হু ল্লো ড়
সাতাশ প্লাস প্লাস

সুনীল চলে গেছেন। নীরা আসলে কে, না বলে গিয়েই। নীললোহিতের খোঁজ কিন্তু পাওয়া গেছে।

তাই। কে?

আপনি! চিরকালীন সাতাশ বছরের যুবক।
না ভাই, আমি এখন টোয়েন্টি সেভেন প্লাস। নো লঙ্গার টোয়েন্টি সেভেন।

এটা আবার কবে ঘটল?
এ বছর অনেকে রিকোয়েস্ট করেছে। পায়ে পড়েছে, দাদা একটু বাড়ান। তাই টোয়েন্টি সেভেন প্লাস প্লাস করেছি।

মহিলাদের জন্য? তিরিশ?
যে যার মতো নিজেকে অ্যাডজাস্ট করে নিচ্ছে।

‘গোলমাল থ্রি’ আর ‘ওহ্ মাই গড’ হিট করার পর এখন আপনি বলিউডে ষাটোর্ধ্ব পার্শ্বচরিত্র হিসাবে সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
শুধু ওই দু’টো কেন? পরপর চারটে ছবি জমিয়ে চলেছে। এখন নিয়মিত এই স্লটটায় অফার পাচ্ছি।

এগুলো তো আর আগের মতো হিরোর রোল নয়। নায়িকারা যদি বা জড়িয়ে ধরে, সে বাবা বা কাকু হিসাবে। পরিস্থিতিটাই তো পুরো বদলে গেল।
এত আনন্দ পাবেন না। রিয়েল পরিস্থিতি হল, যা ছিল তাই আছে।

মানে?
মানে, হিরোইনরা ক্যামেরার সামনে যতই স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী কাজ করুক। ক্যামেরার বাইরে পুরোনো অভ্যেসই বজায় রেখেছে।

এই যে এত বছর ধরে মহিলাদের জন্য চুম্বক হয়ে থেকে গেলেন। এর রাজ কী?
হু। টিপস্ হল, সৎ হও। নিজেকে অ্যাট্রাকটিভ রাখো। সুন্দর করে হাসো। সোবার হও। সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট পুরুষমানুষ হতে শেখো।

পুরুষ বলতে?
পুরুষ বলতে, মহিলার জন্য চেয়ারটা টেনে দাও। সে দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে বসতে দাও। গোপনীয়তা রক্ষা করো। কিস অ্যান্ড টেল-এর মধ্যে কখনও যেও না। আমি করি না।

সাঁয়ত্রিশ বছর হয়ে গেল ইন্ডাস্ট্রিতে। আজ কি মনে হয় অসম্ভব শৃঙ্খলাই আপনাকে ভাসিয়ে রেখেছে?
আমার মনে হয় ট্যালেন্ট ভাসিয়ে রেখেছে। ওনলি ট্যালেন্ট সেলস্। যদি কেউ দারুণ অভিনেতা হয়, ডিসিপ্লিন কম থাকলেও সে চলে যাবে। কিন্তু ট্যালেন্ট না থাকলে তাকে হামাগুড়ি দিতে হবে।

এত বছর ধরে যে সব অভিনেতা অভিনেত্রী দেখলেন, তাদের মধ্যে কারও থেকে কিছু ধার করার থাকলে, কোন গুণটা ধার করতেন?
(একটু আনমনা) এডুকেশন। এডুকেশন থাকলে আমি আরও বড় সুপারস্টার হতাম।
তাই শিক্ষার অভাব বোধ করেন?
ইয়েস আই মিস ইট। এটা আমার একটা ঘাটতি থেকে গেছে। আমি কিন্তু ডিগ্রি পাওয়ার শিক্ষার কথা বলছি না। আমি বলছি সেই শিক্ষার কথা যা ছোটবেলায় সাহস দেয়, কনফিডেন্স দেয়। এক এক সময় মনে হয় আমি যদি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ার সুযোগ পেতাম। আমি যদি কনভেন্টে যেতে পারতাম, তাহলে হিসেবটাই অন্য রকম হত। আমার জার্নিটা আরও স্মুথ হত। যোগাযোগের ব্যাপারে এত পিছিয়ে থাকতাম না।

