|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
দেখবি আর জ্বলবি
চেনা লাইন। অজানা মজার গল্প। মজার সব গ্রাফিটি নিয়ে
কে কী ভাবছেন? জানার চেষ্টা করলেন অদিতি ভাদুড়ি |
‘দেখবি আর জ্বলবি
লুচির মতো ফুলবি’
কিংবা ‘আর কত রাত একা থাকব’
কোথায় দেখেছেন বলুন তো লাইনগুলো?
কী, মনে পড়ল?
ঠিক ভেবেছেন ।
রোজের যাতায়াতের রাস্তায় লাইনগুলো মাঝে-মধ্যেই চোখে পড়ে যায় আমাদের। ব্যস্ততার মধ্যেও কিছুটা সময় এই লাইনগুলো নিয়ে ভাবতে বেশ মজা লাগে।
২৩৯ রুটের বাস কন্ডাক্টর বিল্টু যেমন বললেন, “সারাটা দিন তো কন্ডাক্টরি করেই কেটে যায়। বাড়ি সেই জয়নগর। সপ্তাহের শেষে যাই। নতুন বিয়ে করেছি। বৌ বাড়িতে একা একাই সময় কাটায়। এই লাইনটা দেখলে খালি ওর কথাই মনে হয়,” বিল্টুর মুখে কনেবৌয়ের মতো লজ্জার ঝিলিকটা বেশ লাগল।
যাদবপুর টু বেহালা, টালিগঞ্জ টু টালা। যেখান থেকেই বাসযাত্রা করুন, মজাদার কিছু চোখে পড়তে বাধ্য।
শুধু বাস নয়। অটোগুলোও কম যায় না কিছু। |
|
বেলেঘাটা-বিবাদী বাগ মিনির ভিতরে যেমন অনেক মজার অথচ কাজের কথাই লেখা রয়েছে। ‘পকেটে হাত ঢোকান ভাড়া বের করতে। পকেটমারি করতে নয়’। অথবা ‘বাড়ি থেকে বেরোতে দেরি, বাসে উঠলেই তাড়াতাড়ি।’
কেন এই ভাবে লেখেন ওঁরা? দীর্ঘদিন বেলেঘাটা রুটে মিনি চালাচ্ছেন গগন মাইতি। বললেন তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা।
“এক দিন এক প্যাসেঞ্জার তো ভাড়া না দিয়ে বাস থেকে নেমে কাট। লোকটার চাল-চলন কেমন যেন উল্টোপাল্টা। পরে হেল্পার ছেলেটা খোঁজ নিয়ে জানাল ওই লোকটা না কি এক ঝানু পকেটমার। অনেক দিন ধরেই লোকের পকেট ঝাড়ছে। সে দিন বাসে লেখাটা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিল খুব। নেমেই একেবারে পিঠটান,” হাসির চোটে গগনবাবুর কাহিল অবস্থা।
এ রকমই হাজারো হাসি মজা জড়িয়ে রয়েছে এই লাইনগুলোর সঙ্গে।
কয়েক দিন আগে চাঁদনি চক-ওয়েলিংটন রুটের একটা অটোতে উঠে নাজেহাল অবস্থায় পড়েছিল বছর কুড়ির রিমি।
“অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম সে দিন অটোর জন্য। পাই না পাই না, এমন সময় দেখা অটোর। ঝিনচ্যাক অটো। বাইরে বড় বড় করে লেখা ‘আর কত রাত একা থাকব’। ভেতরে রকমারি টুনিবাল্বের ঝিকিমিকি। আর অটোওয়ালা তো সাঙ্ঘাতিক রোম্যান্টিক মুডে ছিল,” রিমির কথায় সাসপেন্সের গন্ধ।
তো কিছু বলল না কি সে? আবেগের মাথায়?
