হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ চৌটালা সপুত্র দশ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত। তাঁহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বুনিয়াদি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতিতে লিপ্ত হওয়ার। দুর্নীতির দায়ে রাজনীতিকদের, বিশেষত মন্ত্রী-নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড়াইবার দৃষ্টান্ত এ দেশে খুব বেশি নয়। লালুপ্রসাদ যাদব, জয়রাম জয়ললিতা, মায়াবতী কিংবা মুলায়ম সিংহ যাদবদের মতো যাঁহারা অভিযুক্ত হইয়াছেন, তাঁহাদেরও কাহারও হাজতবাস হয় নাই। ‘জেলের ঘানি টানা’ বলিতে যাহা বুঝায়, অধিকাংশ রাজনীতিকই তাহা হইতে অব্যাহতি পাইয়া গিয়াছেন। কেবল কংগ্রেসের টেলিকম মন্ত্রী সুখ রাম, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার গুরুজি শিবু সোরেনকে কিছু কাল দণ্ডিত হইয়া হাজতবাস করিতে হয়। সেই হিসাবে হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের (আইএনএলডি) নেতা ওমপ্রকাশ চৌটালার বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া এবং দশ বছরের সাজা পাওয়ার ঘটনা তাৎপর্যপূর্ণ।
পুরানো নজির হইতে মনে হয়, চৌটালাকেও দণ্ডের পুরা মেয়াদ কারাগারে থাকিতে হইবে না। উচ্চতর আদালতের পুনর্বিচার তাঁহার শাস্তি হ্রাস করিয়া দিবে। নতুবা সাক্ষী ও সাক্ষ্যের অভাবে তিনি রেহাই পাইয়া যাইবেন। দশকের পর দশক কাটিয়া গেলেও লালুপ্রসাদ যাদব বা জয়ললিতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির রোমহর্ষক মামলাগুলির অদ্যাবধি নিষ্পত্তিই হইল না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক দেশব্যাপী আন্দোলনের মূলে ছিল জনসাধারণ তথা নাগরিক সমাজের এই ধারণা যে, বর্তমান শাসনব্যবস্থার সংস্কার না হইলে দেশের সম্পদ লুঠ করার রাজনৈতিক প্রবণতা বন্ধ হইবে না। জনলোকপাল বিলের দাবিতে আন্দোলনের পিছনেও ছিল সেই ধারণা, চলতি শাসনপ্রণালী সম্পর্কে সেই অবিশ্বাস। সরকারি উচ্চ পদে আসীন থাকিলে, মন্ত্রী, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বা পদস্থ আমলা হইলে জনসাধারণের সম্পত্তি লুঠ করিয়া সহজেই পার পাওয়া যায়, চোখের সামনে, দিনের-পর-দিন ইহা প্রত্যক্ষ করিতে-করিতে জনগণের আস্থা ও ভরসা টলিয়া গিয়াছে।
চৌটালার অনুগামীরা অবশ্যই আদালতে বোমা ছুঁড়িয়া, ইট-পাটকেল মারিয়া বিক্ষোভ জানাইয়াছেন। অতীতে সমর্থকদের দিয়া এ ভাবে সাংবিধানিক আদালতের রায় খারিজ করার অপপ্রয়াসকে ‘জনতার আদালতের রায়’ হিসাবে শংসাপত্র দিয়া নন্দিত করা হইয়াছে। যেন জনপ্রিয়তা দুর্নীতিপরায়ণতার বিরুদ্ধেও রক্ষাকবচ। কিন্তু গণতান্ত্রিক আইনব্যবস্থায় এ ধরনের স্বৈরাচারের কোনও স্থান নাই। চৌটালা ও তাঁহার পুত্র সহ অন্য দণ্ডিতদের কেহ আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হইতে পারিবেন না। প্রার্থী না-হইলে ভোটে জেতার সুযোগও নাই, বিধায়ক/সাংসদ হওয়া দূরস্থান। তবে ভারত এক অদ্ভুত গণতন্ত্রও বটে। এখানে চৌর্যবৃত্তি, খুন, ধর্ষণের অপরাধে অভিযুক্ত রাজনীতিকদেরও সমাজে অনুগামী জুটিয়া যায়। ওমপ্রকাশ চৌটালারা তাই নির্বাসিত না হইয়া চমকপ্রদ প্রত্যাবর্তনও ঘটান। |