ধূমকেতু সদৃশ ছিল তাদের আগমন। একই ভাবে তারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। মোটরবাইকে চড়ে যে দুষ্কৃতীরা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছিনতাই করে পালানোর সময়ে পরপর গুলি চালিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল, আবির্ভাবের বর্ষপূর্তি হয়ে গেলেও গোয়েন্দারা তাদের ধরতে পারলেন না। উল্টে বারুইপুর ও ক্যানিংয়ে সম্প্রতি একই কায়দায় গুলি চালিয়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য নতুন করে ভাঁজ ফেলেছে পুলিশের কপালে। তদন্তকারীদের একাংশের সন্দেহ, একাধিক গ্যাং এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনা দাপালেও যে-কোনও সময়ে ফের শহরে একইরকম দৌরাত্ম্য চালাতে পারে।
এমনকী, গোয়েন্দাদের একাংশের ধারণা, অক্টোবর-নভেম্বরে যখন ওই ছিনতাইকারীদের সন্ধানে লালবাজার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে, তখনই ওই দুষ্কৃতীদেরই এক বা দু’জন হাতে আসে। কিন্তু বন্দুকধারী দুষ্কৃতী হিসেবে তাদের শনাক্ত করা যায়নি। মেলেনি আগ্নেয়াস্ত্রও। তাই অন্য ছিনতাইকারীদের থেকে তাদের আলাদা করা যায়নি। পরে তারা জামিনে ছাড়া পায় বলে গোয়েন্দাদের অনুমান।
গত বছর ২৪ জানুয়ারি কসবায় বিদ্যা দেশাই নামে এক মহিলার হার ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে গুলি ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। জখম হন মহিলা। সেই শুরু। সেই বছরই ২১, ২২ সেপ্টেম্বর যাদবপুর ও ঢাকুরিয়ায় একই কায়দায় ছিনতাই ও পালানোয় বাধা পেতেই পরপর গুলি। একটু এ- দিক ও-দিক হলেই অনেকের মৃত্যু হতে পারত। ছিনতাইকারীদের দুমদাম আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের রেওয়াজ সেরকম নেই। তার উপরে ওই দুষ্কৃতীরা নাইন এম এম পিস্তল ব্যবহার করায় যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিল কলকাতা পুলিশ।
পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা বলেন, “কিছু তথ্য পেয়েছি। তার ভিত্তিতে ওই ছিনতাইবাজদের খোঁজ চলছে।” এক অফিসারের কথায়, “যাদবপুর আর ঢাকুরিয়ায় দু’টি ঘটনায় ব্যাপক ধরপাকড় হয়। দাগি ও আনকোরা মিলিয়ে বহু ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়। হয়তো ওদের মধ্যেই এক বা দু’জন বন্দুকধারী ছিনতাইকারী ছিল। তাদের পরিচয় তখন জানতে পারিনি। কয়েক জন তো ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছে।”
গত সেপ্টেম্বরে পরপর দু’টি ঘটনার পরে এ পর্যন্ত মোট চারটি গ্যাং পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। পুলিশের বক্তব্য, সব দল ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরবাইক-সহ ধরা পড়েছে। এদের মধ্যে আছে তিলজলার শেখ সইফুদ্দিন লস্কর ও জানে আলমের দল, ভবানীপুরের শাহনওয়াজ, নৌশাদ ও সানি, একবালপুরের সোহেল এবং সাদ্দাম ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের ধনঞ্জয় ও নীরেন। চিৎপুরের একটি দলের এক সদস্য রাহুল সিংহ-ও ধরা পড়েছে।
পুলিশ জানায়, রাহুল ও তার দল আমহার্স্ট স্ট্রিটে এক মহিলার হার ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত। অন্য দলগুলি ভবানীপুর, শেক্সপিয়র সরণি, গড়িয়াহাট, আলিপুর, নিউ আলিপুর ও বাঁশদ্রোণী এলাকায় হার ছিনতাইয়ে অভিযুক্ত। কিন্তু তদন্তকারীদের বক্তব্য, কসবা, ঢাকুরিয়া ও যাদবপুরে এরা কেউ গুলি চালায়নি। আবার ওই ধৃতদের সকলেই এখনও জেল হেফাজতে।
তা হলে গুলি চালানো সেই দুষ্কৃতীরা কোথায় গেল? লালবাজারের ছিনতাই দমন শাখার এক প্রবীণ অফিসারের কথায়, “বাধা পেলেই গুলি চালিয়ে দেওয়া ওই দুষ্কৃতীরা তো আর হাওয়ায় মিলিয়ে যায়নি। আশপাশেই আছে। অপরাধের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ওই এক বা একাধিক দল এখন দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাজ করছে। কিন্তু আমাদের নজরদারি একটু শিথিল হলেই তারা কলকাতায় ঢুকতে পারে।” |