মুখ্যমন্ত্রীর শিলান্যাস করা প্রকল্পের ফলক স্থাপন অনুষ্ঠানের ‘অব্যবস্থা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মঞ্চ ছাড়লেন পুরুলিয়ার তৃণমূল বিধায়ক কে পি সিংহ দেও। মঞ্চে তখন উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। মন্ত্রী এবং জেলাশাসকের সামনেই অনুষ্ঠান ঘিরে অব্যবস্থার নানা অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানালেন ওই প্রবীণ তৃণমূল বিধায়ক। তৃণমূলের ওই প্রাক্তন জেলা সভাপতির বক্তব্যে সরকারি অনুষ্ঠানে শাসকদলের মধ্যেও এ বার ‘আমরা-ওঁরা’র ছায়া দেখছেন কেউ কেউ।
পুরুলিয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকার ক্রীড়াবিদদের পুরুলিয়া শহরে থেকে অনুশীলনের জন্য ৩ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুটমুড়ায় প্রশাসনিক জনসভায় একগুচ্ছ প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পটিরও শিলান্যাস করেছিলেন। এ দিন ওই ফলক নির্মীয়মান আবাসনে বসানোর সরকারি অনুষ্ঠান ছিল। বক্তৃতা দিতে উঠে মঞ্চের সামনে কিছু ফাঁকা চেয়ার দেখে কে পি সিংহ দেও ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “এটা ক্রীড়াবিদদের আবাসন ভবন নির্মাণের অনুষ্ঠান। অথচ এখানে তাঁদেরই দেখা যাচ্ছে না। আমাকেও এই অনুষ্ঠানের খবর সময় মতো জানানো হয়নি। স্থানীয় প্রশাসক হিসেবে পুরপ্রধানকেও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এরকম ভাবে অনুষ্ঠান করলে আমাকে আর ডাকবেন না। আর এমনটা চললে আমি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হব।” সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার পরেই তিনি মঞ্চে থাকা মন্ত্রী, জেলাশাসক, পুরপ্রধান কারও সঙ্গে কথা না বলে চলে যান। বিধায়কের কথা শুনে সভাস্থল খানিক ক্ষণ নীরব হয়ে যায়। |
পরে কে পি সিংহ দেও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী সকলকে নিয়ে উন্নয়ন করার কথা বলছেন। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে পুরপ্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অনুষ্ঠানের কথা প্রাথমিক ভাবে আমাকে জানানো হলেও, আজকেই যে অনুষ্ঠান স্থির হয়েছে, সময়মতো তাও জানানো হয়নি। অব্যবস্থার মধ্যে এরকম অনুষ্ঠানকে লঘু করার কি প্রয়োজন ছিল?” তাঁর দাবি, জেকে কলেজে বৈঠক থাকায় তাড়াতাড়ি মঞ্চ ছাড়েন। পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “আমন্ত্রণ না পেলেও উন্নয়নের কাজে দূরে থাকতে পারিনি বলেই এসেছি।” শান্তিরামবাবু অবশ্য তাঁর বক্তৃতায় এ প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, “এটা সমন্বয়ের অভাবে ঘটেছে। মুখ্যমন্ত্রী চান তাঁর শিলান্যাস করা প্রকল্পগুলি যেন সময়ের মধ্যেই গড়ে ওঠে। সেই লক্ষ্যেই কাজ হচ্ছে।” জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “পূর্ত দফতর ওই ভবন নির্মাণ করছে। আমন্ত্রণের বিষয়টি ওই দফতরের নিবার্হী বাস্তুকারকে বলা হয়েছিল।” পূর্ত দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার গৌতম রায় ‘মন্তব্য করব না’ বলে বিষয়টি এড়িয়েছেন।
রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে সরকারি সভা, অনুষ্ঠানে এতদিন বিরোধীদের ডাকা হত না। তাই সরকারি অনুষ্ঠানে ‘আমরা-ওঁরা’র বিভাজন হামেশাই দেখা যায়। কিন্তু এ দিনের অনুষ্ঠানের পর এ বার তৃণমূলের নিজেদের মধ্যেই সেই বিভাজন স্পষ্ট হল বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণীন্দ্র গোপের কটাক্ষ, “তৃণমূলের ওই দুই নেতা মনে হয় ছোটবেলায় খেলাধূলা করেননি। তা না হলে ক্রীড়া-সংক্রান্ত ওই অনুষ্ঠানের বিষয়টি তাঁরা স্পোর্টিংলি নিতেন।” |