শুনেছি ইংরেজি না বলতে পারার জন্য এক সময় নানান অপমানের সম্মুখীন হয়েছিলেন।
প্রচুর হতে হয়েছে। এমনিতেই বাঙালি বলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ধুরছাই ব্যাপার থাকে। তার ওপর ইংলিশ না বলতে পারলে আর একটা বড় প্রবলেম। তার পর আমাদের অ্যাকসেন্ট, যা নিয়ে হাসিঠাট্টা লেগেই থাকে। কত যে অপমান সয়েছি। কত যে লোকে হেয় করেছে (দীর্ঘ নিশ্বাস টেনে) চলো, ঠিক হ্যায়। টুডে আই ডোন্ট কেয়ার। আমার কিছু এসে যায় না।

এত বছর পরেও আপনিই শেষ। আর কোনও বাঙালি হিরো হল না বলিউডে? দেব, জিৎদের কি চেষ্টা করা উচিত ছিল?
কেন হল না বলতে পারব না। আমার ধারণা, মুম্বই গিয়ে চেষ্টা করলে ওরা পারত। প্রবলেম হল দেব বা জিৎ, এরা টালিগঞ্জে খুব সাকসেসফুল হয়ে গেছে। এখানে এক নম্বর হয়ে ওখানে দশ থেকে শুরু করবে কী করে? আইডিয়ালি মুম্বইতে সফল হতে গেলে ওখানে থেকে স্ট্রাগল করতে হবে। এখানকার কোনও ব্যাগেজ থাকলে হবে না। এখানকার সাকসেসটা উল্টে ডিসকোয়ালিফিকেশন হয়ে যাবে। আর একজন যে অবশ্যই পারত সে হল বুম্বা। বুম্বা ওয়াজ আ ভেরি গুড লুকিং বয়। বুদ্ধিটাও রাখে। কিন্তু ও-ও এখানে এত সাকসেসফুল যে, মুম্বইতে সেটল করল না।

বেশ কিছুদিন হল, আপনার নতুন নামকরণ হয়েছে এমজি...
এটা হয়েছে ‘ডান্স বাংলা ডান্স’ আর ‘ডান্স ইন্ডিয়া ডান্স’ থেকে। আট থেকে আশি, এয়ারপোর্টে-রেল স্টেশনে এমজি বলে ডাকছে। কেউ বলছে গ্র্যান্ড মাস্টার। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে মিঠুন নামটা কি ভুলে গেল নাকি (হাসি)?

তাতে তো কোনও সমস্যা নেই। যাদের মনে রাখার ঠিক রেখেছে।
ওই আবার এল... (হাত দেখিয়ে বোলিংয়ের মুখভঙ্গি)।

এখন যে ফেজটা আপনার মুম্বইয়ে চলছে সেটা নিশ্চয়ই খুব উপভোগ করছেন?
খূব করছি। আগে আমায় প্রোডিউসাররা বলত পাঁচটা গান, পাঁচটা নাচ, পাঁচটা ফাইট তোমাকে করতেই হবে। তখনকার প্রেশারটাই অন্য রকম ছিল। প্রতি শুক্রবার তখন আমার বাজেট আউট হত। আমার নতুন ছবি ব্যবসা করল কি করল না তার ওপর ঠিক হত আমার ইম্পর্ট্যান্স। কী ভয়ঙ্কর সেই দিনগুলো ছিল। এখন সেই কমপালশন নেই। অনেক রিল্যাক্সড্ থাকতে পারি। অ্যাক্টিংয়ে মন দিতে পারি।

আর অ্যাক্টিং তো আপনার বরাবরের স্ট্রং পয়েন্ট। ভাবতেই হয় না।
আরে না না। অ্যাক্টিং নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনও জায়গাই নেই। অ্যাক্টিং ব্যাপারটা হল সমুদ্রের মতো। যতই সিনিয়র হোন না কেন সমুদ্র সমুদ্রই থাকে। আজও তাই ছবির প্রথম দিন যখন সেটে যাই, একেবারে নিউকামারের মতো যাই।

ছবির প্রথম দিন আজও গৌরাঙ্গ সেটে যায়? মিঠুন নয়?
একদম তাই। তার ওপর আমার যে ইনসিকিওরিটি রয়েছে, সেটাও খোঁচাতে শুরু করে।

আপনার আবার কী ইনসিকিওরিটি? কোটি কোটি টাকার মালিক, পাঁচটা হোটেল, ফিল্ম, ব্যবসা।
আসলে জীবনে এত আঘাত পেয়েছি যে, ইনসিকিওরিটিটা যায়নি। রক্তের দাগ আজও আমার শরীরে। আজও তাই মাটি কামড়ে চলি। ভাল হলেও বিশ্বাস করতে পারি না ভাল হয়েছে। দাগগুলোকে অবিশ্বাস করি কী করে?

