শেষ ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ ধোনিদের পকেটে। এর চেয়ে ভাল খবর আর কী হতে পারে? যে ইংল্যান্ডের কাছে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজে হেরেছি আমরা, সেই কুকের দলকেই রীতিমতো শাসন করে এক দিনের সিরিজে হারানোটা অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিবাচক দিক। দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে নিশ্চয়ই একটা বড় খবর। কিন্তু পরের সিরিজগুলোতেও আমরা এ ভাবেই জিততে পারব কি না, নিজেদের জায়গাটা ধরে রাখতে পারব কি না, আমার কাছে কিন্তু সেটাই আসল। |
সিরিজ জয়ের দৌড় রায়না-জাডেজার। |
ভারতীয় ক্রিকেট এখন যে-হেতু এক নতুন প্রজন্মের হাতে, সে কারণেও এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আমাদের যদি একটা তৈরি দল হাতে থাকত, তা হলে নাহয় সিরিজে হার-জিতটাই একমাত্র চিন্তার বিষয় হত। কিন্তু অবস্থাটা তো সে রকম নয়। এখানে আমাদের দলটা প্রতি সিরিজে কতটা তৈরি হচ্ছে, সেটাই আসল ব্যাপার। এই যে ধোনি বুধবার মোহালিতে রোহিত শর্মাকে ওপেন করতে পাঠাল, এই রকম চেষ্টাই তো প্রশংসনীয়। রোহিতকে যদি বরাবর সাত নম্বরেই খেলানো হয়, তা হলে তো ও কোনও দিনই রান পাবে না। এত পরে নেমে নিয়মিত বড় রান পাওয়া যায় নাকি? রোহিতকে ওপেন করতে পাঠিয়ে ধোনি নিজে দেখে নিল এবং সবাইকে দেখিয়েও দিল, সুযোগ পেলে রোহিত সেটা কাজে লাগাতে পারে। ফিট হয়ে ওঠা মনোজ তিওয়ারিকেও এ ভাবেই ব্যবহার করা উচিত ধোনির।
তা ছাড়া ওপেনিং স্লট এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে একটা বড় সমস্যার জায়গা। গম্ভীর ‘ওভার অ্যাগ্রেসিভ’ হয়ে ওঠার অভ্যেস কাটিয়ে না ওঠা পর্যন্ত ওর রানে ফেরা মুশকিল। গম্ভীরকে রানে ফিরতে গেলে উইকেটে টিকে থাকতে হবে। ও শুরু থেকেই বোলারদের মাথায় চেপে বসতে গিয়ে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনছে বারবার। |
|
|
আউট পিটারসেন প্যাভিলিয়নমুখী। |
রায়নার উচ্ছ্বাস। |
|
এ রকম একটা সময় যদি একজন ব্যাক-আপ ওপেনার দলে মজুত করে রাখা যায়, তা হলে ক্ষতি কী? এখন এ ভাবেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলিয়ে দেখে নিতে হবে ধোনিকে। দলটা তৈরির সময় এটা। সে দিক থেকে দেখতে গেলে সিরিজটা আমাদের কাছে বেশ ফলদায়ক হয়েছে।
