রিকশা আছে। আছে তার ভাড়ার তালিকাও। কিন্তু তা মানছে কে!
কান্দির রিকশা চালকদের দাপটে নাভিশ্বাস বাসিন্দাদের। কান্দি পুরসভার হেলদোল নেই। নির্বিকার গলায়, ‘অভিযোগ মিলছে দেদার।’ কিন্তু সুরাহা? উত্তর নেই পুরসভার কাছে।
রাজ্যে ক্ষমতা বদলের আগে, রিকশা চালকদের সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শহরে রিকশা ভাড়ার তালিকা তৈরি করা হত। শহরে বিভিন্ন রিকশা স্ট্যান্ডে তা টাঙিয়ে দেওয়া হত। সেই ভাড়া মেনেই চলত রিকশা। এটাই ছিল চেনা নিয়ম। কিন্তু পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে সেই নিয়ম উঠে গিয়েছে। পুরনো ভাড়া আর মানতে নারাজ অধিকাংশ চালক। আর নতুন ভাড়া? কে নির্ধারণ করবে কেউ জানে না।
রিকশাচালক উত্তম বাগদি, রেজ্জাক শেখরা বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি দাম বেড়েছে রিকশার যন্ত্রাংশের। আগে একটা চাকা সারাতে পাঁচ টাকা লাগত। এখন পনেরো টাকাতেও হয় না। পুরোনো ভাড়ায় আর রিকশা চালানো যায়?” তাদের দাবি পুরসভা ভাড়া বাড়াচ্ছে না, বাধ্য হয়ে তাঁরা নিজেরাই তাই ভানা নিচ্ছেন। যে যেমন পারেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচলের এক মাত্র যান রিকশা। কান্দি, বড়ঞ্চা, খরগ্রাম, ভরতপুর ১ ও ২ মোট পাঁচটি ব্লক। চলাচলের আর কোনও যান নেই। বাসস্ট্যান্ড থেকে কান্দি মহকুমা হাসপাতাল ও আদালতে বেশি যাতায়াত করেন বাসিন্দারা। ওই দুটি জায়গা থেকে রিকশা ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু অভিযোগ, চালকেরা সে ভাড়া বাড়িয়ে কারও কাছে নিচ্ছেন ১৫ টাকা কারও কাছে ২৫। একই ভাবে জোজো বাজার, বিজয়নগর, রূপপুর, কান্দি বাজার সর্বত্রই ভাড়া বাড়িয়ে নিয়েছে রিকশাচালকেরা।
এমনই এক দুর্ভোগের শিকার বেসরকারি সংস্থার মালতী দাস। তিনি বলেন, “গত শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ কান্দি বাস স্ট্যান্ড থেকে নতুনপাড়া যাব, সঙ্গে একটি ব্যাগ ছিল। রিকশা ভাড়া চাইল ৫০ টাকা। ভাবতে পারেন!” অথচ মাস কয়েক আগেও ওই পথটুকুর ভানা ছিল সাকুল্যে ১০ টাকা। মূল্য বৃদ্ধি কী এতটাই না শিব ঠাকুরের আপন দেশ হয়ে উঠেছে কান্দি? কান্দি মহকুমা নিত্যযাত্রী সংগঠনের সম্পাদক তপন দাস বলেন, “রিকশা ভাড়া কান্দির বড় সমস্যা। যা ইচ্ছা মনগড়া ভাড়া নিচ্ছে রিকশাচালকরা। পুরসভার সেই বিষয়ে কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই।” আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন অনুমোদিত কান্দি মহকুমা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক সুরজিৎ সাহা বলেন, “রিকশা ভাড়া সত্যিই সমস্যা। পাশাপাশি রিকশাচালকের সংখ্যাও বেশি। পুরসভা কোনও দায়িত্বই নিতে রাজি নয়।”
তৃণমূল অনুমোদিত একটি শ্রমিক সংগঠনও সম্প্রচি তৈরি হয়েছে। তাদের সভাপতি নূর আলম শেখ বলেন, “রিকশা ভাড়া ও রিকশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পুরসভার কোনও নজরই নেই। ভাড়ার তালিকা সঠিক হয়নি। আমরা চাই দ্রুত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ করা হোক।”
সব শুনে, কান্দির কংগ্রেস পুরপ্রধান গৌতম রায় বলেন, “সব দায়িত্বই তাহলে পুরসভার? তা হলে যারা ইউনিয়ন করছে তারা কী করছে?” কে দেবে এক উত্তর? |