পিকনিকেও ক্যাটারার, পাল্টাচ্ছে মেনু
‘মেনু’ দিয়ে যায় চেনা! মেনুতে চিকেন ক্রাঞ্চি কিংবা ক্রিসপি চিকেন? বুঝতে হবে পানীয়ের ঢালাও বন্দোবস্ত রয়েছে। আর যদি খিচুড়ি, বেগুনভাজা, পায়েসের কথা ওঠে? পানীয়সক্তদের সংখ্যা তবে কম। কিন্তু পাতে নয়, মাঠে যদি বসে যায় আস্ত একটা ফুচকার স্টল? অতএব সেই পিকনিকে বাচ্চা ও মহিলাদের পোয়াবারো। কোথাও আমিষ পদগুলি বাদ দিলে সরস্বতী পুজোর দিনের স্কুল বা ক্লাবের মেনুই যেন উঠে আসে পিকনিকের মাঠে। কোথাও কর্পোরেট লাঞ্চের মতো প্যাকেটে দেওয়া হয় বিরিয়ানি, মাটন কষা।

চড়ুইভাতি থেকে পিকনিক
শুধু নাম নয়, সময়ের সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছুই। পিকনিকের মেনু থেকে শুরু করে খাওয়ার আয়োজন সবেতেই এখন শহুরে ছোঁয়া। আধপোড়া, আধসেদ্ধ মাংসের ঝোল কিংবা তলা ধরে যাওয়া ভাত দিয়ে যে পিকনিকের কথা বলতেই ছোটবেলার চড়ুইভাতির কথা মনে পড়ে যায়, তা আর এখন ভাবতেই পারে না নবদ্বীপ থেকে তেহট্ট, নানা মফস্সল। এখানে অধিকাংশ পিকনিকে রান্নার দায়িত্বে ছোট বড় নানা ধরনের ক্যাটারার। সীমান্তের করিমপুর ও ডোমকলেও কলাপাতা, শালপাতার জায়গা নিচ্ছে থার্মোকলের থালা। আগে গ্লাসে দই দেওয়া হত। এখন শীতেও কোথাও আইসক্রিমেই ‘কুল’। ডোমকলে মেনুতে যোগ হচ্ছে হোটেল কিংবা রেস্তোরাঁ থেকে আনানো চাউমিন, এগরোল, মোগলাই কিংবা চিলি চিকেন।
মেনুর আমি মেনুর তুমি
নবদ্বীপের এক ক্যাটারার শান্তনু ভৌমিক চলতি মরসুমে নয় নয় করে পঞ্চাশটা পিকনিকে খাবার পাঠিয়েছেন। তার মধ্যে সম্পন্ন ব্যবসায়ীরা যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছে কলেজ পড়ুয়াদের দলও। তিনি জানাচ্ছেন, বিভিন্ন দলের পিকনিকের সামর্থ্য অনুযায়ী বদলে যায় মেনুও। যেমন এ বারে সবথেকে বেশি চলেছে জয়শ্রী চালের সাদা ভাত, মুগডাল, বেগুনি, আলু-বিট-গাজর-ক্যাপসিকাম প্রভৃতির সঙ্গে ছোট পনিরের টুকরো দিয়ে একটা মিক্সড ভেজিটেবল। সেই সঙ্গে চিকেন কষা, টমেটো-খেজুর-আমসত্ত্ব দিয়ে চাটনি ও পাঁপড়ভাজা। সকালের জলখাবার হিসাবে লুচি বা কড়াইশুঁটির কচুরি, কাশ্মীরি আলুর দম ও নলেনগুড়ের বড় রসগোল্লা কিংবা সন্দেশ। সাধারণ ভাবে এই পদের মাথাপিছু দর ১৪৫ টাকা। তবে চিকেনের জায়গায় মাটন হলে আরও পঞ্চাশ টাকা বেশি। শান্তনুবাবু জানিয়েছেন, ‘‘সম্পন্ন ব্যবসায়ী বা পদস্থ চাকুরিজীবীরা যদি পিকনিক করেন, তাহলে কিন্তু মেনুটা একেবারে বদলে যায়। সেক্ষেত্রে পিকনিকের প্রথম পাতে একটা মাছের ফ্রাই থাকছে। সঙ্গে ফ্রায়েড রাইস এবং চিকেন কিংবা মাটনের একাধিক পদ। এসব পিকনিকে মদ্যপানের ঢালাও ব্যবস্থা থাকে বলে যোগ হয় আমিষ জলখাবার। চিকেন ক্রাঞ্চি অথবা ক্রিসপি চিকেন। দরটা ২২৫ টাকা থেকে ২৭৫ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে।”

চিনি নয়, চিলি কম
চা কিংবা কফিতে চিনি কম-বেশি নিয়ে অন্তত পিকনিকের দিনে খুব একটা মাথা ঘামান না কেউই। একটা দিনের জন্য আস্ত রসগোল্লা খেতে বাদ সাধেন না কেউই! কিন্তু ঝালের ক্ষেত্রে কড়া নজর রাখেন ক্যাটারার থেকে শুরু করে পিকনিকের আয়োজক সকলেই। এক বিশিষ্ট ক্যাটারার যেমন বলছেন, ‘‘যে সব পিকনিকের দলে বাচ্চা বেশি থাকে, সেক্ষেত্রে মাংসটাকে আমরা দু’টো ভাগ করে নিই। বাচ্চাদের জন্য কম ঝাল দেওয়া হয়। বড়দের মাংসটা তাদের চাহিদা মতো। সেক্ষেত্রে দুপুরের খাওয়াটা বাচ্চাদের আগে খাইয়ে দেওয়া হয়।” একই ব্যবস্থা অন্য সব পদের ক্ষেত্রেও। বড়রা যেখানে ঝাল পকোড়া খাচ্ছেন, বাচ্চাদের জন্য তখন জয়নগরের মোয়া। কিংবা একেবারেই কম ঝাল দেওয়া পকোড়া।

