কর্কট-রহস্যে নয়া সূত্র প্রবাসী বাঙালির, সঙ্গী ভারত
কটা জটিল ধাঁধাঁ। নিজেকে সব চেয়ে উন্নত প্রাণী বলে দাবি করলেও, যার রহস্য আজও সমাধান করতে পারেনি মানুষ। কিন্তু মানুষ না পারলে কী হয়েছে, সে ধাঁধাঁ নিরসন করে ফেলেছে একটা ব্যাকটেরিয়া। আর এখন প্রাণ বাঁচাতে তারই দ্বারস্থ মানুষ।
ধাঁধাঁর নাম? ক্যানসার।
সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট আনন্দমোহন চক্রবর্তী। এ গবেষণায় মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন তিনি-ই। বিশদ জানিয়ে গেলেন গবেষণার খুঁটিনাটি। বার বারই বললেন, “আমি ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করব, কখনওই ভাবিনি। মাথায় ভূতটা চাপলো একটা ব্যাকটেরিয়াকে দেখে।” হ্যাঁ, একটা ব্যাকটেরিয়া, সিউডোমনাস এরুজিনোসা। ক্যানসারের হাত থেকে বাঁচতে এরা নিজেরাই এককোষী শরীরে তৈরি করে নিজেদের ওষুধ।
আমেরিকায় সিউডোমনাস নিয়ে কাজ করতে করতে ওই ব্যাকটেরিয়ার চরিত্রটা নজরে পড়ে আনন্দমোহনবাবুর। এরা মাটিতে যেমন থাকে, তেমনই বাসা বাধে মানুষের শরীরেও। সিউডোমনাস বাসা বেঁধেছে এমনই এক রোগীর দেহে ব্যাকটেরিয়াটির ক্যানসার প্রতিরোধ ক্ষমতা নজরে আসে। এরা এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে। রাসায়নিক
আনন্দমোহন চক্রবর্তী
নাম কিউপেরোডক্সিন। ডাক নাম অ্যাজিউরিন। যা ক্যানসার কোষকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়।
তবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ যে ক্যানসার অনেকাংশে রুখতে পারে, তা বহু দিন আগেই লক্ষ করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু সেটাকে অস্ত্র করার কথা ভাবতে পারেননি তাঁরা। কারণ ব্যাকটেরিয়ার নিজস্ব বিষক্রিয়া আছে। কিন্তু উল্লেখযোগ্য ভাবে সিউডোমনাস এরুজিনোসা-এর ক্ষেত্রে এমন ক্ষতির আশঙ্কা একেবারেই কম। কারণ অ্যাজিউরিন শুধুমাত্র বেছে বেছে ক্যানসার কোষগুলোতেই ঢোকে এবং সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। স্বাভাবিক কোষগুলোর ক্ষতি করে না, জানালেন আনন্দমোহনবাবু। আর তাই সিউডোমনাসের ‘ওষুধটাকেই’ ধার নিয়ে মানুষের শরীরে প্রয়োগের স্বপ্ন দেখছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছেন প্রবীণ বিজ্ঞানী এবং তাঁর সহকর্মীরা। ‘আইএসআরএন নিউরোলজি’ পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হয়েছে।
প্রথমে আনন্দমোহনবাবুরা ইঁদুরের দেহে পরীক্ষা করেন। সফল হতে শুরু হয় মানুষের দেহে এর প্রভাব বিচার করে দেখা। সেখানেও প্রথম পর্যায়ে তাঁরা সফল। জানালেন, জীবনের শেষ লড়াই লড়ছেন, ক্যানসারে আক্রান্ত এমন ১৫ জনকে বেছে নেওয়া হয়। পরিচিত কোনও ওষুধই তখন তাঁদের কাজ দিচ্ছে না। অ্যাজিউরিন থেকে পাওয়া পেপটাইড কয়েক জনকে আংশিক এবং কয়েক জনকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে কলকাতার ক্যানসার শল্যচিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “এ ধরনের টার্গেটেড থেরাপিতে ক্যানসার প্রতিরোধ চেষ্টাকে সব সময়ই স্বাগত। কারণ, এতে শুধু ক্যানসার কোষগুলোই ধ্বংস হয়। ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা কম।” যেমন, কেমোথেরাপিতে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় রোগীর চুল উঠে যাচ্ছে, গায়ের লোম ঝরে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তা হবে না। গৌতমবাবু বলেন, “রোগী বাঁচলেই তো আর হল না। সে কেমন ভাবে বাঁচছে, সেটাও বড় কথা। যাকে বলে কোয়ালিটি অফ লাইফ।” চূড়ান্ত ফলাফল হাতে পেতে এখনও পেরোতে হবে তিন ধাপ। তা ছাড়া, শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী পড়বে, তা-ও জানা বাকি। তবে আনন্দমোহনবাবু এবং তাঁর সতীর্থদের উদ্যোগকে প্রশংসনীয় বলছেন তিনি।
গবেষণা চলছে ভারতেই। হ্যাঁ, ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে ক্যানসার নিয়ে গবেষণার কথা মাথায় এলেও, গবেষণা চলছে গুজরাতে।
গুজরাত কেন? বাংলা নয় কেন? আনন্দমোহনবাবু বললেন, “২০০৮ সালে এক বিজ্ঞান সম্মেলন উপলক্ষে গুজরাতে এসেছিলাম। সেমিনারে নিজের গবেষণা সম্পর্কে জানাই। এ সময় আলাপ হয় ‘গুজরাত বায়োটেকনোলজি মিশন’-এর দায়িত্বে থাকা এক অধিকর্তার সঙ্গে। তিনি-ই গুজরাতে এসে ওষুধ তৈরি করার প্রস্তাব দেন।” তার পর ব্যাকটেরিয়ার অস্ত্রকে ওষুধের মোড়কে আনার কর্মযজ্ঞ শুরু হয় ২০১০ সালে। গোটা বিশ্বজুড়েই ক্যানসার বিনাশে নানা গবেষণা চলছে। সে প্রসঙ্গে কৌতূকের সুরে আনন্দমোহনবাবু বললেন, “যাঁরা ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছেন, তাঁরাই যে সমাধানসূত্র খুঁজে পাবেন, এমন তো নাও হতে পারে। হতেই পারে বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ অন্য একটা দিক থেকে সমাধান হয়ে গেল কর্কট-রহস্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.