‘বেকসুর খালাস’ পেয়ে বাগান যেন বাউন্ডুলে
মোহনবাগান-১ (টোলগে)
ইউনাইটেড-১ (র‌্যান্টি)
পরাধ করেও পার পেয়ে গেলে যা হয়। ‘বেকসুর খালাস’ পেলে বাউন্ডুলে জীবনে ফেরত যেতে কার না ইচ্ছে করে? শতবর্ষের ক্লাবেরও কি এখন সেই দশা? গোপন সূত্রে ফেডারেশন থেকে কি তা হলে কোনও বার্তা এল যে, এ মরসুমে অবনমন থাকছে না? ও সব উঠে যাচ্ছে?
এআইএফএফ-র এক শীর্ষকর্তা অবশ্য রাতে জানালেন, অবনমন থাকছেই। দু’টো টিম উঠবে, দু’টো নামবে। পরের মরসুমে দু’টো নতুন দল আসবে ওএনজিসি আর এয়ার ইন্ডিয়ার পরিবর্তে।
তা হলে টোলগে-ডেনসনদের হাবভাবে অদ্ভুত আত্মতুষ্টি কেন? সবাই এত নিশ্চিন্ত কী ভাবে? অবনমনের অন্ধকূপে পড়ে গেলেও ক্লাবের মহাকর্তারা আবার ‘বাঁচিয়ে’ দেবেন, টিম করিম সেই আশা দেখছে না কি?
বাগান ফেরাতে দিতে হয়েছে দু’কোটি, কিন্তু ফিরিয়েও কতটা লাভ হল? বরং বাগানে নতুন ‘আগুন’ লাগার সম্ভাবনা। অবনমনের ‘আগুন’। যে সরণি ধরে এ দিনই হয়তো হাঁটতে শুরু করে দিল মোহনবাগান। হাতে পড়ে ১৩ ম্যাচ, কিন্তু অবনমন বাঁচাতে হলে তার মধ্যে জিততে হবে অন্তত ন’টা। আর বিপক্ষ কে কে? ট্রেভর মর্গ্যানের ইস্টবেঙ্গল। সুভাষ ভৌমিকের চার্চিল। আর্মান্দো কোলাসোর ডেম্পো...।
বাগান পারবে? হবে?

হাল ছেড়ো না। টোলগেকে এখন কি এ কথাই
বোঝাচ্ছেন করিম? রবিবার কল্যাণীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

পারতে গেলে জেতার ইচ্ছে লাগে, দরকার পড়ে অসীম খিদে। সেটা কোথায়? উল্টে কল্যাণীতে করিমচাচার টিমকে দেখলে মনে হবে গঙ্গাপারের ক্লাবের জেতার ইচ্ছে-টিচ্ছে আপাতত গঙ্গাবক্ষে! টোলগে ওজবে দৌড়তে পারছেন না। সত্তর মিনিটেই হাঁটুতে হাত। হাঁপাচ্ছেন। ম্যাচে সাতটা বল ধরলেন, তাতে তিন বার ইউনাইটেডের চক্রবূহ্যে খাবি খেলেন! একবারও টপকাতে পারলেন না বেলো রাজাককে। দু’টো মিস পাস, একটা মিস শট, একটা গোল। আর তা দেখেই ক্লাবের এক শীর্ষকর্তা মাঠেই করিমকে সজোরে জড়িয়ে ধরলেন। যেন ৪৯ মিনিটেই তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে!
আর নিশ্চিত!
শেষের একচল্লিশ মিনিট দশ জনে মিলে ডিফেন্স চলল। তাতেও এক গোলের ‘সম্পত্তি’ বাঁচানো তো গেলই না, বরং লজ্জার অধ্যায় জুড়ে গেল। জুড়লেন নির্মল ছেত্রী। ইউনাইটেডের গোল শোধ তাঁর আত্মঘাতী শেষ টাচে। অন্তিমলগ্নে মোহন-মাঝমাঠে বল হোল্ড করে সময় কাটানোর ঝুঁকি নিয়েছিলেন সাবিথ। যা কেড়ে নিয়ে সবুজ-মেরুন বক্সে পাঠিয়ে দিলেন তুলুঙ্গা। সেই বলে র্যান্টির আপাত-নিরীহ শট গোলপোস্টের বাইরে যাচ্ছিল। অদ্ভুত ‘ক্ষিপ্রতা’য় সেটাকে জালে জড়ালেন নির্মল! এ মরসুমে মোহনবাগান প্রথমবার আত্মঘাতী গোল খেলেও, নির্মলের ডিকশনারিতে ‘আত্মঘাতী’ শব্দটা নতুন নয়! বরং পরিচিত। করিমের অবশ্য যুক্তি, “ফুটবলাররা খুব চাপে ছিল। দেড় মাস না খেলে খেলে ওরা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে।” কিন্তু সময় যা, তাতে ন্যক্কারজনক গোল খাওয়ার মতো ‘বিলাসিতা’ চলবে তো?
মোহন-অঙ্ক
প্রত্যাবর্তনের পর
• ৩ ম্যাচে পয়েন্ট ২।
• হাতে ম্যাচ ১৩।
• এর মধ্যে কলকাতার বাইরে ম্যাচ তিন। দু’টো গোয়ায়। একটা সিকিমে।
• পরের দুই ম্যাচ ঘরের মাঠে ১ ফেব্রুয়ারি ওএনজিসি এবং ৯ ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গল। তারপরে ৩৪ দিনের বিশ্রাম।
• বাকি এগারো ম্যাচের মধ্যে দু’ বার চার্চিল ব্রাদার্স। খেলতে হবে ডেম্পো, পুণে এফসি-র সঙ্গেও।
• করিমের অঙ্ক অনুযায়ী, অবনমন বাঁচাতে জিততে হবে কমপক্ষে ন’টি ম্যাচ।

