ওয়ার্ডে অসুস্থ মায়ের পাশে থাকা তরুণীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের এক স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর দু’ দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতর কেউই ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। ঘটনা। পুলিশ বা স্বাস্থ্য দফতর ব্যবস্থা না নেওয়ায় অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নকশালবাড়ির তারাবাড়ির বাসিন্দা এক মহিলা রক্তচাপ নিয়ে ২২ জানুয়ারি থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁকে দেখভালের জন্য রাতে তাঁর মেয়ে সঙ্গে থাকতেন। অভিযোগ, ২৪ জানুয়ারি রাত ১১টা নাগাদ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে বারবার বিরক্ত করতে শুরু করে অভিযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি হাসপাতালের ল্যাবরেটরি টেকনিশিয়ান এবং কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্য বলে অভিযোগ। ওই তরুণী মায়ের পাশে কম্বল গায়ে দিয়ে শুয়ে ছিলেন। অভিযুক্ত শয্যার পাশে গিয়ে কম্বল তুলে তাঁকে হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে। ওয়ার্ডের বাইরে আসতে বলে। না পেলে পরে ‘দেখে নেবে’ বলে ভয় দেখায়। বার তিনের ওই কর্মী উত্যক্ত করার পর তরুণী নার্সদের ডেকে আনেন। নার্সরা ধমক দিয়ে ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে তাড়ান।
এর পর বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে অভিযোগ। নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা পরের দিন ওই তরুণীর কাছে অভিযুক্তকে এনে ক্ষমা চাওয়ান। শনিবার হাসপাতাল থেকে মায়ের ছুটির পর ওই তরুণী পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন। নকশালবাড়ি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস মণ্ডল জানান, ওই তরুণী লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে নির্দেশ দিলে সেই মতো তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “লিখিত অভিযোগ এখনও হাতে আসেনি। তা পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” ব্লক স্বাস্থ্য দফতর জানায়, সোমবারই মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে তা পাঠানো হবে। পুলিশ জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়েই তারা ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি এবং তাঁকে ভয় দেখানো হয়েছে বলে মামলা রুজু করেছেন। অভিযুক্ত পালিয়েছে। তাকে খোঁজা হচ্ছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, তরুণী লিখিত অভিযোগ করার পরেও ব্লক বা জেলা স্বাস্থ্যকর্তারা এখনও কোনও ব্যবস্থা কেন নেননি তা তাঁরা বুঝতে পারছেন না। তাঁরা দায় এড়াতে চাইছেন। বিষয়টি চাপা দিতে তারা তৎপর হয়েছেন। ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে শো-কজ পর্যন্ত তারা করেননি। তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছে রাজু বিশ্বাস, তপন কুণ্ডুর মতো স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের নকশালবাড়ি অঞ্চল সভাপতি তপনবাবু বলেন, “কোঅর্ডিনেশন কমিটির ওই সদস্য রোগীর আত্মীয়া ওই তরুণীর শ্লীলতাহানি করেছেন। ওয়ার্ডে ঢুকে যে ভাবে ওই তরুণীকে তিনি উত্যক্ত করেছেন তা উদ্বেগের। নার্সরাও প্রথমে কিছু বলেননি। পরে তরুণী নার্সদের কাছে জানালে অভিযুক্তকে ওয়ার্ড থেকে বার করে দেন। অথচ তাকে এখনও শো-কজ পর্যন্ত করা হয়নি।” অভিযোগকারী তরুণী বলেন, “ওয়ার্ডে ঢুকে ওই ব্যক্তি বারবার আমাকে বাইরে যেতে বলছিলেন। শয্যার কাছে এসে বিরক্ত করছিলেন। এমনকী কম্বল সরিয়ে আমাকে তুলে বাইরে নিয়ে যেতে চান। পরে ক্ষমা চাইলেও আমি বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। পুলিশে বিস্তারিত অভিযোগ জানিয়েছি।” কোঅর্ডিনেশন কমিটির দার্জিলিং জেলা সভাপতি উত্তম চতুর্বেদী জানান, গত কয়েকদিন সংগঠনের সম্মেলন থাকায় তাঁরা ব্যস্ত রয়েছেন। এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন। |