তারাবাজি
স্টারডমে নেই অভিনয়ে আছি
বাড়িতে বসার ঘরে বাঁধানো আছে একটা কুড়ি টাকার নোট।
আশ্চর্য হচ্ছেন?
এটা সেই নোট যেটা পরিচালক রাজকুমার হিরানি ওঁকে দিয়েছিলেন ‘পিকে’ ছবির অডিশনের জন্য। ছবিতে তাঁর সহ-অভিনেতা আমির খান। রোলটা পেয়েই সুশান্ত কুড়ি টাকার নোটটা নিয়ে সোজা চলে যান ল্যামিনেট করাতে। যে পরিচালকের সঙ্গে কাজ করব বলে স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর সামনে অডিশন দিয়ে রোল পাওয়াটা তো ভাগ্যের ব্যাপার। সেই অনুভূতিটার স্মৃতি বাঁধিয়ে রেখেছেন সুশান্ত।
বলিউডের ‘নেক্সট বিগ স্টার’ সুশান্ত সিংহ রাজপুত। বয়স ২৭। একতা কপূরের ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালের নায়ক থেকে এখন সোজা বড় পর্দা কাঁপাতে তৈরি। প্রথম ছবি ‘কাই পো ছে’-র ট্রেলারেই বাজিমাত। এর পর আছে ইউটিভি-র সঙ্গে আরও একটা ছবির কনট্র্যাক্ট। যশরাজের ছবি করছেন। শাহিদ কপূরের পরিবর্তে তাঁকে নিয়েই ছবি করছেন ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’-এর পরিচালক মণীশ শর্মা। সহ-অভিনেত্রী পরিণীতি চোপড়া। আদিত্য চোপড়ার খাস নজরে তিনি। সুশান্তকে নাকি আদিত্য বলেছেন যে, ঠিক মতো চরিত্র বাছতে পারলে ও একদিন বলিউডে সবচেয়ে বড় তারকা হতে পারবে। হয়তো সে কথা শুনেই ইতিমধ্যে প্রায় ষোলোটি ছবি নাকচও করে দিয়েছেন।
আজকাল সেই যশরাজ ফিল্মস-এরই শু্যটিং করছেন সারারাত ধরে। দুপুরে ‘আনন্দ প্লাস’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারের সময় তাই তাঁর গলাটা ঘুমে জড়ানো। ক্লান্তি আছে। তবে ‘কাই পো ছে’-র প্রসঙ্গ উঠতেই একেবারে চাঙ্গা। বেশ উত্তেজিত হয়ে বলেন কী ভাবে জাহির খান আর আশিস নেহরা তাঁকে ক্রিকেটার হওয়ার বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা রপ্ত করতে সাহায্য করেছেন। “ওঁরা দু’জনেই তো ‘কাই পো ছে’ ছবির পরিচালক অভিষেক কপূরের বন্ধু। অভিষেক আমাকে আলাপ করিয়ে দেন ওঁদের সঙ্গে। তা ছাড়া রঞ্জি ক্রিকেটারদের সঙ্গেও ট্রেনিং করেছি আমি,” বললেন সুশান্ত।
আর এই জন্যই প্রায় সাড়ে তিন মাস ধরে রোদে-জলে পুড়ে খেটেছেন। দিদি মিঠু সিংহ ন্যাশনাল লেভেলে ক্রিকেট খেলেছেন। “দিদি তো অস্ট্রেলিয়াতেও গিয়েছিল ভারতের হয়ে খেলতে। ছবির শুটিং-এর আগে দিদির থেকেও টিপস নিয়েছিলাম।”
আর বিরাট কোহলি? “বিরাটের সঙ্গে মাঝে মধ্যে পার্টিতে দেখা হয়েছে। ও আমাকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেখার টিকিটও দিয়েছিল। ‘কাই পো ছে’ রিলিজ করলে, বিরাটকে বলব ছবিটা দেখে আম্পায়ারিং করতে। ওকে অনুরোধ করব আম্পায়ার হয়ে বলতে যে আমি ক্রিকেটারের বডি ল্যাঙ্গোয়েজটা ঠিকঠাক রপ্ত করতে পেরেছি কি না।”
যদিও ‘কাই পো ছে’ চেতন ভগতের ‘থ্রি মিসটেকস অব মাই লাইফ’ অবলম্বনে তৈরি, শুটিং-এর আগে বইটি পড়েননি। “চেতনের অন্য সব বই পড়েছি, এটা ছাড়া। রোলটা পাওয়ার পর অভিষেক কপূর আর পুবালি চক্রবর্তীর স্ক্রিপ্টটা পড়েই রীতিমতো ছিটকে গিয়েছিলাম,” সুশান্ত বলেন।
নিজের জীবনের ভুলের হিসেব করতে গেলে কোনটার কথা প্রথম মনে পড়বে? “অজস্র ভুল করেছি,” বলেই এক গাল হেসে বলেন, “আমি মাঝ পথে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে দিই। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়তাম। দশ লক্ষ ছাত্র সেখানে চান্স পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দেয়। আই জাস্ট ড্রপড আউট আফটার গেটিং থ্রু। হয়তো একজন যোগ্য ছাত্রকে বঞ্চিত করেছি। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভুল।”
