বিরোধীরা বলছে বোঝাপড়াই
মমতাকে এড়িয়ে মোর্চা নেতারা দিল্লিতে
দার্জিলিং পাহাড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানকে এড়িয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন করতে দিল্লি চলে গেলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার শীর্ষ নেতারা। রবিবার থেকে নয়াদিল্লির যন্তর-মন্তরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে ধর্নায় বসলেন তাঁরা। মোর্চা নেতারা জানিয়েছেন, ধর্না চলবে অন্তত চার দিন। এর মধ্যেই সোমবার উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধন করতে শিলিগুড়ি আসছেন মমতা। মঙ্গলবার দার্জিলিঙের ম্যালে উৎসবেরই একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা তাঁর। তার পরেও পাহাড়ে তাঁর থাকার কথা বুধবার পর্যন্ত। ফলে এই সময়ে মধ্যে তাঁর সঙ্গে মোর্চা নেতাদের সাক্ষাতের সুযোগই রইল না।
মোর্চা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার জন্যই তাঁদের নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময়ে দিল্লি যেতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও মোর্চা-বিরোধী গোর্খা লিগ, সিপিআরএম-এর মতো দলের নেতাদের অনেকের দাবি, আসলে সুকৌশলে মুখ্যমন্ত্রীকে অস্বস্তির হাত থেকে রেহাই দিতেই মোর্চার শীর্ষ নেতারা সকলেই দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তাঁদের কথায়, এখন তেলেঙ্গানা নিয়ে যা পরিস্থিতি তাতে গোর্খাল্যান্ডের দাবি না তুললে পাহাড়ে মোর্চা নেতাদের পায়ের নীচ থেকে জমি সরে যাবে। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সামনে সেই দাবি তুললে তিনি বিব্রত হবেন। মুখ্যমন্ত্রী কোনও সময়েই বাংলা ভাগ হতে দেবেন না বলে অনড়। সে ক্ষেত্রে তিনি যদি সরাসরি সে কথা ফের বলেন, তা হলে মোর্চা নেতারাও কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। মুখ্যমন্ত্রীকে এড়ানোর এই কৌশল নেওয়া হয়েছে সে কারণেই।

দিল্লির পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে রোশন গিরিরা। —নিজস্ব চিত্র
যদিও প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের কটাক্ষ, এটা কৌশল নয় বরং গোপন বোঝাপড়া। তিনি বলেন, “২০০৭ সাল থেকে পাহাড়ে যা ঘটছে সবই মোর্চা ও তৃণমূলের গোপন বোঝাপড়ার ফল। এই ঘটনাও তার ব্যতিক্রম নয়।” গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির কথাতেও একই সুর। তাঁর সন্দেহ, “মুখ্যমন্ত্রীর দল ও মোর্চা একে অন্যকে সাহায্য করতেই এই গোপন বোঝাপড়া করেছে।” তাঁর কথায়, “না হলে মোর্চা নেতারা তো মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলতে পারতেন। শীর্ষ নেতাদের কয়েক জন অন্তত এই সময়ে পাহাড়ে থাকতেই পারতেন।”
ঘটনা হল, পাহাড়ে উৎসব নিয়ে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে সরকারের একাধিক বার কথা হয়েছে। সব ঠিকঠাকই ছিল। কিন্তু ২৮ জানুয়ারি সময়সীমার মধ্যে কেন্দ্র তেলেঙ্গানা প্রশ্নে সিদ্ধান্ত জানাতে পারে বলে ধারণা তৈরি হওয়ার পরেই পরিস্থিতি বদলে যায়। ২০ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে নেমে পড়েন মোর্চা নেতারা। যে কারণে মোর্চা নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে কালিম্পং উৎসব হবে না বলে ঠিক হয়। কিন্তু পাহাড়ে উৎসব একেবারেই না হলে ২০০৭ সালে সিপিএমের যে ভাবে মুখ পুড়েছিল, সে ভাবে তৃণমূল এ বার বিব্রত হতে পারত। তাই রাতারাতি দার্জিলিঙের ম্যালে ওই উৎসব করার সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।
