শনিবারের রাত, ব্যান্ডের গান আর আতসবাজির প্রদর্শনী। নাইটক্লাব ভরাতে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। আর হয়েছিলও তাই। দক্ষিণ ব্রাজিলের সান্টা মারিয়া শহরের সেই নাইটক্লাব তখন সত্যিই হাউসফুল। প্রায় শ’পাঁচেক তরুণ-তরুণী মেতে রয়েছেন নাচ-গানে। কিন্তু রাত দু’টো নাগাদ হঠাৎই ঘটে গেল অঘটন। নিমেষে দাউদাউ করে জ্বলে উঠল গোটা নাইটক্লাবটি। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে ২৪৫ জনের। আহত অন্তত ২০০ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, যাঁদের মধ্যে আট জনের অবস্থা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
সান্টা মারিয়ার দমকল বিভাগের প্রধান গাইডো ডি মেলো জানিয়েছেন, নাইটক্লাবে কাল রাতে ব্যান্ডের গানের সঙ্গে ছিল আতসবাজির প্রদর্শনী। ছাদ ঢাকা অডিটোরিয়ামের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এখন এই ধরনের আতসবাজির প্রদর্শনী (পাইরোটেকনিক্স শো) আকছারই হয়ে থাকে। |
চলছে উদ্ধারকাজ। সেই নাইটক্লাবে। ছবি: এ পি |
কিন্তু সেখান থেকেই বাধে বিপত্তি। কী ভাবে? নাইটক্লাবের শব্দনিরোধক সিলিং যা মূলত ফোম দিয়ে তৈরি, তাতেই সবার আগে আগুন লাগে। তার পর তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ক্লাবটিতে। মুহূর্তে শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। কিন্তু বাইরে বেরোনোর পথ ছিল মাত্র একটা। ফলে সময়ের মধ্যে অনেকেই ক্লাব ছেড়ে বেরোতে পারেননি। কেউ পুড়ে কেউ বা আবার দমবন্ধ হয়ে মারা যান ক্লাবের মধ্যেই। পুলিশও জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই ১৮৯টি দেহ শনাক্ত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যে বেশির ভাগই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন। দমকলকর্মীরা জানাচ্ছেন, নাইটক্লাবের শৌচাগারেও কিছু মৃতদেহ তাঁরা খুঁজে পেয়েছেন। সম্ভবত আগুনের হাত থেকে বাঁচতেই ওই তরুণ-তরুণীরা শৌচাগারে লুকিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেই ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। সরকারি হিসেবে ওই নাইটক্লাবে কাল প্রায় ৫০০ জন উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বেসরকারি হিসেবটা হাজার খানেক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েইছে।
উরুগুয়ে আর আর্জেন্তিনা সীমান্ত সংলগ্ন সান্টা মারিয়ায় প্রায় লাখ তিনেক লোকের বাস। বিশ্ববিদ্যালয় শহর বলেও এর পরিচিতি রয়েছে। প্রচুর তরুণ-তরুণী এই শহরে পড়তে আসেন। নাইটক্লাবগুলিতে তাই শনি-রবিবার ভিড় উপচে পড়ে। সামনের বছর ফিফার বিশ্বকাপ ফুটবলের কিছু ম্যাচ সান্টা মারিয়ায় হওয়ার কথা। হতে পারে ২০১৬ সালের অলিম্পিকের কিছু ইভেন্টও। এই অবস্থায় এত বড়সড় একটা দুর্ঘটনা ব্রাজিলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে বলে ধারণা বিরোধীদের একাংশের। বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেফকেও এক হাত নিয়েছেন তাঁরা। আজ ব্রাজিলের ঘুমই ভেঙেছে এই দুর্ঘটনার খবর শুনে। আজকের দিনটাকে গোটা ব্রাজিলবাসী বলছেন ‘স্যাড সানডে’। এক দমকলকর্মী জানাচ্ছেন, জীবনে এত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড তিনি দেখেননি। চিলির সফরে কাটছাঁট করে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডিলমা রৌসেফ। চিলি থেকেই তিনি জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে সরকার রয়েছে। বলেছেন, “সান্টা মারিয়া আর গোটা ব্রাজিলের কাছে আমার অনুরোধ, এই সময়টা সবাই একসঙ্গে থাকুন। এখন একটা বিরাট শোকের সময়। আশা করি, এই ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠব।” |