ট্যাবলো থেকে বইমেলা, শহর মমতাময়
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ থেকে বইমেলায় কলকাতা পুলিশের স্টল সবই মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনে! বিজ্ঞাপনের মুখ্য মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!
জনগণের দেওয়া করের টাকায় সর্বত্র মুখ্যমন্ত্রীর প্রচার কেন, প্রশ্ন তুলছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কটাক্ষ করছেন কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ। কিন্তু রাজ্য এবং রাজধানী জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর ছবির কুচকাওয়াজ বন্ধ হচ্ছে না!
শনিবার রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে সরকারের শিল্প, স্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, কলকাতা থেকে রাজ্য পুলিশ সব ক’টি বিভাগের ট্যাবলোতেই ছিল মুখ্যমন্ত্রীর ছবি। কোথাও তিনি জোড়হাতে দাঁড়িয়ে, কোথাও পুরস্কৃত করছেন পুলিশকর্মীকে। যা দেখে স্কুলপড়ুয়া নাতনির অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়া যাদবপুরের বাসিন্দা, বছর ষাটেকের বৃদ্ধ বলেই ফেলেছেন, “শহর জুড়ে এ সব ছবি তো প্রতি দিনই দেখছি। ট্যাবলোগুলো তো অন্য ভাবেও সাজানো যেত!”
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের ট্যাবলো।—নিজস্ব চিত্র
প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে গত বারের মতোই ইডেনের দিক থেকে হেঁটে জনতার অভিবাদন নিতে নিতে রেড রোডের মঞ্চে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। সকাল ১০টার কয়েক মিনিট আগে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন রেড রোডে পৌঁছতেই শুরু হয় কুচকাওয়াজ। সরকারি দফতর এবং সামরিক বাহিনীর ট্যাবলো প্রদর্শনী। ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের দিক থেকে রেড রোডে সরকারি দফতরের ট্যাবলো ঢুকতে শুরু করতেই দেখা যায়, প্রায় সর্বত্রই মুখ্যমন্ত্রীর উজ্জ্বল উপস্থিতি। “এখানেও মুখ্যমন্ত্রীর এত ছবি!”গুঞ্জন ওঠে দর্শকদের ভিড়ে।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারে সবাইকে টেক্কা দেয় কলকাতা পুলিশ। পুলিশের নানা কাজের প্রদর্শনী কার্যত ঢাকা পড়ে গিয়েছে মমতার ফুট দশেকের কাট-আউটে। যা দেখে বেহালার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধির বিস্মিত উক্তি, “প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ, নাকি মুখ্যমন্ত্রীর প্রচারসভা? ঠিক বুঝতে পারছি না!” প্রচারের ব্যাপারে অন্য কয়েক জন মন্ত্রী এবং আমলাও অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অনেকেরই ছবির দেখা মিলেছে ট্যাবলোর অঙ্গসজ্জায়। তবে কলকাতা পুরসভা, পর্যটন দফতরের ট্যাবলোয় মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ছিল না। কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া প্রতিযোগীদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সামরিক বাহিনীর পূর্ব ভারতীয় শাখার (ইস্টার্ন কম্যান্ড) জেনারেল অফিসার কম্যান্ডিং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ কে চৌধুরী বলেন, “রেড রোডের কুচকাওয়াজের মান ছুঁয়ে ফেলেছে নয়াদিল্লিকেও। আগামী বছর তা আরও উন্নত হবে বলে আশা করছি।”
সামরিক অফিসার যতই প্রশংসা করুন, বিরোধীরা কিন্তু মনে করছেন, সরকারি অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জনতাকে নববর্ষের শুভেচ্ছা সব ব্যাপারেই মুখ্যমন্ত্রীর ছবি ব্যবহারের যে চল শুরু হয়েছে, তারই আর একটা চেহারা দেখা গিয়েছে প্রজাতন্ত্র দিবসেও। বারুইপুরে বামফ্রন্টের এক সমাবেশে এ দিন বুদ্ধবাবুর মন্তব্য, “চারিদিকে ছবি! খবরের কাগজে ছবি! সর্বত্র ছবি! কার টাকায় এত ছবি টাঙানো হচ্ছে?” বুদ্ধবাবুর প্রশ্ন, “আপনারা এর কৈফিয়ৎ চাইবেন না?”
কংগ্রেসের তরফে অরুণাভবাবুর কটাক্ষ, “এগুলো মুখ্যমন্ত্রীর পরিমিতি বোধ এবং অফিসারদের সাহসের অভাবের ফল। অফিসাররা একটাই উদ্দেশ্যে দৌড়চ্ছেন মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করা।” তবে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের এক পরিষদীয় সচিবের দাবি, “বইমেলায় কী হয়েছে, বলতে পারব না। তবে মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্যে উন্নয়নের কাজে যে গতি এসেছে, সেটা বোঝানোই ট্যাবলোর উদ্দেশ্য ছিল। কোনও রাজনৈতিক প্রচার ওখানে করা হয়নি।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.