষারানি জানান, সোমবার সংস্থাটি আইনশৃঙ্খলার কারণে কাজে অসুবিধার কথা জানিয়েছিল। তিনি কাঁকসা থানার পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। পুলিশ জানায়, সে দিন সকালে গাড়িতে আসা সংস্থার ১০-১২ জন কর্মীকে রাস্তার পাশে আটকান কিছু গ্রামবাসী। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। দুপুরে সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে একদফা বৈঠক হয় প্রশাসনের। বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “ওঁরা জানিয়েছেন, রাস্তার জমি কিনে নিতে ওঁঁদের কোনও আপত্তি নেই। প্রশাসন দ্রুত রাস্তার জমি মাপজোক করে মালিকদের চিহ্নিত করে দেবে।”
কিন্তু পরিস্থিতি ঘোরালো হওয়া ইস্তক সেই কাজ করা হল না কেন, সে প্রশ্নও এড়ানো যাচ্ছে না। মঙ্গলবার দুপুরেও এসারের প্রকল্প অধিকর্তা অপূর্ববাবু জানতেন না, জমির দাবিদার ঠিক ক’জন। তিনি বলেন, “ঠিক কত জনকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, তা সরকারকে ঠিক করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।” পরে শিল্পমন্ত্রী জানান, ২০০৮ সালে স্থানীয় পঞ্চায়েত যখন রাস্তাটি তৈরি করেছিল, চার জন ক্ষতিপূরণ পাননি। সেটা তাঁদেরও জানা ছিল না। পার্থবাবু বলেন, “এসার সংস্থাই ওই চার জনের নাম-ধাম আমাদের জানিয়েছে। জেলাশাসক-মহকুমাশাসককে বলা হয়েছে, তাদের পরিচয় মিলিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে।”
সন্ধ্যায় নিজের দফতরে কাঁকসার বিডিও, থানার ওসি, এসারের এক প্রতিনিধি এবং পাঁচ জমিমালিককে নিয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেখানেও এসার জানিয়েছে, তাদের কোনও কর্মীকে শারীরিক ভাবে বাধা দেওয়া বা নিগ্রহ করা হয়নি। পার্থবাবুর মতে, “গ্রামে কিছু করতে হলে স্থানীয় মানুষকে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তাঁদের কথা শুনতে হবে।”
গণ্ডগোলের পিছনে তৃণমূলের ‘সিন্ডিকেট’ রয়েছে বলে কোনও কোনও মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল। যদিও কীসের সিন্ডিকেট তা স্পষ্ট নয়। এলাকায় ঘুরে তেমন কোনও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে মানবেন্দ্রবাবুও বলেন, “আমরা ঘটনার কোনও প্রেক্ষাপট বা রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে জানতে আগ্রহী নই।” বরং প্রশাসনের সহযোগিতার উপরেই তাঁরা নির্ভর করছেন বলে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.