কল্যাণী স্টেডিয়ামে যে গুটিকয় মোহন-সমর্থককে দেখা গেল, তাঁরা অধিকাংশই কলকাতার। রবিবারের বাজার, ছুটির দিন, তবু এসেছিলেন হৃদয়ের টিমের জয় দেখতে। মাঠ ফেরত তাঁদের মুখে আফশোস, হতাশার টুকরো-টাকরা। “আর হল না,”...‘‘করিম-ফরিম চলে না...বাবলুকে আনো...’’ গোছের মন্তব্য। স্বাভাবিক। প্রত্যাবর্তনের পরে করিমের দল যে তিনটে ম্যাচ খেলল, তাতে রক্তচাপের মাত্রা বাড়বে বই কমবে না।
সমস্যা কোথায় কোথায়?
দলে কোনও ভারসাম্য নেই। রক্ষণের দুর্দশা তো ভোগাচ্ছিলই, এখন মাঝমাঠের খামখেয়ালিপনাও চোখে দেখা যাচ্ছে না। ডেনসন-মণীশ ভার্গবরা ধরতে পারছেন না কোথায় জায়গা নিতে হবে। দুই সাইডহাফ নবি-স্নেহাশিসও যেন একই জার্সি গায়ে দু’টো আলাদা টিমের হয়ে খেলছেন! এমনই জঘন্য বোঝাপড়া। টোলগে ম্যাচের পর আফসোস করছিলেন, “গোল করে আর কী লাভ হল!”
একা নবি-ই বরাবরের মতো নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন। গোলের রাস্তাও তাঁরই সৃষ্টি। প্রথমার্ধে বাগানের নতুন বিদেশি মিডিও কুইনটন জেকবসও ভরসা জোগালেন। কিন্তু তিনি ডগলাস নন। ভিনসেন্টের মতো ‘গোলকানা’ স্ট্রাইকার ইউনাইটেডে না থাকলে এ দিন তিন পয়েন্ট নিয়ে এলকো সাতোরি ফিরতেন না, কে বুক ঠুকে বলবে?
আর মাঠ নয়, ছিটেফোঁটা যা অক্সিজেনের খোঁজ পাওয়া গেল, সেটা মাঠের বাইরে। খেলা দেখতে এসেছিলেন ওডাফা ওকোলি। টিমের হাল দেখে মুখে কুলুপ, কিন্তু পরের ম্যাচে মাঠে নামবেন। স্তুপাকৃত ‘কাঁটা’র মধ্যে বাগানের একমাত্র আশার ‘গোলাপ’।

শেষ চারে বাগান
সিএবি-র স্থানীয় সিনিয়র নকআউট টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠল মোহনবাগান। রবিবার কোয়ার্টার ফাইনালে তারা পাইকপাড়া স্পোর্টিংকে হারাল ৬ উইকেটে। প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ ওভারে পাইকপাড়া তোলে ১৭৫-৮। মোহনবাগানের সঞ্জীব সান্যাল চার উইকেট পান (৪-২৬)। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২৮ ওভারের মধ্যে ম্যাচ শেষ করে দেয় মোহনবাগান। মাত্র ৩৬ বলে ৫৮ করে যান দেবব্রত দাস। শুভময় দাস করেন ৩৪। অরিন্দম ঘোষ (৩৩) এবং সৌরাশিস লাহিড়ি (২৫) অপরাজিত থেকে যান।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.