সেগুলো এত গভীর?
হ্যাঁ, এতটাই ডিপ কাট যে, সেলাই করার পরেও ওষুধ লাগাতে হয়। এত কিছু বয়ে গেছে আমার ওপর দিয়ে। এত অপমান, এত তাচ্ছিল্য পেয়েছি, এমন ভাবে পিষেছে সবাই আমাকে যে, সেই চোট এত তাড়াতাড়ি সারে কী করে?

যেমন?
যেমন আর বলতে চাই না। বেশ কয়েকবার বলেছি। কিছু কিছু লিখেওছি। আজও যেন মনে হয় আমি, এই একটা মানুষের ওপর দিয়ে হাজার হাজার লোক বুটবাজি করে হেঁটে গিয়েছে। তার তলায় আমি...

আজও বুটের আওয়াজ শুনতে পান?
আজও সেই বুটের আওয়াজ শুনি। কিন্তু পরিবারের কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারি না। কেউ বুঝবে না, ফিলও করবে না। আমার তিন ছেলে, এক মেয়ে। আমি চাই ওরা ভাল থাক, সুখে থাক।

‘ওহ্ মাই গড’ ছবিতে মিঠুন

অমিতাভ বচ্চনকে হিংসে হয়? আপনাদের সম্পর্ক ভাল কি?

হঠাৎ এই প্রশ্ন? আমাদের তো সম্পর্ক ভাল। এই তো সেদিন ওঁর সত্তরতম জন্মদিনে যাওয়ার জন্য অভিষেক ফোন করেছিল। জয়াদি নিজে ফোন করেছিলেন। আমি শহরে ছিলাম না বলে যেতে পারিনি।

বচ্চন হওয়ার রেসিপি কী দেখলেন কাছ থেকে?
অনেক কিছু মিলে কাজ করেছে। ট্যালেন্ট, ডিসিপ্লিন, এডুকেশন, নলেজ। ওঁর কাছে অনেক কিছু শেখার আছে।

উপাদান যা যা বললেন, এর সঙ্গে ব্যাকগ্রাউন্ড যোগ হবে?
হ্যাঁ, ব্যাকগ্রাউন্ড যোগ হবে। ওটাও একটা ফ্যাক্টর।

কখনও মনে হয়েছে, আমাদের দৌড়টাই কিছুটা অন্যায্য হল? আমি শুরু করলাম মথুর সেন লেনের এঁদো নর্দমা থেকে। আর ও উঠে এল স্বয়ং দেশের প্রধানমন্ত্রীর চিঠি হাতে নিয়ে। প্রথমেই তো কত হ্যান্ডিক্যাপ পেয়ে গেল।
আমার মনে হয় না প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটা মিস্টার বচ্চনকে বাড়তি সাহায্য করেছে। হ্যাঁ, প্রোডিউসর কী ডিরেক্টর আমাদের হয়তো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘরের বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ওঁকে বসতে দিয়েছে। এইটুকুই তফাত। প্রচুর স্ট্রাগল উনিও করেছেন।

পরপর এই যে সব লেজেন্ড চলে যাচ্ছেন। শাম্মী কপূর, দেব আনন্দ, রাজেশ খন্না। মৃত্যুর এমন স্রোত দেখে কী অনুভুতি হচ্ছে?
আরও ভাল করে দেখছি যে, কেউ অমর নয়। অথচ সবাইকে মুম্বইতে দেখি অমরত্ব প্রাপ্তির জন্য কী জোর দৌড়চ্ছে। রোজ চোঁ-চা দৌড়চ্ছে। কেউ অমর হবে না, তাই আমি দৌড়ে থাকি না। সেজন্যেই পেজ থ্রিতে থাকি না। বেঁচে থাকতে থাকতে যদি দেখতে পেতাম, হ্যাঁ আমার কাজটা ইমর্ট্যাল হয়ে গেছে, তাহলে না হয় দৌড়নো যেত!

