|
|
|
|
জড়িতদের ধরার দাবিতে পোস্টার-পদযাত্রা |
ধর্ষিতার পাশে এলাকাবাসী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • জামবনি |
দিল্লিতে গণধর্ষণের শিকার তরুণীর পাশে দাঁড়িয়েছিল গোটা দেশ। একই ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুরের জামবনি থানার শিরষা গ্রামের ধর্ষিতা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ালেন এলাকাবাসী।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে জামবনির চিল্কিগড় এলাকার ছাত্রীর স্কুলের সম্পাদক শঙ্করনারায়ণ দেও-এর নেতৃত্বে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্ল্যাকার্ড নিয়ে মৌনী পদযাত্রা করেন। পড়ুয়াদের হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ধর্ষক তোমরা জানো না মানবতার শক্তি কত। ধর্ষক তোমার ক্ষমা নেই’। শঙ্করনারায়ণবাবু বলেন, “আমরা সর্বতোভাবে ছাত্রীটির পাশে রয়েছি। ধর্ষকদের উপযুক্ত কঠোর শাস্তি চাই। এ ধরনের ঘটনা এলাকায় আগে হয়নি। এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রশাসন-পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছি।” পদযাত্রায় অংশ নেওয়া স্কুল পড়ুয়া মন্দিরা পাল ও শিলা সিংহদের কথায়, “জঙ্গলমহলে আমাদের মতো গ্রামের মেয়েরা জঙ্গলের দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে করে স্কুলে যাতায়াত করে। এই ঘটনার পর বড়ই নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।”
এ দিন শিরষা গ্রামেও প্রতিবাদ-পদযাত্রা করেন এলাকাবাসী। ছাত্রীটির দাদাও ওই পদযাত্রায় সামিল হন। জামবনি ব্লকের অন্য কয়েকটি স্কুলের পড়ুয়ারাও পৃথক পৃথক ভাবে প্রতিবাদী-পদযাত্রা করে। অভিযুক্ত তিন যুবক খোকন মাহাতো, বিদ্যাধর মাহাতো ও হলধর পাত্রকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্তরা এলাকা ছাড়া। তাদের খোঁজ চলছে। |
|
জামবনির চিল্কিগড়ে পড়ুয়াদের প্রতিবাদী পদযাত্রা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
জামবনির চিল্কিগড় অঞ্চলের ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রীটির এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা। পরীক্ষার জন্য মেয়েটি প্রস্তুতি নিচ্ছিল। গত শুক্রবার ১৮ জানুয়ারি বিকেলে টিউশন থেকে বাড়িতে ফিরছিল ছাত্রীটি। সেই সময়ই শিরষা গ্রামের তিন যুবক তাকে জোর করে কাছের একটি জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। যুবকেরা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, ঘটনার কথা জানাজানি হলে প্রাণে মেরে ফেলা হবে। ভয় পেয়ে ছাত্রীটিও বাড়ি ফিরে এসে পরিবারের লোকেদের শুরুতে কিছু বলেনি। পরে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে বিষয়টি জানা যায়। মঙ্গলবার বিকেলে ছাত্রীটির দাদা জামবনি থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। এরপরই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে বলে জানা গিয়েছে হাসপাতাল সূত্রে। বুধবার ঝাড়গ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুপর্ণা রায়ের কাছে ধর্ষিতা ছাত্রীটি গোপন জবানবন্দি দেয়।
ঘটনার কথা জানাজানি হতেই জামবনি ব্লক জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
এ দিন মেয়েটির দাদা বলেন, “গত শুক্রবার বিকেলে বাড়ি ফিরে বোন খুব কান্নাকাটি করছিল। আমরা কিছুই বুঝতে পারিনি। পরে বোন অসুস্থ হয়ে পড়ে। মাকে সব ঘটনা জানায়। বোন জানায়, জঙ্গলে টেনে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার চালানোর পর ওই তিন ধর্ষক বোনকে খুন করতে চেয়েছিল। বোন ওদের হাতে পায়ে ধরে নিজের প্রাণরক্ষা করেছিল। আমরা অভিযুক্তদের কাঠগড়ায় দেখতে চাই। তাদের কঠোরতম শাস্তি চাই।”
গণধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জামবনির বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার দিয়েছে তৃণমূল। জামবনি ব্লক তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি সমীর ধল বলেন, “অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। অন্যতম অভিযুক্ত খোকন মাহাতো হলেন স্থানীয় এক সিপিএম কর্মীর ছেলে। তিন অভিযুক্তকে যত শীঘ্র সম্ভব গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছি। সামাজিক অবক্ষয় রোধে আমরা পথে নেমে সচেতনতা কর্মসূচি করব।” |
|
|
|
|
|