তবে ‘ড্রপ আউট’ করার স্বভাবটা এখনও যায়নি সুশান্তের। “টেলিভিশনে ভাল কাজ করছিলাম। একটা স্টেডি জায়গা ছেড়ে দিয়ে সিনেমা করতে চলে এলাম। কী জানি এটাও ভুল হল কি না! মাঝখানে নিউ ইয়র্ক চলে যাচ্ছিলাম ফিল্ম মেকিং-এর একটা কোর্স করতে। তখন কিছু শর্ট ফিল্ম বানিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত সেটা আর করা হয়নি।”
তবে কিছু ঠিক আছে না কি! “আমি ‘এআইইইই’তে সপ্তম হয়েছিলাম। ন্যাশনাল অলিম্পিয়াড জিতেছিলাম পদার্থবিদ্যায়। সে সব ছেড়ে অভিনয়ে এলাম। হঠাৎ কোনও দিন সব কিছু ছেড়ে আবার হয়তো ছবি বানানো শিখতে যেতে পারি।”
আপাতত সুশান্ত অভিনয় নিয়েই ব্যস্ত। “আদিত্য স্যারের কাছে শেখা, সঠিক চিত্রনাট্য বাছতে পারাটাই হল সাফল্যের রেসিপি। আমি সেই ঘরানার অভিনেতা যার কাছে সিনেমাতে ছোট চরিত্র বলে কিছু হয় না। এটা রুশ নাট্য ব্যক্তিত্ব কনস্ট্যানটিন স্ট্যানিসল্যাভিস্কির কথা: ‘রিমেম্বার: দেয়ার আর নো স্মল পার্টস, ওনলি স্মল অ্যাক্টরস’।”
টেলিভিশন আর সিনেমার আগে থিয়েটারও করেছেন চুটিয়ে। শাহরুখ খানের থিয়েটার গুরু, ব্যারি জনের মন্ত্রেই দীক্ষিত সুশান্ত। আর ছিলেন নাদিরা বব্বর।
কে কেমন
ইমরান খান
খুব আকর্ষণীয়
রণবীর কপূর
খুব ভাল
রণবীর সিংহ
প্রচণ্ড উৎসাহী
দীপিকা পাড়ুকোন
সুন্দরী আর গুণী
অনুষ্কা শর্মা
প্রাণবন্ত
পরিণীতি চোপড়া
স্বতঃস্ফূর্ত
ফিল্মের শুটিং-এর মধ্যে দু’কোটি টাকার একটা অফার ছিল নিউ ইয়ার্স ইভে নাচ করার জন্য। শুধুমাত্র ‘ডি-ফোকাসড’ হওয়ার ভয়ে সেই অফারটা নেননি। নাচ শিখেছেন শামক দাভরের কাছে। “ঐশ্বর্যার সঙ্গে নেচেছি মুম্বইয়ের এক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। ‘বান্টি অউর বাবলি’তে তো অভিষেক বচ্চনের সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড ডান্সার হিসেবে নেচেছি। তবে সব কিছুর একটা সময় আছে। কেরিয়ারের এই স্টেজে আমি নিউ ইয়ার ব্যাশ-এ নাচতে চাই না,” বললেন সুশান্ত।
মাইকেল জ্যাকসন না হৃতিক রোশন? কার নাচ বেশি পছন্দ? “যখন বাচ্চা ছিলাম, প্রথম জ্যাকসনের নাচ দেখে তাক লেগে যায়। আর যাঁর নাচ আমি প্রথম মঞ্চে করি, তিনি হলেন হৃতিক রোশন।” ‘ঝলক দিখলা যা’ প্রতিযোগিতায় দশে দশ পাওয়া প্রায় অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। বিচারকের আসনে মাধুরী দীক্ষিত অভিভূত সুশান্তের স্টেপস দেখে। এখন ইচ্ছে ব্যালে শেখার। “চাই বলিউডের প্রথম ভাল ব্যালে ডান্সার হতে।” আর ‘গ্যাংনাম’ স্টাইল? স্টেপটা কি পছন্দ? ‘‘গ্যাংনাম স্টাইলের মধ্যে কিছু একটা আছে। তবে ওটা কি আমার জন্য ঠিক? জানি না।”
যেটা সুশান্ত জানেন সেটা হল, তাড়াতাড়ি এত কিছু পেয়ে গেলেও পা দু’টো মাটিতেই রাখতে হয়। কেরিয়ারের শুরুতেই যশরাজ, ইউটিভি, রাজু হিরানির কাজ করা হয়ে গিয়েছে। এর পর তা হলে কী? “আমার সব থেকে বড় ‘অ্যাড্রিনালিন রাশ’ হল ভাল চিত্রনাট্য। আমি যে কোনও পরিচালকের কাছেই অডিশন দিতে পারি।”
সুশান্তের মহিলা ফ্যানেরা পাগল তাঁকে নিয়ে। তবে সুশান্ত হয়তো এ বছরই বিয়ে করছেন। ‘পবিত্র রিস্তা’ সিরিয়ালের সহ-অভিনেত্রী অঙ্কিতা লোখন্ডেকে। “অঙ্কিতা খুব অনেস্ট। আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। সাড়ে তিন বছরের প্রেম আমাদের। এ বছরই ভাবছি বিয়েটা সেরে ফেলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.