|
|
|
|
কুম্ভের পরশে ভাবমূর্তি উদ্ধারে মরিয়া অখিলেশ |
অগ্নি রায় • নয়াদিল্লি |
কুম্ভের ‘অমৃত’কে কাজে লাগিয়ে অপশাসন ও গোষ্ঠী সংঘর্ষের অভিযোগে কোণঠাসা অখিলেশ সিংহ যাদবের সরকার রাজ্যের সার্বিক ভাবমূর্তি উদ্ধারের
জন্য মরিয়া।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই ধর্মসমাগমের সুর যাতে কোনও ভাবেই কেটে না যায়, সে জন্য এলাহাবাদে চব্বিশ ঘণ্টা সতর্ক পাহারায় রয়েছেন প্রায় তিরিশ হাজার রাজ্য সরকারি কর্মী এবং পঁচিশ হাজার পুলিশ। সারাক্ষণ ব্যস্ত মিডিয়া সেন্টার। এ মাসের ১৪ তারিখ মকরসংক্রান্তির স্নান দিয়ে শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা। শেষ হবে ১০ মার্চ। প্রায় দু’মাস ধরে চলা এই মহামেলার জন্য তরুণ মুখ্যমন্ত্রী বেশ কিছু দিন আগে থেকেই রাজ্যের আমলাদের কয়েক দফা নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন। যার মধ্যে প্রধানতম হল, মেলা চলাকালীন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, গোটা বিশ্ব এই মেলার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। উপস্থিত প্রায় এক লক্ষ বিদেশি অতিথি। এমন কোনও ঘটনা যেন না ঘটে, যাতে দেশ তথা বিশ্বের দরবারে মুখ থুবড়ে পড়ে রাজ্যের ভাবমূর্তি। |
|
কুম্ভে স্নান সেরে প্রার্থনা সংখ্যালঘুদের। —নিজস্ব চিত্র |
অখিলেশের এই উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক। তাঁর মুখ্যমন্ত্রিত্বের এক বছর পার হতে চলল। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে এক ডজনেরও বেশি ছোটবড় গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে গিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ যে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর উত্তরপ্রদেশ সম্পর্কে সম্প্রতি একটি বিশেষ রিপোর্ট পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, রাজ্যের অবস্থা বিপজ্জনক। মথুরা, বরেলী, মিরাট, লখনউ এমনকী ইলাহাবাদেও ঘটে চলেছে একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা। কেন্দ্রীয় রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রায় প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই পাড়ার ছোটখাটো অসহিষ্ণুতা থেকে বড় মাপের হিংসার ঘটনা ছড়িয়ে পড়ছে গোটা জেলায়, শহরে।
এর মধ্যেই কুম্ভমেলায় এক কোটি পুণ্যার্থীর সমাবেশ। প্রয়াগের আশেপাশে হাজার হাজার তাঁবুর আনাচে কানাচে শুধু নয়, গোটা এলাহাবাদ শহরই নিরাপত্তার বজ্র আঁটুনিতে মোড়া। শহর বদলে গিয়েছে নিশ্ছিদ্র দুর্গে। শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা নয়, সমাজবাদী পার্টি এ বারের কুম্ভে এক অভিনব পদক্ষেপ করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বেশ কিছু সংখ্যালঘু দলীয় কর্মী এসে এ বার স্নান করেছেন সঙ্গমে। বরেলী থেকে আসা আলতাফ হুসেন যেমন গঙ্গায় ডুব দিয়ে উঠে বললেন, “এই সঙ্গম ভারতের সনাতন ঐতিহ্যের অংশ। এক ভারতীয় হিসেবে ধর্মের ঊর্দ্ধে উঠে এখানে এসেছি।” এক মত তাঁর সঙ্গী সিকান্দর খান, হুমায়ুন সিদ্দিকরাও। সবাই-ই জানাচ্ছেন যে, তাঁরা ‘নেতাজির’ (মুলায়ম সিংহ যাদব) দলে কাজ করেন।
নিরাপত্তার সমস্যা হতে পারে বলেই অখিলেশ নিজে প্রয়াগের ধার মাড়াচ্ছেন না। প্রত্যেক দিন লাল সড়কের আন্তর্জাতিক মিডিয়া সেন্টারে তাঁর তরফে সাংবাদিক বৈঠক করছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব, তথ্যসচিবরা। তুলে ধরছেন সরকারের প্রস্তুতি-পরিকল্পনা। দু’লক্ষ হেক্টরের বিশাল এই দেবভূমিকে ১৪টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। কল্পবাসীদের জন্য গড়া হয়েছে ৭ লক্ষ তাঁবু। প্রায় এক লক্ষ বিদেশি অতিথির জন্য খোলা হয়েছে ‘ফরেন রেসিডেন্ট রেজিস্ট্রেশন’ অফিস।
একটি মেলা যে কী ভাবে জাগিয়ে দিতে পারে একটি রাজ্যকে, তা এই কুম্ভ প্রমাণ করেছে। অ্যাসোচেমের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, মহাকুম্ভ প্রায় বারো হাজার কোটি টাকার ব্যবসার সুযোগ এনে দিয়েছে এখানে। কর্মসংস্থান করেছে সাড়ে ছ’লাখ মানুষের। পর্যটন থেকে বিমান পরিষেবা, সড়ক পরিকাঠামো থেকে পরিবেশে প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সহায়তা সর্বত্রই যেন সাফল্যের বান ডাকছে। সেটাই সুযোগ। এক বছরেই কিছুটা মলিন হওয়া অখিলেশ যাদবের সামনে ভাবমূর্তি চাঙ্গা করার। সহায় ‘ব্র্যান্ড কুম্ভ’। |
|
|
|
|
|