মোর্চা নেতাদের সঙ্গে যে তাঁদের বারবার আলোচনা হয়েছে তা স্বীকার করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও। তিনি বলেন, “আলোচনার মাধ্যমেই তো পাহাড়ের সমস্যার সমাধান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। উন্নয়নও হচ্ছে। তা এগিয়ে নিতে যেতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর।” মুখ্যমন্ত্রীর সফরকালে মোর্চা নেতাদের অনুপস্থিতি নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “যাঁরা গোপন বোঝাপড়ার অভিযোগের কথা বলছেন, তাঁরা পাহাড়ে শান্তি ফেরায় অখুশি। তাই উস্কানিমূলক কথাবার্তা বলা হচ্ছে।” এরই পাশাপাশি তাঁর মন্তব্য, “মোর্চার সকলকে উৎসবে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু মোর্চা নেতারা উৎসবে থাকবেন কি না, কোথায় কী করবেন, দিল্লিতে কেন যাবেন, তা নিয়ে আমার কিছু বলা সাজে না। এটা বলতে পারি, পাহাড়ে উৎসব হবে। সব দলকেই আমন্ত্রণ করা হয়েছে। আশা করি, পাহাড়বাসী তাতে যোগ দেবেন।” সরকারি সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর বারবার অনুরোধের জেরে সৌজন্যের খাতিরে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে জিটিএ-এর কয়েক জন পদাধিকারী উপস্থিত থাকতে পারেন বলে গুরুঙ্গ জানিয়ে দিয়েছেন।
গোপন বোঝাপড়ার অভিযোগ উড়িয়ে মোর্চা নেতাদের দাবি, ইতিমধ্যেই আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কার্শিয়াংয়ে এই দিনই সভা করেছে মোর্চা। সেখানে বক্তব্য রেখেছেন মোর্চা সভাপতির স্ত্রী আশা গুরুঙ্গও। ওই সভাতেই ছিলেন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি প্রদীপ প্রধান। তিনি পরে বলেন, “গোর্খাল্যান্ড দাবির প্রসঙ্গে কারও সঙ্গে বোঝাপড়ার কোনও প্রশ্নই নেই। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আমরা বরাবরই সরব ছিলাম।”
মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি এই দিন দিল্লি যাওয়ার পথে বাগডোগরায় বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার গোর্খাল্যান্ড। সে জন্য দিল্লির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচিতে শীর্ষ নেতাদের থাকতে হবে। এখনও যা ঠিক আছে, তাতে আমরা ৪-৫ দিন পরে ফিরব।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর সভায় তাঁরা কেউ থাকবেন না? রোশনের জবাব, “পাহাড়ে আমাদের দলের যাঁরা থাকবেন, তাঁদের কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে যেতে পারেন।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী যে ক’দিন থাকবেন সেই সময়ে মোর্চার শীর্ষ নেতারা পাহাড়ে থাকতে চাইছেন না কেন? মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। পাহাড়ের প্রশাসন রয়েছে জিটিএ-র হাতে। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কাউকে ডাকলে না-গিয়ে উপায় থাকবে না। সেটা অসৌজন্য হবে। তাই আপাতত এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা এ পর্যন্ত যত বার পাহাড়ে গিয়েছেন, মোর্চার তরফে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন। পথে গাড়ি থামিয়ে পাহাড়বাসী দিয়েছেন ফুল, মালা, খাদা (সম্মানসূচক উত্তরীয়)। এ বার পরিস্থিতি ভিন্ন। সরকারি সূত্রের খবর, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পাহাড়ের জিএনএলএফ-সহ সব দলকে উৎসবে ডাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীও বলেন, “এটা সরকারি অনুষ্ঠান। পাহাড়ের সব দলকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ডেকেছি। সকলের সহযোগিতা চেয়েছি।”
এই অবস্থায়, সোমবার বিকেলে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনের পরে সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর দার্জিলিঙের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাতে মুখ্যমন্ত্রী জোড়পাখরি কিংবা রিচমন্ড হিলে থাকতে পারেন। পর দিন, সকাল ১১টায় যাবেন ম্যাল চৌরাস্তায়, উৎসবের মঞ্চে যাবেন। সেখানে পাট্টা বিলি-সহ নানা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা।
৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত পাহাড়েই থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে এখন কনকনে ঠান্ডা। পথঘাট ঢাকা কুয়াশায়। এ ক’দিনে মমতা-মোর্চা সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয় সে দিকেই খেয়াল রাখছেন পাহাড়বাসী।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.