দলিত দুর্নীতি নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্কে আশিস নন্দী
ছাড়ালে না ছাড়ে কী করিব তারে, সেই পুরাতন বিতর্ক!
শুরু থেকেই জিত থায়িল-এর পুরস্কার পাওয়া থেকে শুরু করে পাকিস্তানি লেখকদের আসা নিয়ে হরেক বিতর্ক তাড়া করছিল সাহিত্য উৎসবকে। শেষ দিকে তা এগিয়ে গেল আরও দূর! দলিতদের বিরুদ্ধে জাতিবিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর দায়ে প্রজাতন্ত্র দিবসের বিকেলে জয়পুরের আদর্শনগর থানায় সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন রাজস্থানের ‘ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস, এসসি, এসটি অ্যান্ড মাইনরিটিজ’-এর সভাপতি রাজপাল মীনা। উৎসবের প্রযোজক সঞ্জয় রায়ের নামেও এফআইআর হয়েছে। পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার গিররাজ মীনা জানাচ্ছেন, অনুষ্ঠানটির ভিডিও ফুটেজ চেয়ে পাঠানো হচ্ছে।
জয়পুরের আলোচনা
সভায়। —নিজস্ব চিত্র
রাজনীতির কারবারিরা যথারীতি উত্তেজিত। দিল্লিতে মায়াবতী বলেছেন, আশিস নন্দীকে অবিলম্বে গ্রেফতার করা উচিত। লোকজনশক্তি দলের নেতা রামবিলাস পাসোয়ান বলেছেন, অবিলম্বে ওই সমাজবিজ্ঞানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আন্দোলনে নামবেন। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌত বলেছেন, ‘‘আশিস যা বলেছেন, মানসিক ভারসাম্য না খোয়ালে কেউ তা বলবে না।’’
আশিস শনিবার রাতেই জয়পুর ছেড়েছেন। রবিবার সকালে দিল্লি থেকে ফোনে দুঃখ করলেন, ‘‘ক্ষমতাহীনদের হয়েই কথা বলে গেলাম। তার পরও এই?’’ ঘটনার সূত্রপাত প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে ‘রিপাবলিক অফ আইডিয়াজ’ নামে এক অধিবেশনে। তরুণ তেজপালের প্রশ্নের উত্তরে আশিস বলেন, দুর্নীতি এমন একটি শক্তি, যা জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলকে সমান করে দেয়। তফসিলি জাতি, উপজাতিরা এতটাই বঞ্চিত যে সুযোগ পেলে দুর্নীতির সুযোগ তাঁরা নেবেনই! মধু কোড়া তাই উপজাতি নেতা হয়েও কয়েকশো কোটির সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেন। বাংলার কথাও টানেন তিনি, ‘‘গত একশো বছরে কোনও তফসিলি জাতি, উপজাতি বা পিছড়ে বর্গের নেতা ক্ষমতা পাননি। পশ্চিমবঙ্গে তাই দুর্নীতি সবচেয়ে কম।’’
এর পরই গন্ডগোল শুরু। গায়ে চাদর ও মাথায় হনুমান টুপি পরে প্রায় দেড়শো সমর্থক নিয়ে ডিগ্গি প্রাসাদে হাজির হয়ে গিয়েছেন দোসা অঞ্চলের নির্দল সাংসদ কিরোরী লাল মীনা। দুই মহিলা-পুলিশ তাঁকে চিনতে না পেরে আইডেন্টিটি কার্ড দেখতে চান। সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার, কথা-কাটাকাটি। “এখানে মেয়েরা বসে মদ খায়। আর আমি সাধারণ পোশাকে এসেছি বলে বাধা দেওয়া হচ্ছে?” পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনেই হুঙ্কার দিতে থাকেন সাংসদ, “গত বার সলমন রুশদিকে আসতে দেওয়া হয়নি। এ বার আশিস নন্দী আমাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দিচ্ছেন। এ সব বরদাস্ত করা হবে না।” রাস্তায় তত ক্ষণে জড়ো হয়ে গিয়েছে মীনা সম্প্রদায়ের একশো মানুষ, ‘আশিস নন্দী মুর্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিচ্ছে তারা।
আশিস বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, তাঁর কথায় কেউ আহত হয়ে থাকলে তিনি দুঃখিত। “তরুণ তেজপালের প্রশ্নের উত্তরে আমি শুধু বলেছিলাম, পিছড়ে বর্গের দুর্নীতিটাই আমাদের চোখে বড় হয়। আমি যদি রিচার্ড সোরাবজির ছেলেকে হার্ভার্ডে আর রিচার্ড আমার মেয়েকে অক্সফোর্ডে পাঠায়, কেউ দুর্নীতি বলবে না। বলবে মেধার জয়। কিন্তু পিছড়ে বর্গ করলেই বলা হবে দুর্নীতি।’’ ক্ষমা চাইছেন তা হলে? ‘‘একেবারেই নয়। দুর্নীতি এখন ভারতীয় গণতন্ত্রে ইকুয়ালাইজিং ফোর্স। কিন্তু কথাটা বিকৃত করে বলা হল, আমি দলিতদের দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর বলেছি!’’ রাগ পড়ছে না তাঁর।
রূপ কানওয়ার সতী হওয়ার পর আশিস লিখেছিলেন, সতীদাহ কোনও দিনই প্রথা ছিল না। উনিশ শতকে কলকাতা ও শহরাঞ্চলে তার প্রকোপ বেড়েছিল। আশিস সতীদাহের সমর্থক বলে রটিয়ে সে বারও হইচই হয়েছিল। “গুজরাতে হিন্দুত্ব-রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য নরেন্দ্র মোদী মামলা করেছিলেন, সেই মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টে। এ বার দলিত রাজনীতিও একই ভঙ্গিতে ব্যবহার করল আমাকে,” বললেন আশিস।
এই বছরের শেষে রাজস্থানে বিধানসভা ভোট। পিছড়ে বর্গের মীনা সম্প্রদায়ের নেতা কিরোরীলাল একদা বসুন্ধরা রাজে-র মন্ত্রিসভায় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার পর বিজেপি ছেড়ে নির্দল। কিরোরীলালের স্ত্রী গোলমা দেবীও নির্দল হিসেবে জিতেছিলেন। খাদি ও গ্রামোদ্যোগ দফতরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনিও গত বছর পদত্যাগ করেন। আপাতত মায়াবতীর প্রেরণায় কিরোরীলাল এখন সস্ত্রীক রাজস্থানে কংগ্রেস ও বিজেপি-বিরোধী তৃতীয় ফ্রন্ট শুরুর চেষ্টায়। নিম্নবর্গের রাজনীতি তা হলে উচ্চবর্গের ভাষাতেই কথা বলে? “সবাই নয়। নিজেকে নিম্নবর্গের নেতা হিসাবে দাবি করে ক্ষমতা পেতে চান যাঁরা, এ সব তাঁদের কীর্তি,” জানালেন ‘রিটার্ন ফ্রম এগজাইল’-এর লেখক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.