কী বলছেন? রাজেশ, দেব আনন্দ এঁরা অমর নন?
চোখ খুলে ওঁরা কি দেখতে পাচ্ছেন অমর হয়েছেন? তা হলে আর লাভ কী হল? ভাই বাংলা কথা বলি, সবাই নশ্বর। সবাইকে চলে যেতে হবে। পাগলের মতো দৌড়ে কোনও লাভ নেই।

এখন কোথায় বেশি থাকেন? উটিতে না মুম্বইতে?
দু’জায়গাতেই মিলেমিশে থাকি।

মহিলারা কোন মিঠুনকে বেশি চায়? উটির না মুম্বইয়ের?
সেটা বয়সের ওপর নির্ভর করে।

বেশি বয়সিরা কোথায় যায়?
ইয়র্কার দিয়ে লাভ নেই। বলব না।

শোনা যায় রোজ রাতে নাকি আপনি ফুটবল দেখেন। সে সঙ্গে মহিলা থাকুক আর না থাকুক।
আমি রোজ রাত্তিরে ফুটবল দেখি। পাগলের মতো মেসিকে দেখি।

মেসি না রোনাল্ডো?
মেসি। রোনাল্ডোর সব আছে। দুর্দান্ত। কিন্তু কোথাও যেন একটা হালকা ফিনেসের তফাত আছে।

মারাদোনা?
না, মেসি আগে। মারাদোনার খেলা আমরা বহু দেখেছি। টোটালিটিতে আমার পছন্দ মেসি। পরপর চারবার ওয়ার্ল্ড ফুটবলার অব দ্য ইয়ার তো এমনি এমনি হয়নি।

গভীর রাতে মেসির একটা ডজ দেখে পর দিন সকালে শুটিংয়ে গেলে কি খুব ইন্সপায়ার্ড লাগে?
ইন্সপায়ার্ড ঠিক নয়, তবে প্রতিভার সেই এক্সপ্রেশনটা মনে থেকে যায়। আমার মধ্যে মেসির চেয়েও বেশি ইমপ্যাক্ট করে ফার্নান্ডো টোরেস। টোরেসের সঙ্গে আমি নিজেকে খুব আইডেন্টিফাই করতে পারি। টোরেস মাঠে নামলে একটা অদ্ভুত চেঞ্জ হয়। ওর মধ্যে সব সময় অনেক কিছু বেঁচে থাকে। এইটা মাঝরাত্তিরে টিভি দেখতে দেখতে আমার দারুণ লাগে। পরের দিন সকালে উঠে মনে হয়, ইয়েস! না-উ! না-উ! গো গোও গোও ফর ইট।

২৬ জানুয়ারি আবার বাঙালির হতাশার দিন আসছে। প্রজাতন্ত্র দিবসে অনেকের নাম পদ্মশ্রী বা পদ্মভূষণের জন্য ঘোষিত হবে। তার মধ্যে অবশ্যই কোনও মিঠুন চক্রবর্তী থাকবেন না।
নো কমেন্টস্ (একটা দীর্ঘশ্বাস)। এত দিনে বুঝে গেছি পলিটিক্যালি অ্যাকটিভ না হলে ওটা হওয়ার নয়। তার বাইরেও অনেকে পেয়েছে। কিন্তু সেটা খুব সামান্য।

‘ইংলিশ ভিংলিশ’ দেখলেন? ফিরে আসার পর শ্রীদেবীকে?
না না, ও সব আমি দেখিনি। আমি কী করে মন্তব্য করব। (কিছু পরে আবার মত পাল্টে) হ্যাঁ ঠিক আছে, ওটা ভাল হয়েছে।

এই তো বললেন দেখেননি।
আমি রিভিউ পড়েছি তো। সেটা থেকেই বলছি ভাল হয়েছে।

ইয়র্কারে আপনার ব্যাট এত তাড়াতাড়ি নামে কী করে?
তার কারণ আমি শুধু বল দেখি না। বোলারের চোখও দেখি। আই কনট্যাক্ট থাকলে ঠিক বোঝা যায় কোন বলটা নামছে। তখন ঠিক ব্যাটটা নামিয়ে দাও... ঢাক ঢাক (একগাল হাসি)।
ছবি: কৌশিক সরকার



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.