হুল্লোড়
অ্যাড-ম্যাড দুনিয়া
র্জুন রামপাল বাথটবে। পিছনে চিত্রাঙ্গদা সিংহ। সাবানের বুদবুদে ভরা বাথটব-এ অর্জুনের চোখ বন্ধ। নিজের নরম আঙুলের স্পর্শে চিত্রাঙ্গদা আলতো করে শ্যাম্পু করিয়ে দিচ্ছেন অর্জুনকে। এ সবই ঘটছে অর্জুন, চিত্রাঙ্গদার বিজ্ঞাপন সংস্থার অফিস ট্যুরে।
বিজ্ঞাপনের দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগত। সুধীর মিশ্র ‘ইনকার’-সিনেমায় দেখিয়েছেন কী পরিমাণ চাপের মধ্যে কাটে অ্যাডগুরুদের জীবন। তারই মধ্যে আছে ‘লেজি লাঞ্চ’ আর ‘লেট নাইট পার্টি’। কোথাও যেন একটা বেপরোয়া, বাউন্ডুলে ভাব। বিজ্ঞাপন জগতের মানুষেরা বড় পর্দায় যতটাই রঙিন, বাস্তব জীবনেও কি তাই?
আনন্দ প্লাস দেশের বিজ্ঞাপন জগতের সেরা ছয় ব্যক্তিত্বের কাছে জানতে চাইল তাদের বর্ণময় অফিস কাহিনি।

প্রহ্লাদ কক্কর
আমার অফিসে বেশির ভাগ মহিলাই রিপোর্টিং বস। কাজের জগতে এত দিন থাকার সুবাদে আমি এটুকু বুঝেছি যে, মেয়েদের কর্মক্ষমতাকে সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে হলে তাদের মাসিক ঋতুচক্র সম্পর্কে ধারণা থাকা খুব প্রয়োজন। অবাক লাগলেও ব্যাপারটা কিন্তু খুবই বিজ্ঞানসম্মত। বিজ্ঞাপন দুনিয়ায় কাজের চাপ খুব বেশি। মেয়েদের ঋতুচক্রের সময় ‘মুড স্যুইং’ খুব সাধারণ ব্যাপার। তাই মাসের এই কয়েকটা দিন খুব ভারী কাজ তাদের না দেওয়াই ভাল।
এ রকম নয় যে এই ব্যাপারে অফিসে কোনও রেকর্ড বানানো হয়। ‘জেনেসিস’-এ প্রায় সব সময়ই আমাদের একটা চোদ্দো জনের টিম থাকে। যার মধ্যে ছ’জন মহিলা। সুতরাং তাদের ‘তারিখ’ মনে রাখা খুব একটা অসুবিধার নয়। আমি চেষ্টা করি মোটামুটি সাত দিন আগে এবং পরে খুব ভারী কাজ না দেওয়ার।
কেউ যদি এ ব্যাপারে কথা বলতে না চায় তা হলে অবশ্যই তার সেই স্বাধীনতা রয়েছে। এই কথাগুলো শুনে দয়া করে কেউ আমাকে বিকৃতকাম ভাববেন না। আমার মহিলা সহকর্মীদের ভাল-মন্দের কথা চিন্তা করি বলেই এই সব করা। রবিনা টন্ডন আমার পিএ ছিল। জোর দিয়ে বলতে পারি যে মাসের সব দিনেই ও কাজের ব্যাপারে তুখোড় ছিল।
ভরত ধাবোলকর
১৯৯১ সালে আমি একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা খুলি, ‘জেন’ নামের। যার অর্থ হল ধ্যান বা মেডিটেশন। অফিসের সাজসজ্জা এমন ভাবে করা হয়েছিল যাতে নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য থাকে। অফিসের রং করা হয় কালো। প্রত্যেকটা টেবিলে ফাইবার গ্লাসের তৈরি গাছ রাখা ছিল। বেশ একটা জঙ্গল-জঙ্গল ভাব আসে তাতে!
আমার নিজের ঘরের মেঝেটা ছিল কাঁচের একটা অ্যাকোয়ারিয়ামের উপর তৈরি। সেখানে আমি পিরানহা রেখেছিলাম! ওই কাঁচের মেঝের উপর দিয়ে হাঁটাচলা করলে, নীচে পিরানহাদের ঘোরাফেরা দেখা যেত। একটা প্লাস্টিকের কঙ্কালও ছিল। সবাইকে মজা করে বলতাম যে ওটা আমার এক গ্রাহকের। ঠিক সময় টাকা দেয়নি তাই আজ এই অবস্থা!
অফিসে একটা বুলডগ ছিল। নাম ওশো। রিসেপশনে ছিল একটা ময়না। কেউ ঢুকলেই বলত, ‘গুড মর্নিং প্রিন্স’। আর ছিল একটা বাঁদর। সাইজে বেজির চেয়েও ছোট। নাম রেখেছিলাম মাইটি কং।
এরা কেউ খাঁচাবন্দি ছিল না। তাই অনেক সময় দেখেছি, গ্রাহকের হাত থেকে পাখি পেন ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! কেউ কেউ তো কোনও তর্ক-বিতর্ক ছাড়াই আমার সব কথা মেনে নিয়ে চটপট কেটে পড়তেন! এক বার কিছু স্কুলপড়ুয়া লাইন দিয়ে আমার অফিসও দেখতে এসেছিল।
এখন আমার আর ভারতে কোনও অফিস নেই। কিন্তু তানজানিয়াতে একটা অফিস আছে, যেখানে আমি মাসের মধ্যে দিন সাতেক থাকি। সব পশু-পাখিকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছি।

