সম্পাদকীয় ২...
শংসনীয় তৎপরতা
র্ষণ ও যৌন নিগ্রহ সংক্রান্ত দণ্ডবিধি সংশোধনের কার্যকারিতা খতাইয়া দেখিতে গঠিত বর্মা কমিশন তাহার রিপোর্ট পেশ করিয়াছে। কমিশন মাত্র ২৯ দিনে তাহার কাজ শেষ করিয়াছে। এই তৎপরতা নজিরবিহীন, দৃষ্টান্তমূলক। তাহার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, কমিশন তাড়াহুড়া করিয়া কোনও মতে কাজ শেষ করিয়াছে। বস্তুত বিচারপতি বর্মা ও তাঁহার সহযোগীগণ গত মাসখানেক যাবৎ অসংখ্য মানুষের সাক্ষ্য লইয়াছেন, মহিলাদের লইয়া সামাজিক কাজ ও আন্দোলন করেন এমন বহু গোষ্ঠীর সদস্যের মতামত শুনিয়াছেন, ফৌজদারি আইন ও তাহার প্রয়োগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য অনুধাবন করিয়াছেন, তরুণ আইনজীবী, আইন পাঠরত পড়ুয়া বা সদ্য পাশ-করা আইনের স্নাতক এবং বিদ্বজ্জনদের মতামত শুনিয়াছেন এবং দেশের ভিতর ও বাহির হইতে পাওয়া ৮০ হাজারেরও বেশি সুপারিশ খতাইয়া দেখিয়াছেন। সুতরাং এ কথা বলার সুযোগ নাই যে, বর্মা কমিশন তড়িঘড়ি তাহার রায় দিয়া দিয়াছে। বরং কমিশনের কাজের দ্রুততায় নিষ্ঠা ও কর্তব্যপরায়ণতার প্রতিফলনই ঘটিয়াছে সর্বাধিক।
এই দ্রুততাকে দুইটি কারণে দৃষ্টান্তমূলক বলা যায়। এক, এ দেশে বিচারবিভাগীয় কিংবা প্রশাসনিক, যে-কোনও ধরনের কমিশনের ইতিহাসই হইল অপরিমেয় দীর্ঘসূত্রিতার ইতিহাস। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখানে কমিশনের কাজ শুরু করিতেই বেশ কয়েক মাস লাগিয়া যায়। কমিশন কোথায় বসিবে, সেই ঘর ঠিক করা, সেখানে প্রয়োজনীয় চেয়ার-টেবিল, টেলিফোন, শীতাতপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো ইত্যাদিতেই কয়েক মাস কাটিয়া যায়। তাহার পর ঢিমেতালে কমিশনের শুনানি শুরু হয়। বৎসর গড়াইতে থাকে, ক্রমে দশকও অতিক্রান্ত হয়, বারংবার কমিশনের মেয়াদ সম্প্রসারিত করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের ‘কাজের মেয়াদ’ও দফায়-দফায় বাড়িতে থাকে। কিন্তু কমিশনের কাজ আর শেষ হয় না, এক সময় লোকে কমিশনের কথা, তাহার বিচার্য বিষয়ের কথাও সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়। বর্মা কমিশনের তৎপরতাকে সেই প্রেক্ষিতে স্থাপন করিলেই তাহার নজিরহীনতা স্পষ্ট হইয়া যাইবে। দ্বিতীয় যে কারণে বর্মা কমিশনের তৎপরতা সাধুবাদযোগ্য, তাহা হইল, কেবল ধর্ষণ নয়, নারী নিগ্রহ, যৌন নিপীড়ন, বস্তুত সার্বিক ভাবে পিতৃতন্ত্রের লিঙ্গবৈষম্যমূলক ভাবনা ও আচরণ লইয়াই কমিশনকে মাথা ঘামাইতে হইয়াছে। বিষয়টি জটিল এবং বহুমুখী এবং বহুমাত্রিকও। ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ড দিবার কিংবা রাসায়নিক ভাবে নির্বীর্য করিয়া দিবার সমস্বর আবেগতাড়িত দাবিটিকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করা তো বাস্তবিকই কঠিন। এই প্রেক্ষিতে বিচার করিলে বিচারপতি জে এস বর্মার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ সংবলিত রিপোর্ট দাখিলের ঘটনাটি প্রশংসনীয়। বর্তমানে যে সকল কমিশন সক্রিয় কিংবা ভবিষ্যতে যে সব কমিশন গড়া হইবে, তাহাদের উপরও অজান্তেই চাপ সৃষ্টি করিয়া ফেলিল বর্মা কমিশনের এই তৎপরতার দৃষ্টান্ত।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.