“না না, আমি তার আগেই নেমে ভোঁ-ভাঁ। বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। অটোওয়ালাটা যদি প্রেম নিবেদন করত! কেস হয়ে যেত একদম,” হাসির দমকে কথা আটকে যায় রিমির।
এ তো গেল বাস-অটোর কথা। ট্যাক্সিও পিছিয়ে নেই দৌড়ে। |
|
কিছু দিন আগেই বিয়ে করেছে পিয়ালি আর কৌস্তভ। এ রকমই এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল ওরা।
“কৌস্তভের সঙ্গে নিউ মার্কেটের একটা রেস্তোরাঁয় খেতে যাব। একটা ট্যাক্সি পেলাম। ট্যাক্সিটার বাইরে লেখা ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’। বেশ কেতার ট্যাক্সি। ভেতরে সাইকোডেলিক লাইটস। ঠিক যেমন ডিস্কোতে হয়। আর সফট্ রোম্যান্টিক গান বাজছে সাউন্ড সিস্টেমে। আমাদের মুড একদম চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিল,” পিয়ালি হাসে।
“তবে ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া রে’ লাইনটার সঙ্গে ট্যাক্সির পরিবেশটা একদমই ম্যাচ করছিল না,” কৌস্তভ বলে এ বার। “শুধু এক জায়গাতেই যা তা রকম কেস খেলাম। ভাড়া দিয়ে নেমে দেখি একশো টাকা বেশি দিয়ে দিয়েছি,” কৌস্তভের সহাস্য উক্তি। পিয়ালি সুযোগ নেয় এ বার। “ওটা হল মুড এফেক্ট’’। সমস্বরে হেসে ওঠে ওরা।
যে কোনও গাড়িওয়ালাই কিন্তু তাদের যানবাহন নিয়ে ভীষণ রকম পজেসিভ। গাড়ির নিন্দে শুনতে একদম রাজি নয় তারা। সে কারণেই ‘বুরি নজরওয়ালে তেরা মুহ্ কালা’ লেখাটা দুর্গাপুজোর মতোই সর্বজনীন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক মজার অভিজ্ঞতা শোনালেন পাপিয়া বসু। “আমি দিল্লিতে থাকি। কলকাতায় এসে বোনের বাড়ি যাব। বাসে উঠেছি। বাস তখন সিগন্যালে থেমে। হঠাৎই বাস ড্রাইভারের সঙ্গে পাশের ট্রাক ড্রাইভারের তুমুল ঝগড়া। প্রায় হাতাহাতি হয়ে যায় আর কী! কারণ ওভারটেক করতে যাচ্ছিল দু’জন দু’জনকে। বাসচালক রেগে গিয়ে তখন ট্রাকওয়ালাকে গালি দিয়ে বলেছে এত খারাপ দেখতে ট্রাক নাকি ও কোনও দিন দেখেনি!” |
নতুন হিট্ |
• এখন লিস্টে হিট অনুপম রায়ের ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’। ‘বসে আছি পথ চেয়ে’ থেকে একেবারে হালফিলের বিবর্তন।
• ‘পাগলু, থোড়া সা করলে রোম্যান্স’-ও দারুণ কাটছে হালফিল। বিশেষ করে অল্পবয়সি অটোওয়ালারা তো এর দিওয়ানা।
• এখনকার এলপিজি অটোগুলো বেশ সাজানো গোছানো। ড্রাইভারের সিটের ওপরেই খুঁজে পেয়ে যেতে পারেন ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’। বাস্তবে ট্রাফিক সার্জেন্টরাই এদের বাপ।
• ‘বন্ধুত্ব বাড়িতে ব্যবসা গাড়িতে’। নতুন সময়ের নতুন স্লোগান।
• বাসের ভেতরেও খুঁজে পেয়ে যাবেন মন ভরানো সব গ্রাফিটি। যেমন? ‘আমরা দু’টি ভাই। টিকিটের পয়সা বাঁচাই’।
• গ্রাফিটি শুধু নয়। যে কার্টুনগুলো সঙ্গে আঁকা থাকে, সেগুলোও দারুণ মজাদার।
• লরির পেছনে লেখা ‘হাঁটলে লাভ, দৌড়োলে লস’ এখন প্রায়ই দেখা যায়। খুব কাজের কথা।
• ‘যমলা পাগলা দিওয়ানা’ নিয়েও সাংঘাতিক ক্রেজ এখন। এই লেখাটা লরিগুলোর অ্যাটিটিউডের সঙ্গে বেশ মানানসই। |
|
বাচ্চারাও কম যায় না। নূপুর পড়ান এক মন্তেসরি স্কুলে। তাঁর অভিজ্ঞতা বেশ মজার।
“খুব ছোট বাচ্চাদের পড়াতে হয়। এখন বাচ্চারা খুব ছোট থাকতেই পাকা পাকা কথা শিখে যায়। আমার সেকশনের একটা পুঁচকের ‘দেখবি আর জ্বলবি, লুচির মতো ফুলবি’ লাইনটা খুব ফেভারিট। ও আধো আধো বুলিতে যখন লাইনটা বলে, কী মজাই যে লাগে!”
দেশের যে কোনও জায়গায় গেলেই এ রকম টুকরো টুকরো মজার ঘটনার অভিজ্ঞতায় ঝুলি ভরে যায়। বললেন দেবদত্তা মৈত্র। “ফরেন ল্যাঙ্গোয়েজ পড়াতে বাইরে যেতে হয়। প্রত্যেকটা রাজ্যেরই এ ব্যাপারে নিজস্বতা দেখেছি। সিনেমার জনপ্রিয় গানের লাইনই দেখা যায় বেশি ব্যবহার হয় গ্রাফিটিগুলো লিখতে। ব্যাপারটা খুব ইন্টারেস্টিং। ফিল্ম, লিটারেচারের মতোই একটা অন্য ধরনের ‘জঁর’, অ্যান এলিমেন্ট অব পপুলার কালচার।” |
|
|
|
|
|