ভাগ্যিস মোবাইল ছিল!
ছিল বলেই না খবর গেল আধ কিলোমিটার দূরের পাশের গ্রামে। সেই গ্রামের লোকেরাই ছুটে এসে হাতি খেদালেন। নইলে আর রক্ষা ছিল না বিষ্ণুপুরের গুমুট গ্রামে বাস্কে পরিবারের। কারণ, তাঁদের বাড়ি ঘিরে ছিল দলমার ৪০টি হাটি!
বৃহস্পতিবার ওই বাড়ির কর্তা বৈদ্যনাথ বাস্কের নাতির অন্নপ্রাশন ছিল। উঠোনে টাঙানো হয়েছিল শামিয়ানা। অতিথিদের জন্য এসেছিল প্লাস্টিকের চেয়ারও। বুধবার রাতে সব গুছিয়ে একটি ঘরে কাটা সব্জি ডাঁই করে ছেলে খোকনকে নিয়ে সেই ঘরেই শুয়েছিলেন বৈদ্যনাথবাবু। পাশের ঘরে নাতি ও পুত্রবধূকে নিয়ে শুয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী। মাঝরাতে চেনা হুঙ্কার কানে আসতেই ঘুম ছুটে যায় তাঁদের। এ ডাক তাঁদের বড্ড চেনা! কিন্তু হাতির পাল যে ততক্ষণে উঠোনে ঢুকে গোলা ভেঙে চাষের ধান খেতে শুরু করেছে, তখনও জানতে পারেননি তাঁরা। দরজার ফাঁক থেকে সব দেখে চক্ষুস্থির হয়ে যায় তাঁদের। |
কাটা সব্জির গন্ধে এ বার বুঝি হাতিরা এই ঘরে হামলে পড়ে! বিপদ বুঝে বাবা-ছেলে ভিতরের দরজা দিয়ে পাশের ঘরে ঢুকে পড়েন। তাঁদের চিৎকার ও হাতিদের হুঙ্কারে প্রতিবেশী পাঁচ ঘর আদিবাসীরও ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। সব দেখেও তাঁরা কিছু করতে পারছিলেন না। চল্লিশটা হাতির সঙ্গে যুঝবে কে? তাঁদেরই একজন পকেট থেকে মোবাইল বের করে পাশের গ্রাম উত্তরপাড়ার গুণধর বাগদিকে ফোন করেন।
তাঁর হাঁকডাকে ওই গ্রামের ছেলে-জোয়ানেরা দল বেঁধে মশাল জ্বালিয়ে গুমুট গ্রামে দৌড়ে আসেন। দূর থেকে হাতিদের দিকে পটকা ছুড়ে দেওয়া হয়। তত ক্ষণে হাতিরা বৈদ্যনাথবাবুর নাতির অন্নপ্রাশনের সব্জি সাবাড় করতে শুরু করে দিয়েছিল। পটকার শব্দে কয়েকটি হাতি দূরে সরে গেলেও রুখে দাঁড়ায় দলপতি। উত্তরপাড়ার লোকেদের পাল্টা তাড়া করে।
আশপাশের গ্রাম থেকে আরও লোকজন এসে পড়ে। ঘণ্টা দুয়েক ধরে পটকা ও টিন পেটানোর শব্দে দলমার হাতির দল জঙ্গলমুখো হয়।
বৃহস্পতিবার সকালেও আতঙ্ক কাটেনি বাস্কে পরিবারের। ছেলে-কোলে খোকন বলেন, “সময় মতো উত্তরপাড়ার লোকেদের ফোনে না ডাকা গেলে হাতিরা বোধহয় আমাদের সবাইকে পিষে মারত।” উত্তরপাড়ার গুণধর বাগদির কথায়, “আদিবাসী পাড়া থেকে চেঁচামেচি শুনেই আমরা জেগে গিয়েছিলাম। তার পরেই এল ওই ফোন। এখন বুঝতে পারছি, মোবাইল কত কাজের।”
নাতির অন্নপ্রাশনের অনুষ্ঠান এ দিন নমো নমো করে সেরেছেন বৈদ্যনাথবাবু। তাতে অবশ্য আক্ষেপ নেই শিশুর মা রূপালিদেবীর। প্রাণে রক্ষা পাওয়ায় এখন তিনি এক বার মারাংবুরুর উদ্দেশে প্রণাম জানাচ্ছেন, আর এক বার মোবাইলের গুণকীর্তন করছেন। বনকর্তারা জানিয়েছেন, হাতির দলটি হঠাৎ বিষ্ণুপুর রেঞ্জের জঙ্গল ছেড়ে রাধানগর রেঞ্জের ওই গ্রামে ঢুকে পড়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ডিএফও বাঁকুড়া (উত্তর) এস কুলন ডেইভাল। |