খেলতে খেলতে পাশাপাশি বাড়ির শিশুদের মধ্যে বচসা হয়েছিল। হাতাহাতিও। তার জেরে গুলি করে মেরে ফেলা হল সাত বছরের একটি বালককে। মঙ্গলবার রাতে টিটাগড়ের এমকো চটকলের কুলি লাইনের এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন প্রশাসন। কারণ খুনের ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্তের বয়স সাকুল্যে ১৪। গুলি চালায় তার প্রায় সমবয়সি সঙ্গী। বিলেত-আমেরিকায় কিশোরদের এমন অপরাধ নতুন নয়। কিন্তু রাজ্যে এই ধরনের খুনের নজির পুলিশ-প্রশাসনের কাছেও খুব বেশি নেই।
পুলিশ জানায়, নিহত শিশুটির নাম রাহুল গিরি। জোর করে দরজা খুলিয়ে আরমান নামে প্রতিবেশী এক কিশোর এবং তার সঙ্গী খুন করেছে বলে জানান রাহুলের মা মিলনদেবী। তিনি বলেন, ‘‘আরমান আমাদের গালাগালি করতে করতে বলছিল, ‘মুসা গুলি করে দে।’ তার পরেই আমার ছোট ছেলেকে গুলি করল। ছিটকে পড়ে ছটফট করতে করতে মরে গেল ছেলেটা।” জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এক জনের নাম মুসা। তবে এই মুসাই অভিযুক্ত মুসা কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। খুনিরা আগ্নেয়াস্ত্র কোথায় পেল, সেই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। হদিস মেলেনি আগ্নেয়াস্ত্রটিরও।
ঠিক কী ঘটেছিল? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিকেল ৪টে নাগাদ। রাহুলদের বাড়ির সামনে খেলছিল রাহুল এবং তার সমবয়সি আজমেরি ও গুড়িয়া। আজমেরি খেলতে খেলতে রাহুলকে চড় মারে। রাহুল আজমেরির মায়ের নাম করে গালাগালি দেয় বলে অভিযোগ। ছোটদের মধ্যে হাতাহাতি হতে দেখে বড়রা ছাড়িয়ে দেন। সন্ধ্যায় আজমেরির পরিবারের লোকেরা রাহুলদের বাড়িতে চড়াও হলে ফের ঝগড়া বাধে। রাহুলের বাবা লক্ষ্মণ গিরি বলেন, ‘‘হাত জোড় করে ছেলের হয়ে ক্ষমা চেয়ে বলেছিলাম, ছোটদের খেলার ঝামেলা তো সেখানেই মিটে গিয়েছে। আর অশান্তি কেন? চলে যায় ওরা। রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এসে ছেলেটাকে খুন করে গেল।’’
দরজা ভেঙে ফেলার উপক্রম করায় ভয়ে দরজা খুলে দিয়েছিলেন লক্ষ্মণবাবুই। পুলিশ জানায়, আজমেরি ও গুড়িয়ার দাদা আরমান এক সঙ্গীকে নিয়ে ঘরে ঢুকেই রাহুলের খোঁজ করে। বাধা দিতে গেলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে শোয়ার ঘরের দরজার কাছে পৌঁছে যায় তারা। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল রাহুলের দাদা, বছর দশেকের গোবিন্দ। চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে দাদার পিছনে এসে দাঁড়ায় রাহুল। আচমকাই গুলি চালায় আরমানের সঙ্গী। গোবিন্দের গা ঘেঁষে গুলি গিয়ে লাগে রাহুলের বুকে। বিছানার কাছে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাহুলের।
ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত ডিসি শুভঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কমবয়সিদের মধ্যে এ ভাবে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ঘটনা চিন্তার বিষয়। অভিযুক্তেরা সপরিবার পলাতক। খুনিরও খোঁজ চলছে।’’ রাহুল-হত্যায় উঠে এসেছে গুড্ডু নামে স্থানীয় এক সমাজবিরোধীর নামও। অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত ওই দুষ্কৃতী এলাকায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবসা চালায়। পুলিশ তাকেও খুঁজছে। |