সবচেয়ে ইতিবাচক ব্যাপার হল, পেস বোলারদের একটা ইয়ং ব্রিগেড তৈরি হয়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতে অবশ্যই কাজে লাগবে আমাদের। ভুবি, সামি, দিন্দাদের নিয়ে আশার আলো দেখা যেতেই পারে। দেখছেন না, দিন্দার মতো পেসারও প্রথম দলের বাইরে বসে রয়েছে! এর চেয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা আর কী হতে পারে? রবীন্দ্র জাডেজার মধ্যে ক্রমশ একজন ভাল অলরাউন্ডার খুঁজে পাচ্ছি আমরা। ওপেনিং জুটি আর ৫/৬ নম্বর স্লট বাদ দিয়ে বাকি ব্যাটিং অর্ডার ক্রমশ স্থায়িত্বের দিকে এগোচ্ছে। |
ম্যাচ শুরুর আগে এই ছিল আমার আঙুলের অবস্থা। এখন অবশ্য কিছুটা ভাল। কোচি ছাড়া আর কোথাও উপমহাদেশের মতো পরিবেশ পাইনি। তাই এই সিরিজ জয়ের গুরুত্বটাই আলাদা। তা ছাড়া রোহিতের জন্যও আমার খুব ভাল লাগছে। রোহিত হল ঈশ্বরদত্ত প্রতিভা। এই ইনিংসটা ওর খুব প্রয়োজন ছিল। এতে ওর আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
(আঙুলের ছবি ধোনি নিজেই টুইটারে পোস্ট করেছেন) |
|
এগুলো তো ইতিবাচক ইঙ্গিতই। তবে অশ্বিনের নিজেকে ঠিকঠাক জায়গায় নিয়ে যেতেই হবে। ও আসলে অফস্পিনার, না মিস্ট্রি বোলার, সেটা আগে নিজে ঠিক করুক। এ দিনই মোহালিতে এক ওভারে ওকে দুটো অফস্পিন, তিনটে লেগস্পিন, একটা ক্যারম বল করতে দেখলাম। বলে বৈচিত্র আনতে গিয়ে ও না নিজেকে নষ্টই করে ফেলে।
তা হলেও সব মিলিয়ে এই সিরিজের পর মনে হচ্ছে ভারতীয় দল ঠিক দিকেই এগোচ্ছে। এ ভাবেই ২২-২৫ জনের একটা ‘পুল’ ক্রমশ তৈরি হয়ে উঠবে, যেখানে প্রতিটি জায়গায় দু’-তিন জন করে ক্রিকেটার থাকবে। ফুটবলের ভাষায় শক্তিশালী রিজার্ভ বেঞ্চ। আগের প্রজন্মের ব্যাটন নিয়ে যে দৌড় শুরু করেছে বর্তমান প্রজন্ম, ভারতীয় ক্রিকেটের সেই মশাল-দৌড়ের পথ ঠিক দিকেই যাচ্ছে।
|
মোহালির স্কোর |
ইংল্যান্ড |
কুক এলবিডব্লিউ অশ্বিন ৭৬
বেল ক ভুবনেশ্বর বো ইশান্ত ১০
পিটারসেন বো ইশান্ত ৭৬
মর্গ্যান ক যুবরাজ বো অশ্বিন ৩
সমিত ক ও বো জাডেজা ১
রুট নঃআঃ ৫৭
বাটলার ক যুবরাজ বো জাডেজা ১৪
ব্রেসনান ক যুবরাজ বো জাডেজা ৬
ট্রেডওয়েল নঃআঃ ৬
অতিরিক্ত ১৪
মোট ৫০ ওভারে ২৫৭-৭।
পতন: ৩৭, ১৩২, ১৩৮, ১৪২, ২২০, ২৪১, ২৪১
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-২-৩০-০, সামি ৮-০-৫৮-০, ইশান্ত ১০-২-৪৭-২
অশ্বিন ১০-০-৬৩-২, জাডেজা ১০-২-৩৯-৩, রায়না ২-০-১০-০
|
ভারত |
গম্ভীর ক বাটলার বো ব্রেসনান ১০
রোহিত এলবিডব্লিউ ফিন ৮৩
কোহলি ক ও বো ট্রেডওয়েল ২৬
যুবরাজ এলবিডব্লিউ ট্রেডওয়েল ৩
রায়না ন: আ: ৮৯
ধোনি ক মর্গ্যান বো ডার্নবাখ ১৯
জাডেজা ন: আ: ২১
অতিরিক্ত ৭
মোট ৪৭.৩ ওভারে ২৫৮-৫।
পতন: ২০, ৭২, ৯০, ১৫৮, ২১৩
বোলিং: ফিন ১০-১-৩৯-১, ব্রেসনান ১০-১-৫৯-১, ডার্নবাখ ৯.৩-০-৫৯-১
সমিত ৩-০-২১-০, ট্রেডওয়েল ১০-০-৫৪-২, রুট ৫-০-২৪-০ |
|
|