বিক্ষিপ্ত ভাবে বিকল হয়ে পড়া নতুন কেনা উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাস মেরামতির দায়িত্ব নিচ্ছে নির্মাতা সংস্থা। এনবিএসটিসি সূত্রেই জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে নির্মাতা সংস্থার তরফে একাধিক বাস মেরামত করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই সংস্থার ইঞ্জিনিয়াররা অন্য বাসগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দরকার হলেও মেরামত করে দেবেন বলেও আশ্বাস দিয়েছেন বলে নিগম কর্তাদের দাবি। নিগমের পরিচালন বোর্ডের সদস্য আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “নির্মাতা সংস্থার লোক এসে কয়েকটি বাস মেরামত করেছেন। ওদের ইঞ্জিনিয়ররা রক্ষনাবেক্ষণও করবেন বলে জানানো হয়েছে। ওয়্যারেন্টি পিরিয়ড থাকায় সমস্ত দায়িত্ব তারাই নিচ্ছেন।”
একই সঙ্গে সংস্থার পরিচালন বোর্ডের ওই সদস্যের বক্তব্য, নতুন বাস পর পর খারাপ হলেও সংস্থা কে দায়ী করা যায় না। ত্রুটি কিছু থাকলে সেটা নির্মাতা সংস্থার। ওই সংস্থার হয়ে সাফাই দিতে চাই না। সংস্থার পরিচালন বোর্ডের অপর সদস্য মিহির গোস্বামী অবশ্য বলেছেন, “ছোটখাটো যান্ত্রিক গোলযোগ হতে পারে। এটা বড় করে দেখানর মত ব্যাপার নয়। একটা মহল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে অপপ্রচার হচ্ছে।” নিগমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ এসব নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এই ব্যাপার নিয়ে যা বলার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রীকে বলব।”
এনবিএসটিসির পরিচালন বোর্ডের ম্যানেজিং ডাইরেক্টরের অপসারণের দাবি তুলেছেন বিরোধীরা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরী বলেন, “বাসের প্রকৃত দাম যা বলা হচ্ছে তা দিয়ে কেনা হলে এত দ্রুত পর পর বাস খারাপ হত না। বাস ফেরত দেওয়ার কথা না বলে কেন নির্মাতা সংস্থার হয়ে সাফাই দেওয়া হচ্ছে? এতে দুর্নীতির সন্দেহ বাড়ছে। আমরা পুরো বিষয়টির জুডিশিয়াল তদন্তের দাবি করছি।” ফরওয়ার্ড ব্লক কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “একটা বাস বিক্ষিপ্ত ভাবে খারাপ হলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু একযোগে ৭টি বাস বিকল হলে সরকারের বিষয়টা দেখা দরকার।” বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহও ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “বাম আমলের দুর্নীতির ধারা একই ভাবে চলছে। জনসাধারণের টাকা নয়ছয়ের তদন্ত হওয়া উচিত। যাঁরা ওই কেনার সঙ্গে যুক্ত তাঁদের সরিয়ে ঘটনার তদন্ত হোক। রাজ্যপালের কাছে বিষয়টি জানানো হবে।”
নিগম কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানাচ্ছে, বাসগুলি রাজ্য পরিবহন দফতরের উদ্যোগে কেনা হয়। এতে ৩৫ টি বাসের প্রত্যেকটি তে সংস্থার প্রায় ৬ লক্ষ টাকা করে সাশ্রয় হয়েছে। নিগমের এমডির উদ্যোগে প্রতিটি বাস কেনার ক্ষেত্রে অনেক টাকা শাশ্রয় হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই কোটি টাকা এনবিএসটিসির বেঁচেছে বলে দাবি করেছেন চেয়ারম্যান গৌতম দেব। গৌতমবাবু বলেন, “এমডি পরিবহণ দফতরের মাধ্যমে ওই গাড়ি কিনেছেন। এতে আড়াই কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এতগুলো গাড়ি কেনা হয়েছে। কয়েকটিতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওয়ার্যান্টির মধ্যেই গাড়িগুলি রয়েছে।” এদিকে, তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল প্রকাশ্যে। আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি প্রাণেশ ধর বলেন, “আব্দুর রহমান এনবিএসটিসি ড্রাইভার্স অ্যান্ড তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের কেউ নন। মঙ্গলবার সদস্যরা বৈঠক করে ওঁকে সরিয়ে দেন। আমি এখন ওই কমিটির সভাপতি। কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রেজ্জাক। বুধবার প্রাণেশবাবুর সাক্ষরিত ওই ইউনিয়নের নতুন পদাধিকারীদের তালিকাও সংবাদমাধ্যমের হাতে তুলে দেওয়া হয়।” অন্য দিকে আব্দুর রহমানের দাবি, “আমিই সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি। আমার পরে যে দলে এল সেই প্রাণেশবাবু আমাকে সরানোর কে? তা ছাড়া আমাকে দলের জেলা সভাপতি ও সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেন দায়িত্ব দিয়েছেন। এসব করে আমাকে আটকানো যাবে না। পরিবহণমন্ত্রীকে নিম্নমানের বাস নিয়ে অভিযোগ জানাব।” |