কটেজের বারান্দা থেকে কয়েক হাত দূরে জলদাপাড়ার গভীর জঙ্গল। ভোরে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎ নজরে পড়তে পারে ঘাস খেতে আসা চিতল হরিণ। গন্ডারও ঘুরে বেড়ায় ইতিউতি। সবুজ গাছগাছালিতে ভরা ওই কটেজের পরিবেশ মন ভাল করে দেয়।
জঙ্গলের আরও কাছে পর্যটকদের পৌঁছে দিতে ২০১১ সালে পর্যটন দফতর জলদাপাড়া টুরিস্ট লজের পাশে ফাঁকা জায়গায় ১০টি কটেজ তৈরির কাজ শুরু করে। কথা ছিল দ্রুত কাজ শেষ করে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ঠিকাদার সংস্থা ছয়টি ঘরের কাজ শেষ করে। কিন্তু ঘর তৈরি হলেও আসবাবপত্রের ব্যবস্থা না থাকায় আজও চালু করা সম্ভব হয়নি। এ দিকে, শীতে পর্যটন মরসুম চলবে বড়জোর এক মাস। রাস্তার বেহাল দশার কারণে কিছু বুকিং বাতিল হলেও এ বার পর্যটকদের ভিড় সামলাতে হিমসিম দশা হয়েছে হোটেল ও রিসর্ট কর্তৃপক্ষের। ঘর না পেয়ে অনেকে অন্যত্র চলেও যাচ্ছেন। যেখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী উত্তরবঙ্গে পর্যটকদের ভিড় বাড়াতে আগ্রহী। পর্যটকদের কাছে উত্তরবঙ্গের অজানা জায়গা তুলে ধরতে তৎপর। সেখানে খোদ রাজ্য পর্যটন দফতরের ওই কটেজগুলি সামান্য কয়েকটি আসবাবপত্রের অভাবে চালু করা সম্ভবপর না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। ওই ঘটনার জন্য আমলাদের একাংশের উদাসীনতাকে অনেকে দায়ী করছেন। জলদাপাড়া টুরিস্ট লজ সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে পর্যটকরা জলদাপাড়ায় বেড়াতে যান। |
থাকার জায়গার জন্য তিন মাস আগে অন লাইন বুক করেন তাঁরা। সেখানকার ২৩টি ঘর ভরা থাকে। হলং লজের আটটি ঘরের ৪টি অন লাইনে বুকিং করা যায়। সেখানেও বরাত ভাল থাকলে ঘর মেলে। লজের এক কর্মীর কথায়, “পর্যটকদের বেশিরভাগ সরকারি লজে থাকতে পঠন্দ করেন। কিন্তু এখানে ঘর না পেয়ে বেসরকারি লজে চলে যান। অথচ যে কটেজগুলি পড়ে আছে সেগুলি চালু করা হলে অনেক মানুষ থাকার সুযোগ পেতেন।” শুধু তাই নয়। ওই কটেজগুলি চালু হলে হলংয়ে চাপ কমত বলে মনে করেন কোচবিহারের ডিএফও রাজেন্দ্র জাখর। তিনি বলেন, “ঘরগুলি খুব সুন্দর। সেগুলি চালু হলে কিছুটা হলে হলংয়ের উপরে চাপ কমত।” জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া এলাকায় ছোট বড় ২৭টি বেসরকারি লজ রয়েছে। এ বার ভিড় ভাল হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন পর্যটন দফতরের কটেজগুলি চালু হলে পর্যটকদের আটকে রাখা সম্ভব হত। জলদাপাড়া হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বপন রায় বলেন, “কটেজগুলি এতদিন পর্যন্ত কেন চালু করা গেল না বুঝতে পারছি না।” ওই বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “কটেজগুলি দ্রুত চালু করার জন্য আধিকারিকদের বলা হয়েছে।” |