|
|
|
|
বাবা জ্ঞান দিয়ো না |
টি-শার্ট বাজি
কলকাতার জেন-ওয়াই এখন ‘টি শার্ট’ জ্বরে কাবু।
যে-সে টি-শার্ট হলে চলবে না। তাদের বায়নাক্কা হাজার রকম। লিখছেন শতরূপা চক্রবর্তী |
সকাল গড়িয়ে প্রায় দুপুরের দিকে। এ দিকে কলেজ যাওয়ার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে উঠে পড়ে স্বপ্নিল। সে এক হুলস্থুল কাণ্ড। আধ ঘণ্টার মধ্যে কোনও রকমে স্নান-খাওয়া সেরে ওয়ার্ড্রোব খোলে। ওর কাছে কলেজ-পোশাক মানেই ‘টি-শার্ট’। উপরন্তু ওর বায়নাক্কাও আছে ষোলো আনা। যে-সে টি-শার্ট হলে চলবে না। চাই মজার কোটেশনওয়ালা ফাঙ্কি লুকের টি-শার্ট। ঠিক যেমন ‘ওয়েক আপ সিড’-এর রণবীর কপূর পরতেন। আর তা খুঁজতে গিয়ে বাজার চষে ফেলা স্বপ্নিলের নিত্যদিনের অভ্যেস। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে জেন ওয়াই-এর ফ্যাশন স্টেটমেন্ট এখন এই ফানি টি-শার্ট। রাউন্ড-নেক, ভি-নেক কিংবা পোলো টি-শার্টের উপর লেখা মজার কোটেশন কিংবা কার্টুন-এর আকর্ষণে মাতোয়ারা টিন এজ। শুধু টিন-এজারদের কথাই বা বলি কেন, অফিস গোয়ার্সরাও বাদ যান না। কয়েক বছর ধরেই চলছে এই ট্রেন্ড। তাতে ঘাটতি পড়েনি এখনও।
কলেজ ক্যাম্পাসে গেলেই চোখে পড়বে টি-শার্ট পরা ছেলেমেয়ের ভিড়। জিনসের সঙ্গে খুব সহজেই মানিয়ে যায় টি-শার্ট। শীতের সময় এর উপরে মানানসই একটা জ্যাকেট চাপিয়ে নিলেই হল। |
|
মনের মাঝে কারণ আছে
যাদবপুরের স্নাতক স্তরের ছাত্র বিশ্ববসু জানাচ্ছেন, “আমাদের জেনারেশন মানেই ফান। আরে এই বয়সটাই তো মজা করার। তাই টি-শার্টে লেখা মজাদার কোটস সহজেই মন কেড়ে নিচ্ছে আমাদের।”
ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে চোখ কাড়ল এক কলেজ-ছাত্রী। তার অফ-হোয়াইট টি-শার্টে লেখা রয়েছে, ‘নেক্সট মুড স্যুইং: সিক্স মিনিটস।’ পাশেই তার হাত ধরে রয়েছে আর এক বন্ধুনি। তার পরনেও টি-শার্ট। রং অবশ্য অন্য। তাতে আবার লেখা, ‘ওয়ার্নিং: আই হ্যাভ অ্যান অ্যাটিটিউড অ্যান্ড আই নো হাউ টু ইউজ ইট’। কথা বলে বোঝা গেল তারা দু’জনই মনের ভাব প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছে এই অভিনব পন্থা। “এই প্রজন্ম একটু হটকে। আর আমাদের ফ্যাশনও তাই,” বলছেন দুই বন্ধুর এক জন। মনের ছবির বহিঃপ্রকাশ হিসেবে নিঃসন্দেহে এ এক বেস্ট ট্রেন্ড তো বটেই।
সিটি কলেজের ছাত্র অভিষেকের আবার কেত মারা চাইই চাই। “বন্ধুদের থেকে প্রশংসা পেতে কার না ভাল লাগে বলুন তো? টি-শার্ট কেনার সময় তাই একটু নতুনত্ব খুঁজি। সক্কলে জিজ্ঞাসা করে, কোথা থেকে কিনেছি,” বললেন অভিষেক। এক বার ভাবুন তো বন্ধুমহলে নিজের তারিফ কে না চায়? একই কথা বলছেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী রাজীব। সোম থেকে বৃহস্পতি অফিসে ফরমাল ড্রেস পরতে হয়। শুক্র-শনি দু’দিন তার থেকে রেহাই। জমিয়ে পরেন মজার মজার টি-শার্ট। সহকর্মীদের থেকে পিঠ চাপড়ানিও মেলে বেশ। নিজের একটা টি-শার্টও দেখালেনও। যাতে লেখা, ‘ভাগো, বস্ আ রহা হ্যায়!’
