প্রজাতন্ত্র দিবসের ঝলমলে সকাল। কুচকাওয়াজে মেতে উঠেছে দিল্লির রাজপথ। আর ছৌ-এর লহর তুলে তাতে পা মিলিয়েছে কিছু কুচোকাচা।
এগারো বছর আগে হাঁ করে টিভি-র পর্দায় সেই দৃশ্য দেখেছিল পুরুলিয়া তো বটেই, তামাম বাংলাও। আর এক দিন বাদেই রাজধানীর পথে ফিরতে চলেছে সেই দৃশ্য। ফারাক শুধু একটাই। সে বার রাষ্ট্রপতি ছিলেন কে আর নারায়ণন, আর এ বার প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছৌ-শিল্পীরা কলকলিয়ে উঠবে তাঁর দেশের ভাষাতেই।
প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছে বলরামপুরের সুরেন্দ্র সিংহ, নরেশ টুডু, আশুতোষ সিংহ সর্দারেরা। প্রজাতন্ত্র দিবসের শিশু-কিশোর প্রদর্শনী বিভাগে রাষ্ট্রপতির সামনে মহিষাসুরমর্দিনী পালা করবে বলরামপুরের ‘রয়্যাল ছৌ একাডেমি’-র খুদে শিল্পীরা। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের অধিকর্তা অনুপ মতিলাল বলেন, “দেশের সাতটি আঞ্চলিক সংস্কৃতি কেন্দ্রের মধ্যে শুধু বলরামপুরের দলটিই এ বার এই বিভাগে শিল্পকলা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে।” |
“২০০২ সালেও আমরা এক বার দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছিলাম” নয়াদিল্লি রওনা দেওয়ার আগে বলছিলেন দলটির নৃত্য সঞ্চালক জগন্নাথ কালিন্দী। তবে প্রথম বারের তুলনায় এ বার তাঁরা একটু অন্য রকম উদ্বেগে রয়েছেন। জগন্নাথবাবুর কথায় মিলে-মিশে যায় গর্ব আর চাপা উত্তেজনা, “খোদ প্রণববাবুর সামনে অনুষ্ঠান করতে হবে তো! সেখানে বাংলা আর বাঙালির মান রাখার পুরো দায়িত্বটাই আমাদের। সে কি কম কথা?” গর্বিত তাঁর দলের রাজেন মুর্মু, মন্টু মাহাতো, প্রণয় সিংহ সর্দারেরাও। তবে বুক গুরগুর করছে সবারই।
মহিষাসুরের নাচের তালিম নিয়ে নয়াদিল্লি রওনা দেওয়ার আগে শিল্পী ভুবন সিংহের প্রতিক্রিয়া, “আমার খুব ভয় হচ্ছে। ওখানে কত লোক থাকবে!” নরেশ টুডু ও সুরেন্দ্র সিংহের কথায়, “প্রণবদাদু বাংলার মানুষ হলেও রাষ্ট্রপতি তো! একটু ভয় তো হচ্ছেই।” পালায় দুর্গা ও কার্তিকের ভূমিকায় নাচবে মন্টু মাহাতো ও রাজেন মুর্মু। তাদের একটাই কথা, “আমাদের নাচ দেখে সবাই খুশি হলে পরিশ্রম সার্থক হবে।” জগন্নাথবাবু অবশ্য মনে করছেন, নিজেদের স্বাভাবিক নাচ দেখাতে পারলে রাষ্ট্রপতি তো বটেই, গোটা দিল্লিরই মন ভাল হয়ে যাবে।
আশায় আছেন বলরামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোও। তাঁর মতে, “পুরুলিয়ার ছৌ বিশ্বের দরবারে একটা আলাদা স্থান করে নিয়েছে। এই খুদে শিল্পীরা তারই উত্তরাধিকার বহন করছে। ওদের এই সুযোগ পাওয়াটা আমাদের কাছেও সম্মানের।” অনুষ্ঠান সেরে ফিরলে খুদে শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও তিনি জানিয়ে দেন।
আপাতত অপেক্ষা শুধু রোদ-কুয়াশায় মোড়া সকালে ধামসার আওয়াজ, লাফিয়ে ওঠা শরীর আর ইয়াব্বড় মুখোশে তিরতির কাঁপনের।
চলো দিল্লি! |