কোনও শাহি স্নান ছিল না, এ মেলা মহাকুম্ভও নয়। তবু উপচে পড়া ভিড় আনুষ্ঠানিক শুরুর তিন দিন আগেই। কুম্ভের মতোই। কুম্ভের পুণ্যলোভী ভিড় যেমন একরোখা সঙ্গমমুখী, কলকাতা বইমেলার ভিড়ও একরোখা কম নয়, সে স্টলমুখী। প্রথম রবিবারেই মানুষ বিভিন্ন নামী প্রকাশনার স্টলগুলোর সামনে। তুমুল ভিড়।
লম্বা লাইন ‘থিম কান্ট্রি’ বাংলাদেশ মণ্ডপেও। তবে স্টল কমিয়েই হোক বা নকশা বদলানো, যাতায়াতের রাস্তা এ বার অপেক্ষাকৃত চওড়া ও জটিলতাও কম। মেলা প্রায় প্রস্তুত। কেনাবেচা শুরু হয়েছে পুরোদমে। উদ্যোক্তা পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু দে বললেন, “ফি বছর ভিড় বাড়ছে। স্টল খুঁজতেও হয়রান হতে হয়। তাই স্টল কমিয়ে খোলা জায়গা বাড়ানো হয়েছে।” ভিড় যে ভাবে বাড়ছে, তাতে খোলা জায়গা আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি। প্রথম দিনের ভিড়ে টান পার্কিংয়ের জায়গাতেও। |
প্রথম দিনেই লোকারণ্য। রবিবার, মিলনমেলা প্রাঙ্গণে। —নিজস্ব চিত্র |
শনিবার, প্রজাতন্ত্র দিবসের বিকেলে মেলার উদ্বোধন করেছেন বাংলাদেশের প্রাবন্ধিক লেখক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। কাঠের পাটাতনে কাঠের হাতুড়ি ঠুকে বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি। এ বার প্রধান অতিথি হাতুড়ি ঠোকার পরে তা চলে যায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। তিনি নিজে তো বটেই মঞ্চে উপস্থিত তাঁর মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য এবং আরও অনেককে দেন হাতুড়ি ঠুকতে। এই প্রথম ঠকাঠক শব্দে উদ্বোধন মঞ্চ সরগরম।
অনেক কিছুই তো প্রথম এ বারে। আন্তর্জাতিক ক্যালেন্ডার ভেঙে চার দিন আগে মেলা শুরু। গত ৩৬ বছরের ধারা ভেঙে মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেয় এ বারেই প্রথম গান গাওয়া হল উদ্বোধনে। তাই নয়, এত দিন উদ্বোধন-সহ মেলার যাবতীয় অনুষ্ঠান হত ইউবিআই অডিটোরিয়ামে। এ বার হল এসবিআই অডিটোরিয়ামে।
আরও আছে। এ বারই প্রথম সায়েন্স সিটির দিক থেকে মেলায় ঢুকতে ছুটন্ত গাড়ি সামলে বুলেভার্ড পেরোতে হচ্ছে না। সায়েন্স সিটির সামনে থেকে অন্য পারে বইমেলার গেট পর্যন্ত আন্ডারপাস হয়েছে সরকারি নির্মাণের নিরিখে রেকর্ড সময়ে, মাত্র চল্লিশ দিনে। শনিবার বইমেলা উদ্বোধনের আগে সেটি উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তবে বইমেলায় নেই তিনি, যিনি ভিড়ের মধ্যে আরও একটা ভিড় সঙ্গে নিয়ে বরাবর হেঁটেছেন। তাঁর উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি দুটোই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রথম বইমেলায় আসবেন না সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর অনেক ছবি, অনেক বই আর তাঁর নামে স্থায়ী মণ্ডপ মেলায়। গিল্ড এ বছর শংকরকে তাঁর ‘আজীবনের সাহিত্যকীর্তি’র জন্য সম্মান জানাল।
এই প্রথম গিল্ড প্রকাশ করেছে আট পাতার ট্যাবলয়েড ‘পুস্তকমেলা’। তাতে বইমেলার সংবাদ আর মেলা নিয়ে নানা ভাবনা। একটি খবরে লেখা, ‘বইমেলার উদ্বোধন হল। তার প্রধান পুরোহিত ব্রাহ্মণকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’ মমতার বহু বিশেষণ এ পর্যন্ত শোনা গিয়েছে। এই অভিধাটি চমকে দিয়েছে অনেককে। মমতার বই প্রকাশ এবারেও অব্যাহত। বেরিয়েছে দু’টি কবিতার বই, একটা প্রবন্ধের। আরও ক’টি বেরোতে পারে জানালেন তাঁর প্রকাশক। |