হরেক রঙে, নানা ঢঙে
কী নেই টি-শার্টের দুনিয়ায়? কেবল কোটেশনই নয়। প্রিন্টিং টেকনোলজির কারসাজিতে টি-শার্টে উঠে আসছে টিভি-পর্দার কার্টুন চরিত্র। পছন্দের ‘গেম’ও লেপটে থাকবে এখন আপনার অঙ্গে। আছে এথনিক লুকের টি-শার্টও। যা পরলে কলেজ ফেস্টে ভিড়ের মধ্যেও আলাদা করে চোখে পড়তে বাধ্য।
আছে ‘থিম টি-শার্ট’। স্বাধীনতা দিবসের দিন পরবেন? না কি মাদারস ডে-তে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে চাইছেন একটু অন্য ভাবে? ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে মাখোমাখো প্রেমের স্লোগানওয়ালা টি-শার্ট পরে পার্টনারকে চমকে দিতে চান? সমাধান মিলবে। রয়েছে নির্দিষ্ট দিনের জন্য বিশেষ ধরনের টি-শার্ট।
বাংলায় লেখা টি-শার্টও পাবেন। হিন্দি চাইলে তাও আছে। |
কুল ক্যাপশনস্ |
• লুক, বাট ডোন্ট টাচ।
• মাই মম ক্যান বিট আপ ইওর ড্যাড।
• টেস্ট দ্য নিউ, ক্যুইট দ্য ওল্ড!
• ঘুরব, খাব, নাচব রে!
• কে তুমি নন্দিনী, হবে কি আমার সঙ্গিনী?
• তোমাকে কোথায় দেখেছি বলো তো?
• সকলেই সকলকে আড়চোখে দ্যাখে।
• যদি বলো আড়ি, তোমাকেও ছেড়ে যেতে পারি। |
|
কোথায় পাব অরূপ-রতন
তা এই অরূপ রতনের সন্ধান কোথায় পাওয়া যাবে? চিন্তা কী? সময় নিয়ে এক দিন ঘুরে আসতে পারেন ধর্মতলার শ্রীরাম আর্কেড, নিউ মার্কেট কিংবা সিম পার্ক মলে। দামও কম। এখন অনেক অনলাইন শপিং ওয়েবসাইটেও হাজার একটা টি-শার্ট পাওয়া যায়। পছন্দ হবেই।
চাইলে মিলবে হাতে আঁকা টি-শার্টও। নিজে আঁকলে লা জবাব। না হলে অগুন্তি মানুষের সঙ্গে পা মেলান। হস্তশিল্প মেলাগুলোয়। গ্রাম-বাংলার মানুষের শৈল্পিক হাতের ছোঁয়ায় ফেব্রিকে আঁকা সেই সব টি-শার্ট পছন্দ না হয়ে যাবে কোথায়?
বাজার-চলতি টি-শার্ট পছন্দ হল না? মুষড়ে পড়বেন না প্লিজ। এখন কলকাতার অনেক শপিং মলেই টি শার্ট প্রিন্ট করানোর দোকান আছে। যেমন মন চায়, সে ভাবেই টি-শার্টের সামনে ডিজাইন করিয়ে নিতে পারেন।
এ ভাবেই টি-শার্ট হয়ে উঠুক আপনার সব সময়ের সঙ্গী। ইয়ং-এজের পরিচায়ক। |
|
|
|
|
|