দিল্লি গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছিল সারা দেশ। পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি ধর্ষকদের কড়া শাস্তির আশ্বাস দেয় কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু ভারতের কোনও প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা গণধর্ষিত হলে বেশির ভাগ সময়েই সেই ঘটনা লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যায়। আর যদি সেই মহিলা দলিত আদিবাসী হন এবং ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে তা হলে তো কথাই নেই।
দেরিতে হলেও শুরু হয়েছে প্রতিবাদ। ভারত ছাড়িয়ে তা পৌঁছেছে লন্ডনের রাজপথেও, ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে। আর যাঁর জন্য প্রতিবাদ তিনি ছত্তীসগঢ়ের এক দলিত সম্প্রদায়ের শিক্ষিকা। নাম সোনি সোরি। বর্তমান ঠিকানা রায়পুর জেল। |
লন্ডনে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র |
প্রচণ্ড ঠান্ডা উপেক্ষা করেও ২৬ জানুয়ারি লন্ডনের ভারতীয় দূতাবাসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কয়েকশো নাগরিক। হাতে প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা “সোনি সোরির ধর্ষকদের বিচার চাই।” অভিনেত্রী মীরা সায়াল বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, “ধর্ষণ এবং অন্যান্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে মেয়েদের এই আন্দোলনে আমরা পাশে আছি। ব্রিটেনেও মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর জন্য কাজ করে যাব আমরা।” বর্মা কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে প্রণয়ন করার দাবিও জানান বিক্ষোভকারীরা।
মাওবাদী যোগ থাকার অভিযোগে ২০১১ সালের অক্টোবর মাস থেকেই সোনি রায়পুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি। অভিযোগ, তথ্য জোগাড়ের নাম করে সোনির উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়েছে দন্তেওয়াড়া ও রায়পুর সেন্ট্রাল জেলের পুলিশ। একাধিক বার গণধর্ষণ করা ছাড়াও সোনির যোনি এবং পায়ুদ্বারে পাথরকুচি ঢোকানোর অভিযোগও রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছে অভিযোগ করায় মানসিক ভারসাম্যহীন আখ্যা দিয়ে সোনিকে অনেক বার বৈদ্যুতিক শকও দেওয়া হয়। সোনিকে ধর্ষণের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছত্তীসগঢ়ের সুপারিন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ অঙ্কিত গর্গ সাহসিকতার জন্য ২০১২ সালে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বিশেষ পুরস্কারও নেন।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশে এক বার এক খোলা চিঠিতে সোনি লিখেছিলেন, “আমাকে নগ্ন করে, বৈদ্যুতিক শক দিয়ে, শরীরে পাথর ঢুকিয়ে কি রাজ্যের নকশাল সমস্যার সমাধান হবে?” উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে সোনি আর সোনির মতো অসংখ্য অত্যাচারিত দরিদ্র মহিলা। যাঁদের রক্ষাকর্তারা নাকি নিজেরাই ভক্ষকের ভূমিকায়। |