|
|
|
|
নেতাজি-বিতর্ক উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিধানচন্দ্র রায় চেয়েছিলেন। আপত্তি উঠেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চাইছেন। তখনও প্রতিবাদ হচ্ছে।
সময় এগোচ্ছে। নেতাজি-বিতর্কের ‘মৃত্যু’ হচ্ছে না!
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর স্মৃতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কোদালিয়ায় সৌধ নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা করে সেই বিতর্কই ফের সামনে এনে ফেললেন মুখ্যমন্ত্রী। নেতাজির নামে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের চেষ্টা তারা কোনও ভাবেই মেনে নেবে না বলে পত্রপাঠ জানিয়ে দিল সুভাষচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত দল ফরওয়ার্ড ব্লক। তাদের প্রশ্ন, যাঁর মৃত্যুর কোনও প্রামাণ্য তথ্যই নেই, তাঁর নামে স্মৃতিসৌধ হয় কী করে?
নেতাজির পৈতৃক বাড়ি কোদালিয়ায়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেখানে নেতাজির নিজের নামে চার-পাঁচ কাঠা জমিও রয়েছে। ওই জমির উপরেই স্মৃতিসৌধটি তৈরি করবে রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী যার নামকরণ করেছেন ‘নেতাজি সুভাষ মনুমেন্ট’ হিসেবে। সেই সঙ্গে মমতা জানিয়েছেন, কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক বাড়িটি যত্ন করে সাজিয়ে-গুছিয়ে সত্যিকার ‘হেরিটেজ বিল্ডিং’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। দু’টি কাজেরই সময়সীমা আগামী ২২ জানুয়ারি ধার্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এ দিন বলেছেন, “নেতাজি ভবনের কাজ ও গবেষণা যেমন চলছে, চলবে। এর পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকে কোদালিয়ার নেতাজির নিজের নামে যে জমি রয়েছে, তার উপরেই নেতাজি সুভাষ মনুমেন্ট তৈরি করব। সেখানে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং নেতাজির জীবন ও সংগ্রামের কাহিনি থাকবে।”
নেতাজির মৃত্যু নিয়ে বিতর্কের কথা অবশ্য মমতার অজানা নয়। নেতাজির ১১৭তম জন্মদিনে বুধবার নেতাজি ভবনের এক অনুষ্ঠানে সৌধ গড়ার ঘোষণার পাশাপাশিই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “নেতাজির জন্মদিনটা আমরা জানি। কিন্তু শেষে তিনি কোথায় গেলেন, আমরা জানি না। এ দুঃখ আমাদের চিরকালের। গোমো থেকে বেরিয়ে তিনি কোথায় গেলেন, আমরা জানি না।”
সুভাষচন্দ্র বেঁচে থাকলে এখন তাঁর বয়স হওয়ার কথা ১১৭! অতীতে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বিধানচন্দ্র যখন কার্জন পার্কে নেতাজি সৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন, বাধা দিয়েছিলেন ফব-র হেমন্ত বসুরা। |
দুই চিত্র |
|
|
২০১২ সালে রেড রোডের নেতাজি-মূর্তিতে মালা দেওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিল
সিঁড়ি। সাজানো হয়েছিল তেরঙ্গা দিয়ে (বাঁ দিকে)। এ বছর রাজ্য সরকারের
নেতাজি-জয়ন্তীর অনুষ্ঠান এলগিন রোডের নেতাজি ভবনে সরে যাওয়ায়
রেড রোডে আর সেই আড়ম্বর ছিল না। —নিজস্ব চিত্র |
|
এখন রুখে দাঁড়িয়েছেন অশোক ঘোষেরা। তা হলে তাঁরা কি এখনও বিশ্বাস করেন যে, নেতাজি জীবিত? ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবুর জবাব, “নেতাজির মৃত্যুর প্রামাণ্য তথ্য কোথায়? জন্ম এবং মৃত্যুদিন উল্লেখ করে তবেই স্মৃতিসৌধ হয়। যে চেষ্টাই হোক, মুখ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন, নেতাজির নামে স্মৃতিসৌধ আমরা হতে দেব না!”
অশোকবাবুই জানাচ্ছেন, বিধানচন্দ্র হেমন্তবাবুকে ডেকে বলেছিলেন, নেতাজি আর জীবিত নন। জওহরলাল নেহরু তাঁকে এমনই জানিয়েছেন বলে দাবি করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। হেমন্তবাবু তখনও জানিয়েছিলেন, তাঁদের দল এই চেষ্টা মানবে না। অশোকবাবুও এত বছর পরে সেই কথাই বলছেন। তাঁর আরও সংযোজন, “এই কারণেই আমরা নেতাজিকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলাম। প্রতিবাদের মুখে কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে সেই সুপারিশ প্রত্যাহার করতে হয়েছিল।” কয়েক বছর আগে অবশ্য রেলমন্ত্রী মমতা নেতাজিকে ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন। তা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল। সংসদের প্রকাশিত একটি পুস্তিকায় সম্প্রতি নেতাজির মৃত্যুদিন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ তারিখটি। যা বহুচর্চিত সেই তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনার দিন। প্রতিবাদের মুখে সেই তথ্যও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয় ওই পুস্তিকা থেকে।
সোমবার ক্যানিংয়ে সরকারি অনুষ্ঠান সেরে ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রী কোদালিয়ায় নেতাজির পৈতৃক বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে মমতার মনে হয়, ঐতিহাসিক ওই বাড়ি ও জায়গার রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আগে ওই বাড়ি হেরিটেজ হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তা নেহাতই কাগজে-কলমে। আমরা ওটাকে যত্ন করে, সুন্দর করে সাজিয়ে দেব।”
এই ব্যাপারে রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নের সম্মতিসূচক চিঠিও পাওয়া গিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান।
এ ব্যাপারে নেতাজির উত্তরপুরুষ, ইতিহাসবিদ সুগত বসু বলেন, “নেতাজিকে সম্মান জানানোর জন্য সৌধ গড়ার সিদ্ধান্তে আমরা আনন্দিত। মুখ্যমন্ত্রীকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি।” কিন্তু এর ফলে নেতাজির মৃত্যু-বিতর্ক তো আবার সামনে চলে এল? সুগতবাবু তার উত্তরে বলেন, “আজ ২৩ জানুয়ারি। এই দিনে অন্য কোনও বিতর্কে ঢুকতে চাই না।” |
|
|
|
|
|