মমতা, এখানে আপনি থাকতে পারতেন
কলকাতার আলো কেড়ে আগরায় উজ্জ্বল সমাবেশ
তে পারত বাংলার মুকুটে পালক। কিন্তু হেলায় হারানো সেই ধন চলে গেল উত্তরপ্রদেশে। রবিবার রাতে আগরায় যখন জ্বলে উঠল শিল্প সম্মেলন ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’-এর আলো, তখন যেন আরও অন্ধকারে ডুবল এ রাজ্যের শিল্পচিত্র।
তৃণমূল কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিক থাকাকালীন, ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী আনন্দ শর্মা জানিয়েছিলেন, তাঁর মন্ত্রক এবং বণিকসভা কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক শিল্প সম্মেলন হবে কলকাতায়। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই কংগ্রেস-তৃণমূল বিচ্ছেদ খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রশ্নকে সামনে রেখে। ২০১২-র ২১ সেপ্টেম্বর ইউপিএ ছাড়ল তৃণমূল। আর ২৬ তারিখ আনন্দ শর্মা জানিয়ে দিলেন, কলকাতায় ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ করা সম্ভব নয়। কারণ? শর্মার কথায়, “যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সেখানে বিদেশি লগ্নিকারীদের নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিতে পারে না কেন্দ্র।” সুতরাং সম্মেলন গেল আগরায়। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স-সহ ৪৫টি দেশের লগ্নিকারীদের উপস্থিতিতে যা চলবে ২৯শে পর্যন্ত।
শিল্প মহলের একাংশের মতে, ‘গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’ আয়োজন করতে পারলে আন্তর্জাতিক শিল্প মানচিত্রে নিজের উপস্থিতি ঘোষণা করার একটা সুযোগ পেত পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্য সম্পর্কে একটা আগ্রহ তৈরি হতে পারত লগ্নিকারীদের। রাজ্যের বিভিন্ন বণিকসভার প্রাক্তন কর্তা হর্ষ ঝা-র মতে, “এই গ্লোবাল সামিট কলকাতায় হলে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গও বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে নিজেকে তুলে ধরার সুযোগ পেত।”
আগরায় শিল্প সম্মেলনে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। ছবি: পিটিআই
যে সুযোগটা আজ কাজে লাগালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। তৃণমূলের মতো তাঁর দলও খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধী। কিন্তু সেই বিরোধিতাকে তিনি চরম সংঘাতের জায়গায় নিয়ে যাননি। আজ শিল্পপতিদের উদার আহ্বান জানিয়ে তিনি বললেন, “লগ্নি টানার লক্ষ্যেই আমরা নীতি তৈরি করব। অফিসারেরা আপনাদের সহায়তা করবেন। আপনারা আমাদের শরিক হলে সেটা যাতে ফলপ্রসূ হয়, তা সুনিশ্চিত করব।”
কিন্তু কলকাতায় শিল্প সম্মেলন হলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা তাকে কাজে লাগাতে পারতেন, তা নিয়ে সন্দিহান শিল্প মহলের একটা অংশ। তাঁদের মতে, মমতা শিল্প চাইছেন। কিন্তু শিল্প পেতে গেলে যা যা করতে হয়, তা করছেন না। সেখানে তিনি নিজের জেদ আঁকড়ে রয়েছেন। সেই জেদের জন্যই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ তিনি করবেন না। জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন তুলে দেবেন না। ইনফোসিসকে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের তকমা দেবেন না। শিল্প মহল বলছে, এই সব জেদ না-ছাড়লে এ রাজ্যের ব্যাপারে উৎসাহী হবেন না লগ্নিকারীরা। পশ্চিমবঙ্গমুখো হওয়ার আগে তাঁরা বুঝে নিতে চান, সরকার কতটা আন্তরিক।
মমতার তাগিদটা শিল্পপতিরা আরও বেশি করে দেখতে চাইবেন বলেই মনে করছেন শিল্প মহলের প্রতিনিধিরা। কারণ, বিরোধী নেত্রী হিসেবে তাঁর শিল্প-বিরোধী ভাবমূর্তি। এক বণিকসভার মুখপাত্রের কথায়, “শিল্প নিয়ে ভাবমূর্তির জোরেই এই সম্মেলন নিজের রাজ্যে টেনে নিয়ে যেতে পারলেন অখিলেশ। বিরোধী দলে থাকার সময়েও তাঁর শিল্প-বিরোধী ভাবমূর্তি ছিল না। কিন্তু সিঙ্গুরের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতাকে শিল্পের জন্য অনেক বেশি প্রচার করতে হবে।”
এখানে তেমন আকর্ষণীয় বলার মতো কিছু কি আছে?
আমরা কি জানি, আমাদের শিল্পনীতি কী?

কল্লোল দত্ত, প্রেসিডেন্ট, বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স

শিল্পপতিরা বুঝতে পারছেন না, এ
রাজ্যে এসে কী হবে! তাঁরা কি
পাগলামি দেখতে আসবেন!

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী
এই আস্থার অভাবের কারণেই দিল্লিতে মমতার ডাকা শিল্প সম্মেলনে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিরা কেউ আসেননি। হলদিয়ায় ‘বেঙ্গল লিড্স’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে শিল্পনীতি ঘোষণা করার কথা আগাম বলেও শেষ পর্যন্ত তা করে উঠতে পারেনি রাজ্য। এমনকী, আগামী মাসে মুম্বইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর শিল্প সম্মেলনও স্থগিত রাখা হয়েছে। সরকারি সূত্রের মতে, শিল্পপতিদের সময় না মেলাতেই সম্মেলন পিছিয়ে দিতে হয়েছে। যদিও অনেকের মতে, রাজ্যে শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহ থাকার ফলেই শিল্প সম্মেলনে যোগ দিতে উৎসাহী নন লগ্নিকারীরা।
শিল্প মহল যেমন হতাশ, তেমনই ক্রমশ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে বিরোধীরা। আজই বারুইপুরে এক জনসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা সরকার থেকে চলে যাওয়ার পর একটাও নতুন শিল্প রাজ্যে আসেনি। শিল্পপতিরা বুঝতে পারছেন না, এ রাজ্যে এসে কী হবে! তাঁরা কি পাগলামি দেখতে আসবেন!” পাশাপাশি, শিল্পতালুকে শাসক দলের গুন্ডামি, তথা সম্প্রতি হলদিয়া বন্দর থেকে এবিজি বিতাড়নের প্রতি ইঙ্গিত করে বুদ্ধবাবুর মন্তব্য,“এ রাজ্যে যাঁরা কারখানা করেছেন, তাঁরাও ভয়ে-ভয়ে রয়েছেন।”
এমন তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন শিল্প মহলের অনেকেও। বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্সের প্রেসিডেন্ট কল্লোল দত্ত যেমন বলেন, “এই শিল্প সম্মেলন যেখানেই হোক, লগ্নিকারীদের কী কী সুবিধা দেওয়া হবে, সেটা বলতেই হয়। এখানে তেমন আকর্ষণীয় বলার মতো কিছু আছে কি? আমরা কি জানি, আমাদের শিল্পনীতি কী?”
জমি ঘিরে জেদ আর শিল্পনীতি ঘিরে অনিশ্চয়তার জেরে তাই ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছে রাজ্য। ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ৯৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগের জন্য নতুন চুক্তি হয়েছে। ওই একই সময়ে নরেন্দ্র মোদীর রাজ্যে চুক্তি হয়েছে ৪৯ হাজার ৪০৫ কোটি টাকার। গুজরাতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের কোনও তুলনাই চলে না। এ বার মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে গেল উত্তরপ্রদেশও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.