অ্যালেক পদমসি
‘লিনটাস’-এর হেড হওয়ার পরে প্রথমে আমি আমার সমস্ত ক্রিয়েটিভ কর্মীকে বলেছিলাম হিন্দি সিনেমা দেখতে। কারণ, আমি চেয়েছিলাম যে ওরা ‘জনতা’ সংস্কৃতিটা বুঝুক। অফিসের সময়েও সিনেমা দেখতে উৎসাহ দিতাম।
দুপুরের লাঞ্চের সময় এমন কিছু করার চেষ্টা করতাম যাতে কর্মীরা উদ্বুদ্ধ হয়। এম এফ হুসেন-এর মতো চিত্রশিল্পী বা নিসিম ইজাকেইলের মতো লেখককে আনা হয়েছে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য।
প্রথম যখন লাভের মুখ দেখলাম, অফিসের বাথরুমটাকে ফাইভ স্টারের মতো সাজিয়ে ছিলাম। পুরো অফিসটাকে সাজানোর মতো টাকা আমার ছিল না। তাই শুধু বাথরুমটাকেই সাজিয়ে ছিলাম। ভেবেছিলাম, কর্মীরা এইটুকু ভেবে গর্ব বোধ করবে, আমাদের অফিসের বাথরুমটা তো অন্তত ফাইভ-স্টার!

পীযূষ পাণ্ডে
আমার অফিসে বিশেষ কোনও নিয়মকানুন নেই। চাইলে সহকর্মীদের টিফিন বাক্স থেকে টিফিন নিয়ে খেতেও পারি। তার পর তার মাকে ফোন করে বলতে পারি যে ভিন্ডিটা ফাটাফাটি হয়েছিল!
গত ৩১ বছর ধরে আমরা একটা টিমের মতো কাজ করছি। কোনও দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় হঠাৎ ঠিক হল, ক্রিকেট খেলব। ব্যাস, একটা টেনিস বল নিয়েই করিডরে খেলা শুরু! এ ক্ষেত্রে একটাই নিয়ম, যে কাঁচ ভাঙবে তাকে গ্যাটের টাকা দিয়ে সেটা সারিয়ে দিতে হবে।
এক বার সবাই মিলে রাত তিনটে পর্যন্ত পার্টি করলাম। পর দিন সকালে আমি কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের দশ মিনিট আগেই অফিসে পৌঁছে যাই। তবে বাকিরা এসে উঠতে পারেনি। সকাল ৯:৩৫ নাগাদ এক বার কিউবিকলে গিয়ে একটা নোট রেখে আসি। যাতে লেখা ‘আই মিস ইউ অ্যাট ৯:৩৫’! এই ব্যাপারটা করতে থাকি পনেরো মিনিট অন্তর। বকাবকি না করেও যেটা বলার সেটা বলা হয়ে যায়। এটাই আমার স্টাইল।
এক বার একটা মজার ব্যাপার হয়েছিল। আন্তর্জাতিকক নারী দিবসের আগে আমার চারজন পুরুষ সহকর্মী এসে বলল যে তারা মহিলা সহকর্মীদের জন্য রান্না করতে চায়। আমার কাছে অনুমতি চাইল ছাদে একটা শামিয়ানা খাটানোর। তার পর চারজন মিলে রান্নাও করল। অফিসে আমার দেখা সবচেয়ে ‘ক্রেজি’ অভিজ্ঞতা এটাই।

প্রসূন যোশি
বিজ্ঞাপন জগৎ খুব সৃজনশীল জায়গা। কিন্তু কাজের চাপও থাকে প্রবল। তাই জন্য কাজের পরিবেশ ভাল হওয়াটা খুব প্রয়োজন। মাঝে মাঝে সবাই মিলে অফিসটাকে পার্কে শিফ্ট করি।
তিনটে নাগাদ কারওর ইচ্ছা হলে ড্রিংক ব্রেকে পাব-এ যাই। তার পর যে যার কাজে ‘ব্যাক টু অফিস’।
খেলাধুলোও হয়। বিশেষ করে ফুটবল। আর পার্টির ব্যাপারে বলব, আমরা কখনও পার্টি প্ল্যান করি না। পার্টিই আমাদের প্ল্যান করে!

আর বালকি
অনেকেই ভাবেন যে বিজ্ঞাপন দুনিয়া একটা অদ্ভুত জগৎ। সবাই নাকি ‘ক্রেজি’। এটা একটা মিথ! মানুষের কল্পনা। মুম্বইয়ে আমার অফিসটা আর পাঁচটা আন্তর্জাতিক সংস্থার অফিসেরই মতো। আমি আর আমার স্ত্রী গৌরী শিণ্ডে অফিসে কোনও পাগলামিই করি না। সব ‘ক্রেজি’ আইডিয়া বিজ্ঞাপনের জন্য তোলা থাকে আমাদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.