ঋণ খেলাপ
হলদিয়া পেট্রোকেমের শেয়ার চায় পাওনাদারেরা
প্রায় রুগ্ণ রাজ্যের শো-পিস সংস্থা হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের সামনে নতুন সঙ্কট। দেনা না-মেটানোয় এ বার সংস্থার শেয়ার দাবি করল পাওনাদারেরা।
২০০৪ সালে নেওয়া একটি ঋণের গত জুলাই মাসের কিস্তি না-দিতে পারার কারণে আইডিবিআই প্রায় ৬১ কোটি টাকা এবং স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ৫৫ কোটি টাকার মতো শেয়ার পেট্রোকেমের কাছ থেকে দাবি করেছে। এ নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পরিচালন পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে।
রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “১ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে পরিচালন পর্ষদের সদস্যদের সামগ্রিক পরিস্থিতি জানানো হবে এবং তা নিয়ে আলোচনা করা হবে।” অন্য অংশীদাররা অবশ্য এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি।
শেয়ার পিছু ১০ টাকা দাম ধরলে সব মিলিয়ে প্রায় ১১ কোটি ৬০ লক্ষ শেয়ার এই দুই আর্থিক সংস্থার হাতে তুলে দিতে হবে পেট্রোকেমের অংশীদারদের। ওই শেয়ার হাতে পেলে স্টেট ব্যাঙ্ক বা আইডিবিআই তা অন্য কাউকে বিক্রি করে দিতে পারবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি। প্রসঙ্গত, এই মুহূর্তে পেট্রোকেমের বিভিন্ন অংশীদারের কাছে ১৬৮ কোটির মতো শেয়ার রয়েছে। শিল্প মহলের ধারণা, এই ভাবে চললে আর্থিক সংস্থাগুলিই হলদিয়া পেট্রোকেমের মুখ্য মালিক হয়ে উঠতে পারে। এবং এই ভাবেই সংস্থাটিকে অন্য কাউকে বিক্রি করে দেওয়ার পথ পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। তবে রাজ্য সরকার আগামী জুন মাসের মধ্যেই তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে ফেলতে চাইছে।
সৃষ্টি লগ্ন থেকেই অবশ্য বিতর্ক পেট্রোকেমের সঙ্গে ছায়ার মতো লেগে রয়েছে। ১৯৮৫ সালে আরপিজি গোষ্ঠীর সঙ্গে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পটি যৌথ উদ্যোগে তৈরি করার পরিকল্পনা নেয়। কিন্তু আরপিজি সরে দাঁড়ালে টাটা কেমিক্যালস প্রকল্পের অংশীদার হিসাবে যোগ দেয়। ১৯৯৩ সালে টাটা কেমিক্যালস প্রকল্পটি লাভজনক নয় এই যুক্তিতে সরে দাঁড়ায়।
শিল্পায়নের জন্য হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস জরুরি, এই যুক্তিতেই রাজ্য প্রকল্পটিকে আঁকড়ে ধরেছিল। আর্থিক সংস্থাগুলি এই প্রকল্পে বিদেশি বিনিয়োগ চেয়েছিল। কিন্তু কোনও বিদেশি সংস্থাই রাজি হয়নি এই প্রকল্পে টাকা ঢালতে।
এর পরে ১৯৯৪ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপে অনাবাসী শিল্পপতি পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, টাটা গোষ্ঠী এবং শিল্পোন্নয়ন নিগমের যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।
রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে তাদের ৬০ শতাংশ মালিকানা চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেয়। পেট্রোকেমের দুই প্রধান অংশীদারের মধ্যে চুক্তি হল, কেউ তাদের শেয়ার বিক্রি করতে চাইলে আগে অন্য অংশীদারকে তা কেনার সুযোগ দিতে হবে। এই মুর্হূতে ওই শেয়ার বিক্রির শর্ত ও মালিকানার অধিকার নিয়ে রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠী আদালতে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ে জড়িয়ে রয়েছে।
এই আইনি লড়াইয়ে অবশ্য সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে হলদিয়া পেট্রোকেমেরই। গত অক্টোবরে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সংস্থাটি কাঁচামালের ব্যবহার ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোনও রাসায়নিক প্রকল্পে ১০ টন মাল উৎপাদন করতে যা খরচ হয়, ১০০ টন করতেও তাই হয়। কমে খালি কাঁচা মাল কেনার খরচ। ফলে কম মাল উৎপাদন করলে উৎপাদনের গড় খরচ বেড়ে যায়। এত দিন পর্যন্ত পেট্রোকেমের মূল সমস্যা ছিল পুরনো ঋণের দায় সামলানো। তার সঙ্গে এ বার যোগ হল বাড়তি ক্ষতির বোঝা। পুরনো দায় শোধ করার পরে সংস্থাটি মাসে ৫০-৬০ কোটি টাকার লোকসানে চলছিল। তা এক ধাক্কায় বেড়ে হয়েছে ৭০-৮০ কোটি টাকা। পুজোর পরের তিন মাসে মোট ক্ষতি ২১০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছে।
স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে বলেন, “সংস্থাটি পুরো ক্ষমতায় উৎপাদন করলে ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে কাজ চালানোর ঋণ পেতে কোনও অসুবিধা হয়তো হত না।” কিন্তু পেট্রোকেম কর্তৃপক্ষ মনে করেন সেই মুহূর্তে এ ছাড়া তাঁদের সামনে কোনও পথ খোলা ছিল না।
গত ডিসেম্বরে পেট্রোকেমের ঋণের বোঝা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪০০ কোটি টাকার আশেপাশে। সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, তাদের নিট সম্পদের পরিমাণ ১৭৬০ কোটি টাকার মতো। বিআইএফআর-এর নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সংস্থার দায় বা ঋণের বোঝা যদি তার নিট সম্পদের সমান হয়, তা হলে তাকে রুগ্ণ বলে গ্রাহ্য করা হয়। ফলে রুগ্ণ শিল্পের তকমার থেকে মাত্র ৪০০ কোটি টাকা দূরে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.