খিচুড়ি আজও আধুনিক
পিকনিকের বাজারে নিরামিষ কিংবা খিচুড়ির আবেদন কিন্তু চিরকালীন। সঙ্গে বেগুনভাজা কিংবা বেগুনি। বাঁধাকপি, পাঁপড়, নতুন গুড়ের পায়েস এবং নলেনগুড়ের সন্দেশ বা রসগোল্লা। এক্ষেত্রে খিচুড়িটা হয় গোবিন্দভোগ চালের। তাতে দেওয়া হয় কাজুবাদামও। মাত্র ৭০ টাকায় এই মেনুতে পিকনিক করিয়েছেন নিতাই বসাক। আর এক ক্যাটারিং কর্তা মনোজ সাহা বলছেন, “ডাল, ভাত, আলু চিপস, বাঁধাকপির তরকারি, মুরগির মাংস, চাটনি ও পাঁপড় এই মেনুতে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যেও ভাল ভাবে একটা পিকনিক হয়ে যাচ্ছে।” সাধারণভাবে পড়ুয়া ও গৃহশিক্ষকদের কাছে যারা পড়তে যায় সেই রকম দলের পিকনিকে এই মেনুরই কদর বেশি।” কিন্তু নিতাইবাবু বলেন, “পিকনিকে বিরিয়ানিরও চাহিদা রয়েছে। ফিস ফ্রাই, স্যালাড-সস, মাটন বিরিয়ানি ও সঙ্গে চিকেন চাঁপ ২৩০ টাকায় দেওয়া হয়। যাঁরা বিরিয়ানি পছন্দ করেন না তাদের জন্য সাদা ভাত ও ইলিশ মাছের ব্যবস্থা থাকে।

আপ রুচি খানা
নবদ্বীপের পিকনিকে যেমন ক্যটারার, করিমপুরে রাঁধুনি, ডোমকলে কিন্তু সেসবের বালাই নেই। তবে সীমান্তের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে মেনুর পরিবর্তনটা অবশ্য চোখে পড়ছে। সরাসরি দোকান থেকেই কিনে নিয়ে আসা হচ্ছে বিরিয়ানি, ফ্রায়েড রাইস বা চাউমিন। কোথাও এগরোল কিংবা মোগলাই স্ন্যাক্স। কোথাও আবার প্যাকেটবন্দী হয়ে চলে আসছে কেক, ডিমসিদ্ধ, মিষ্টি ও ভুজিয়া। দুপুরের পাতে থাকছে দোকানের চিলি চিকেনও। সঙ্গে থাকছে নিজেদের রান্না করা চিকেন কিংবা মাটনও। এমনই এক পিকনিক থেকে ফিরে বসন্ত দাস বললেন, “নিজেদের রান্না করা মাংস যতটা ভাল হয়েছিল, দোকানের চিলি চিকেন কিন্তু খোলা মাঠে ততটা মুখে রোচেনি। পিকনিকে নিজেদের রান্না করার মজাটা চলে গেলে কী আর থাকে?” তাই কোনও কোনও পিকনিকে মাছের দেখাও মেলে। খাসা ঝোল রান্না করেন পিকনিকের দলেরই কেউ।

নতুন পুরনোর মেলবন্ধন
পুরনো দিনের এই স্বাদটাই থেকে যাচ্ছে মেনুতেও। যেমন সকালের জলখাবারে কোথাও থাকছে মুড়ি কিংবা গরম ভাজা বেগুনি। তারপর দুপুরে শালপাতার এক কোণে নুন ও লেবু। তারপর প্রথম পাতে ফ্রায়েড রাইসের সঙ্গে মাছের ঝোল। থাকছে বাঁশকাঠি চালের সাদা ভাত, আলু ফুলকপির তরকারি, ঘন মুগ ডাল, চিকেন বা মাটন, চাটনি, পাঁপড়ভাজা, নলেনগুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা, মিষ্টি দই। সম্প্রতি জলঙ্গির চরে গৃহশিক্ষকের সঙ্গে পিকনিকে গিয়েছিল ডোমকলের প্রায় জনা চল্লিশেক স্কুল পড়ুয়া। গৃহশিক্ষক মনিরুল হক বলছেন, “পিকনিক যখন নিজেরাই করব তখন আবার রাধুঁনির কী দরকার? একটা দিনের জন্য হইহই করে নিজেরাই যে যেমন পারি রান্না করি। তাতেই তো পিকনিকের আসল মজা। ছাত্রছাত্রীরাও এদিনের জন্য মুখিয়ে থাকে। কে কত ভাল রান্না করতে পারে চলে সেই প্রতিযোগিতাও।”

পাল্টে যায় রান্নার রকমও
বিয়েবাড়ি আর পিকনিকের রান্না কিন্তু মোটেই একরকম হয় না। সমস্ত পদেই বেশ কিছু পার্থক্য থাকে। করিমপুরের রাজকুমার সাহা যেমন ২৪ বছর ধরে রান্না করছেন। অন্য অনুষ্ঠানবাড়ির পাশাপাশি এখন তিনি পিকনিকেও রান্না করছেন। রাজকুমারবাবু বলেন, “বিয়ে বাড়িতে লোকসংখ্যা অনেক বেশি, পদও বেশি। পিকনিকে পদ কম। কিন্তু একটু ঝাল বেশি থাকে। মাংস রান্না সব কিছুই একটু অন্যরকম হয়। ভাজাভুজির চাহিদা পিকনিকে অনেক বেশি থাকে। থাকে কষা মাংসের চাহিদাও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.