|
|
|
|
তাতছে জঙ্গলমহলও |
অরবিন্দের নেতৃত্বে গুছিয়ে উঠছে মাওবাদীরা |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
লাতেহারের মাওবাদী হামলা নতুন করে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে।
ঝাড়খণ্ড, বিহার, বাংলা, ওড়িশা পূর্ব ভারতের এই চারটি রাজ্যে গত এক বছরে মাওবাদী হামলা অনেকটা কমে আসায় স্বস্তিতে ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু লাতেহারের ঘটনা সে আত্মবিশ্বাসের ভিত নড়িয়ে দিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সিআরপি-র উপর যে হামলা হয়, তার মাথা ছিলেন অরবিন্দজি। আদতে বিহারের ডেহরি-অন-শোনের বাসিন্দা দেবকুমার সিংহ ওরফে অরবিন্দ বর্তমানে মাওবাদীদের স্পেশাল এরিয়া মিলিটারি কমিশন (বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তর ছত্তীসগঢ়)-এর প্রধান। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে কিষেণজির মৃত্যু ও পুলিশের লাগাতার ধরপাকড়ে গত এক-দেড় বছর ধরে পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে দ্রুত জনভিত্তি হারাচ্ছিল মাওবাদীরা। কিষেণজির মৃত্যুর পর ওই রাজ্যগুলিতে সংগঠন চাঙ্গা করার দায়িত্ব দেওয়া হয় অরবিন্দকে। মন্ত্রকের বক্তব্য, অরবিন্দের নেতৃত্বে মাওবাদীরা যে অনেকটা গুছিয়ে উঠতে পেরেছে, তার প্রমাণ এই লাতেহারের হামলা। ওই ঘটনায় সুকৌশলে সিআরপি জওয়ানদের জঙ্গলে ডেকে এনে হামলা করা হয়েছে। তার পরে যে ভাবে মৃত সিআরপি-র শরীরে বিস্ফোরক (আইইডি) পুরে দেওয়া হয়েছিল, তার পিছনে অত্যাধুনিক কারিগরি ও দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণ রয়েছে বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।
গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদী হামলায় এক জনেরও মৃত্যু হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি জঙ্গলমহলের যুবকরা ফের মাওবাদীদের অ্যাকশন স্কোয়াডে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। তারই মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ-বিহার-ঝাড়খণ্ড সীমানায় আরবিন্দজির সক্রিয়তায় এই শান্তি কত দিন থাকবে, তা এখন চিন্তায় ফেলেছে গোয়েন্দাদের।
লাতেহারের ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা মাওবাদীদের কোয়েল-শঙ্খ কমিটির নেতা প্রভাত মোচিকে রাঁচি থেকে গ্রেফতার করে। তাঁকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, লাতেহার, চাতরা, পালামৌ প্রভৃতি জেলায় নিজের প্রভাব বাড়াচ্ছে অরবিন্দের নেতৃত্বে মাওবাদীরা। প্রায় সাতশো মাওবাদী ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি ওই এলাকাগুলিতে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পরিকল্পনামাফিক আঘাত হানার সিদ্ধান্ত নেয় মাওবাদীরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, “গ্রামবাসীদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক এখন অনেক ঘনিষ্ঠ। মাওবাদীরা যেখানেই যাচ্ছিল, নিরাপত্তা রক্ষীরাও তাদের পিছু পিছু সেখানে পৌঁছে যাচ্ছিল। সেই ফাঁস আলগা করার একটা চেষ্টা তো রয়েছেই, পাশাপাশি ক্যাডারদের চাঙ্গা করতেই লাতেহারের হামলা চালায় মাওবাদীরা।” তবে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশকে চমকে দিয়েছে নতুন একটি তথ্য। অরবিন্দের দলে প্রায় ৭০টি প্রশিক্ষিত ঘোড়া রয়েছে বলে জেনেছেন গোয়েন্দারা। এর আগে বিহার-নেপাল সীমান্তে মাওবাদীদের ঘোড়া ব্যবহারের কথা জানা গেলেও ঝাড়খণ্ড এলাকায় ঘোড়ার এত বহুল ব্যবহার বিস্মিত করেছে গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দাদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে মানববোমার বিষয়টিও। লাতেহারে নিহত সিআরপি জওয়ান বাবুলাল পটেলের শরীরে অস্ত্রোপচার করে বিস্ফোরক ভরে দিয়েছিল মাওবাদীরা। তা না ফাটলেও পুলিশের ধারণা, হাসপাতালে ময়নাতদন্তের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আরও ক্ষয়ক্ষতি করা ছিল মাওবাদীরা উদ্দেশ্য। মাওবাদীদের মুখপাত্র তুফান অবশ্য জানান, “পুলিশ মিথ্যা বলছে। হাসপতাল আমাদের নিশানা ছিল না। মৃত সেনার দেহ যে হেলিকপ্টারে করে রাঁচি নিয়ে যাওয়া হয়, তা উড়ানোর জন্যই দেহটিতে বিস্ফোরক ভরা হয়। কিন্তু একটি টাইমারের সার্কিট অকেজো হয়ে যাওয়ায় তা করা যায়নি।” তদন্তে জানা গিয়েছে, মানববোমা হিসাবে প্রথম বার বাবুলালের দেহকে ব্যবহার করার আগে অন্তত ছ’মাস এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছে মাওবাদীরা। গয়া ও চক্রধরপুর এলাকায় মাওবাদীদের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ একটি দল ওই কাজে ছাগল ও কুকুরের মৃতদেহে বিস্ফোরক পুরে পরীক্ষা চালিয়েছে। অস্ত্রোপচার ও সেলাইয়ের কাজে সংশ্লিষ্ট এলাকার কম্পাউন্ডারেরা সাহায্য করেছিল বলে খবর পেয়েছে পুলিশ। তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে। |
|
|
|
|
|